সময়ের দাবি

Download Free Templates

Ads 728x90

Ads 728x90

recenlt Apps

December 19, 2024

বাড়িওয়ালার মেয়েকে ছাদে বিরক্ত করার অভিযোগে আমাকে বাসা ছেড়ে দিতে বলা হয়েছে। অথচ আমি জানতামই না যে বাড়িওয়ালার মেয়ে আছে বলে!


দরজায় আঁটা দিয়ে লাগিয়ে রাখা হলদে রঙের কাগজের টুকরোটি হাতে নিয়ে কক্ষে প্রবেশ করলাম এবার। এখানে উঠেছি সবেমাত্র দেড় মাস চলছে। তিন মাসের ভাড়া অগ্রীম দিয়ে রেখেছি। দিন-রাত মিলে যে সাত আট ঘন্টার জন্য বাসায় থাকি তার প্রায় পুরোটা সময় কক্ষেই কে*টে যায়। বেলকনিতেও বসা হয় কিছুটা সময়। ছাদে তো যাই-ইনি কোনদিন। জানিও না বাড়িওয়ালার সন্তানাদি কতজন। অথচ উনারই মেয়েকে বিরক্ত করার অভিযোগে বাসা ছাড়ার নোটিশ আসলো! বিস্ময়কর ব্যাপার বটে।


ঘড়ির কাটা তখন রাত দশটা। বাড়িওয়ালা চারতলায় থাকেন। আমি তৃতীয় তলায়। ভাবলাম সরাসরি কথা বলে বিষয়টি পরিষ্কার করে আসা দরকার। দরজার সামনে দাড়িয়ে কলিংবেল চাপলাম। কোন সাড়াশব্দ নেই। চৌদ্দ-পনেরো সেকেন্ড বিরতি দিয়ে আবারো চাপলাম। ভেতর থেকে শব্দ আসছে। দরজা খুলছে কেউ। পাঞ্জাবির বোতামগুলো লাগানো আছে কিনা দেখে নিলাম একনজর। হ্যা সবকিছু ঠিকই আছে। মাঝবয়সী একজন মহিলা দরজা খুলে দিলেন। আমি মুখে কিছুটা হাসি নিয়ে সহীহ্ শুদ্ধভাবে সালাম দিলাম,


- আসসালামু আলাইকুম।


সালাম শুনে উনি চোখগুলো বড় বড় করে প্রথমে তাকালেন আমার দিকে। এরপর পেছনের দিকে কি যেনো দেখলেন। পরে আবার আমার মাথা থেকে পা পর্যন্ত দেখলেন। আপাদমস্তক দর্শন বলতে যা বুঝায়। এরপর বললেন,

- নমস্কার। কাকে চাই?


বললাম,

- এটা তো সাদিক সাহেবের বাসা তাইনা!

- হ্যা, এটা সাদিক সাহেবের বাসা।

- আমি তৃতীয় তলায় ভাড়া থাকি। উনার সাথে জরুরী কিছু কথা ছিলো। আছেন ভেতরে?

- আপনি একটু দাঁড়ান।

- জ্বী আচ্ছা।


মহিলা দরজা বন্ধ করে চলে গেলেন। আমি অপেক্ষা করতে লাগলাম। ডানে বায়ে অনুসন্ধানী পর্যবেক্ষণে আবারো নিশ্চিত হয়ে নিলাম আমি চতুর্থ তলাতেই আছি যেখানে বাড়িওয়ালা থাকেন। মিনিট দুয়েক পর এসে দরজা খুলে ভেতরে যাবার অনুমতি দিলেন তিনি। আমি প্রথমে নিজের পায়ের দিকে তাকালাম। এরপর উনার পায়ের দিকে। উনি খালি পায়ে আছেন। জুতো নিয়েই ভেতরে প্রবেশ করতে যাবো অমনি তিনি আটকে দিলেন। গলদটা বুঝতে পেরে জুতোজোড়া খুলে ভেতরে প্রবেশ করলাম এবার। উনি দরজা লাগিয়ে আমার দিকে এগিয়ে আসলেন। বললেন,


- সাহেব বলেছেন আপনাকে এখানে অপেক্ষা করতে। উনি খেয়ে আসছেন।


আমি সোফায় বসতে বসতে বললাম,

- আপনি কি বলেছেন আমার কথা?

