ব্রেকিং নিউজ

6/recent/ticker-posts

Header Ads Widget

পানিতে ভেজালে আঙুলের ত্বক কুঁচকে যায় কেন

 পানিতে ভেজালে আঙুলের ত্বক কুঁচকে যায় কেন

পানিতে ভেজালে আঙুলের ত্বক কুঁচকে যায় কেন

কিছু প্রশ্ন আছে, যেগুলো একদম সোজা, কিন্তু উত্তর দিতে গিয়ে বড় বড় বিশেষজ্ঞরাও হিমশিম খেয়ে যান। অথচ এই প্রশ্ন মাথায় এলে, ভাবলে হয়তো আহামরি কঠিন মনে হয় না। তেমনই এক প্রশ্ন করা হয়েছিল যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের বিংহামটন বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োমেডিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার গাই জার্মানকে। দ্য কনভার্সেশন-এর ‘কিউরিয়াস কিডস’ সিরিজের এক পাঠক প্রশ্নটা করেছিলেন। প্রশ্নটা হলো, পানিতে হাত ভিজিয়ে রাখলে কুঁচকে যায় কেন?

এই প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে গাই জার্মান তেমন কোনো ব্যাখ্যা খুঁজে পেলেন না। বাধ্য হয়ে শুরু করলেন গবেষণা। সেই গবেষণার গল্প নিয়েই এই লেখা।

গবেষণার শুরুতে গাই জার্মান এবং তাঁর সহকর্মী র‍্যাচেল ল্যাটিন তিনজন স্বেচ্ছাসেবক নিলেন। প্রথমে তাদেরকে ৩০ মিনিট পানিতে হাত ভিজিয়ে রাখতে বললেন। তারপর ছবি তুলে রাখলেন সেই অবস্থার। ঠিক ২৪ ঘণ্টা পর আবার স্বেচ্ছাসেবীদের হাত ভেজাতে বললেন। এবার আগের ছবির সঙ্গে বর্তমানের ছবি বিশ্লেষণ করে দেখলেন, হাতের চামড়া কুঁচকানো রেখাগুলো প্রায় একই।

প্রশ্ন হলো, কেন চামড়া কুঁচকে যায়? ত্বকের লোমকূপ ও ঘামগ্রন্থির চারপাশ দিয়ে পানি ঢুকে পড়লে তা ত্বকের বাইরের স্তরের সোডিয়াম আয়নের ঘনত্ব কমিয়ে দেয়। পরে স্নায়ুর মাধ্যমে মস্তিষ্কে এই পরিবর্তনের সংকেত পৌঁছালে স্বয়ংক্রিয়ভাবে রক্তনালিগুলো সংকুচিত হয়। ফলে মসৃণ আঙুলের ত্বক কুঁচকে যায়।

এ প্রসঙ্গে গাই জার্মান বলেন, ‘এই কুঁচকে যাওয়া কিন্তু নিছক পানিতে হাত ভিজিয়ে রাখার র‍্যান্ডম বা সাধারণ কোনো প্রভাব নয়। এই গঠনগত পরিবর্তন আমাদের ভেজা ত্বকে একধরনের বাড়তি সুবিধা দেয়। ত্বক এই সাময়িক কুঁচকানো ফলে আমরা কোনো জিনিস ভালোভাবে ধরতে পারি। অর্থাৎ আমরা যে সহজেই কিছু ধরতে পারি, তা মূলত এই খাঁজকাটা রেখার জন্য।’

তাহলে প্রশ্ন ওঠে, এই বলিরেখা আমরা সবসময় ধরে রাখি না কেন? মানে সব সময় হাত ভিজিয়ে রেখে চামড়া কুঁচকে রাখি না কেন? এ প্রশ্নের উত্তর গাই জার্মানও দিতে পারেননি। তবে তাঁদের একটা ধারণা আছে। সেটা হলো, ত্বকের এই সাময়িক গঠন হয়তো আমাদের আঙুলের সংবেদনশীলতা কমিয়ে দেয়।

তবে আগে বিজ্ঞানীরা মনে করতেন, ফোলা ত্বকের কারণে ভেজা আঙুল কুঁচকে যায়। কিন্তু ২০১৬ সালের এক গবেষণায় দেখা যায়, ত্বকের ২০ শতাংশের বেশি ফুলে না উঠলে বলিরেখা পড়ে না। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, আগের গবেষণায় দেখা যায়, যাদের স্নায়ু ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তাদের হাত ভেজালেও ত্বক কুঁচকে যায় না। ফলে এই না কুঁচকানোর কারণ অনুসন্ধানে শুরু হয় আরও গবেষণা।

গাই জার্মান এ ব্যাপারে বলেন, ‘আমাদের কৌতূহল মেটানোর পাশাপাশি এ ধরনের পরীক্ষা ফরেনসিক তদন্তেও সাহায্য করতে পারে। যেমন আঙুলের ত্বকের এই বিকৃতির ব্যাপারে ধারণা থাকলে প্রাকৃতিক দুর্যোগের পর দীর্ঘ সময় পানিতে ডুবে থাকা মৃতদেহ শনাক্তে সাহায্য করতে পারে।’

লেখক: শিক্ষার্থী, ঢাকা কলেজ

সূত্র: সায়েন্স অ্যালার্ট

Post a Comment

0 Comments