- জ্বী বলেছি।

- আচ্ছা ঠিক আছে।


তখন খুব কম মানুষের বাসা বাড়িতেই টেলিভিশনের দেখা মেলে। যেমন আমাদের গ্রামের কথাই বলি। গোটা গ্রামে একটিমাত্র টেলিভিশন। তাও আবার চেয়ারম্যান বাড়িতে। সপ্তাহের শুক্রবারে যখন ছায়াছবি হয় তখন সেখানে গাঁয়ের মানুষের সমাগম ঘটে। টেলিভিশন বারান্দায় এনে টেবিলের উপর রাখা হয়। গোটা উঠোন মানুষে ভরে যায়। দাঁড়িয়ে, বসে যে যেভাবে পারে ছায়াছবি দেখে। কেউ প্রাকৃতিক প্রয়োজন মেটাতে একবার জায়গা ছেড়ে উঠে গেলে সে আর ঐদিন ছায়াছবির বাকি অংশ দেখার সুযোগ পায়না।


আমি নিজের চশমার কাঁচ গুলো ভালো করে একবার পরিষ্কার করে নিলাম। ততক্ষণে সাদিক সাহেব আসলেন। লুঙ্গি পরে আছেন উনি। গায়ে পাতলা গেঞ্জি। কাঁধে গামছা। উনাকে দেখে আমাদের গাঁয়ের জমশেদ চাচার কথা মনে পড়ে গেলো। মনে হচ্ছিল সাদিক সাহেব যেন জমশেদ চাচার জিরক্স কপি। আমি সোফা ছেড়ে উঠে দাঁড়াতে দাঁড়াতে উনাকে সম্বোধন করে বললাম,


- আসসালামু আলাইকুম।

- ওয়ালাইকুমুসসালাম। বসুন বসুন।


আমি দাঁড়িয়েই রইলাম। উনি আমার বিপরীত দিকের সোফায় বসলেন। এবার আমিও বসলাম। চোখদুটো বন্ধ করে টুথপিক দিয়ে দাঁতে আঁটকে যাওয়া কিছু একটা বের করে আনার ব্যর্থ চেষ্টা করলেন। এরপর বিরক্ত হয়ে সেটা সামনের টেবিলের উপর রেখে দিয়ে বললেন,


- তা কি মনে করে আমার বাসায় হু? দেড় মাস হয়ে গেলো আপনার। আমি বাসা করেছি আজ প্রায় দশ বছর। আপনার মতো ভাড়াটে আমি আর একজনও দেখিনি।


কথাগুলো বলার সময় উনি হাসছিলেন। উনার মেয়েকে বিরক্ত করার পরে এভাবে হেসে কথা বলাটা আমার মনে কৌতুহলের সৃষ্টি করলো। যদিও আমি বিরক্ত করিনি। ঐ নোটিশের নিরিখে বললাম আরকি। তাহলে কি উনি এসবের কিছুই জানেন না? প্রশ্ন জাগলো মনে। বললাম,


- আসলে আমিও এতো ভালো বাসা আর পাইনি। প্রায় পাঁচ বছর যাবৎ এই শহরে আছি। সময় হয়না আপনার সাথে কথা বলার। তাই আসা।


- ভালো করেছেন। খেয়েছেন রাতে?

- জ্বী খেয়েছি।

- তা, কি করছেন এখন?

- চাকরীর জন্য চেষ্টা করছি।

- বাড়িতে বাবা-মা আছেন?

- জ্বী আছেন।

- তা কি খাবেন বলুন।

- চা খেতে পারি। অবশ্য, যদি লেবুর চা হয়।

- আপনি লেবুর চা পছন্দ করেন?

- জ্বী। এটা ভালো লাগে আমার কাছে।

- আমিও তো লেবুর চা পছন্দ করি। 


এই বলে উনি সোফা ছেড়ে উঠে দাঁড়ালেন। বললেন,

- আপনি বসুন। আমি আসছি।


আমি বসে থাকলাম। ভাবতে লাগলাম ঐ কাজটা তাহলে কে করলো। কে আমার দরজায় ঐ কাগজ লাগিয়েছিলো। কেউ ফাইজলামো করলো নাতো আবার।


ঘরটা বেশ গোছালো। দেয়ালে অনিন্দ্য কিছু পেইন্টিং শোভা পাচ্ছে। মনে হলো সৌন্দর্য বর্ধনের জন্য কিনে এনে লাগানো হয়েছে। আমি চারদিক দেখছিলাম এমন সময় সাদিক সাহেব চলে আসলেন। সোফায় বসতে বসতে বলতে লাগলেন,


- আমার স্ত্রী অসুস্থ। ঘুমিয়ে আছে। মেয়েটা সব কাজ একা সামলাতে পারেনা। অ*ভ্যেস নেই। এজন্য মহল্লার একজন মহিলা আছেন তিনদিন ধরে। ওকে সহায়তা করে। একটু বসুন। চা আসছে।


বললাম,

- ঐ হিন্দু মহিলাটি?

- হ্যা। বেচারির সন্তানাদি নেই। তার স্বামীও অসুস্থ। যখন যেখানে কাজ পায় করে। এমনিতেও সবসময় যে যেভাবে পারে সহায়তা করে। তবে সে খুব আ*ত্মমর্যাদা সম্পন্ন মহিলা। কেউ সাহায্য করলেই নিতে চায়না। কাজ করে খেতে পছন্দ করে। বলে, কাজে লজ্জা নেই।


বললাম,

- কিছু মনে করবেননা। আপনার পরিবার সম্বন্ধে আমার তেমন ধারণা নেই। সুযোগই হয়নি আসলে আপনার সাথে বসার। এসব নিয়ে কথা বলার।


আমার কথায় উনি মুচকি হাসলেন। বললেন,

- যেমনটি বলছিলাম, আমার স্ত্রী অসুস্থ। তিন মেয়ে ও এক ছেলে আছে। ছেলেটা সবার ছোট। ও গ্রামের বাড়িতে আছে গত চার মাস ধরে। ছোট ও মেজো মেয়েটাও সেখানে। বড় মেয়েটা বাসায় আছে। টেলিফোনে জানিয়েছি ওদের। চলে আসবে শীঘ্রই।


বললাম,

- আপনাদের গ্রামের বাড়ি কোথায়?

- বৃহত্তর ময়মনসিংহের নেত্রকোনা জেলায়।


আমার জেলায় উনার বাড়ি আর এটা আমি আজকে জানলাম। উনি আমাকে কিছু জিজ্ঞেস করবেন তখনি ভেতরের কক্ষ থেকে সুরেলা কণ্ঠে ভেসে আসলো, 'বাবা, চা রেখে গেলাম।' এবার সাদিক সাহেব উঠে গিয়ে চা এনে টেবিলে রাখলেন। আমাকে নিতে বললেন। আমি টাটকা গরম চা খেতে পছন্দ করি। অনেকেই কিছুটা ঠান্ডা করে তারপর খান। প্রথম চু*মুকেই মনটা ভরে গেলো। কতো জায়গায় কতো রকমের চা খেয়েছি হিসেব নেই। এমন সুস্বাদু চা ইতোপূর্বে কখনো খাইনি আমি। সাদিক সাহেব কয়েক চুমুক নিয়ে জিজ্ঞেস করলেন,


- চা কেমন হয়েছে? 

- দারুণ! এর আগে লেবুর এতো সুস্বাদু চা আমি আর খাইনি।


আমার কথা শুনে তিনি হাসলেন। তার চোখেমুখে গৌরবের ছাপ স্পষ্ট। তারপর বললেন,

- আমার মেয়ে চা বানানো শিখেছে তার দাদির কাছ থেকে। আমার মায়ের হাত খুব ভালো ছিলো। শুধু চা নয়, উনি সবকিছু রান্নাতেই বেশ পারদর্শী ছিলেন। তা আপনাকে কে রান্না করে দেয়?


- আমি নিজেই রান্না করি। যদিও বেশির ভাগ সময় বাইরেই খাওয়াদাওয়া করা হয়।

- আগামী শুক্রবার জুমা’র নামাজ পড়ে চলে আসবেন। দাওয়াত আপনার।

- ইনশাআল্লাহ্।


ততক্ষণে চা ফুরিয়ে এসেছে আমার। বললাম,

- আমাকে উঠতে হবে। শুক্রবারে আবার কথা হবে আপনার সাথে। আর হ্যা, আপনি আমাকে তুমি করেও বলতে পারেন। তাতেই আমি অধিক সাচ্ছন্দ্যবোধ করবো।


উনি আবারো হাসলেন আমার কথায়। আমি চলে আসবো তিনি আমার পিছুপিছু দরজা পর্যন্ত আসলেন। সিঁড়ি বেয়ে নামতে যাবো তখন বলে উঠলেন,


- তোমার নামটা যেনো কি?


আমি একগাল হেসে বললাম,

- রিয়াদ আহম্মদ ভূঁঞা। আপনি রিয়াদ বলেই ডাকবেন।

- আচ্ছা ঠিক আছে। গুড নাইট।

- গুড নাইট।


শহরে থাকার পেছনে বড় কারণ হলো সাহিত্য চর্চার সুবিধা। ইতোমধ্যে চারটি বই বেরিয়েছে আমার। পঞ্চম বই বের করার তোরজোর চলছে। শহরের বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কবি সাহিত্যকদের পরামর্শ নিতে তাঁদের কাছে দৌড়ঝাঁপ তো আছেই। সাথে অনেক পরিচিতজন, শুভাকাঙ্ক্ষী আর বন্ধুবান্ধব। তাদের কাছেই সারাদিন পড়ে থাকি। কাক ডাকা ভোরে বেরুই ফিরি রাত আটটা-নয়টায়। কখনো দশটা-এগারোটাও পার হয়ে যায়।


বিছানায় শুয়ে ভাবছি, এটা আবার সাদিক সাহেবের বড় মেয়ের কাজ নয়তো। যদি হয়ও, তো সে এটা কেন করবে? নিজেকেই নিজে প্রশ্ন করলাম।


বাড়িতে টেলিফোনে কথা হয় মাঝেমধ্যে। চিঠিও পাঠাই। নতুন ঠিকানায় আসার পর তা জানিয়ে এখনো চিঠি পাঠানো হয়নি। আমি আমার মায়ের কাছে চিঠি লিখি। মা'কে উদ্দেশ্য করে লিখি। যদিও তিনি পড়তে জানেন না। পড়ে শোনায় আমার ছোটবোন। তিনি নিজের ভাষায় যা বলেন তা আবার লিখেও পাঠায় সে। ঠিক করলাম কাল সময় করে একটা চিঠি লিখবো মায়ের কাছে।


রাতে ঐসব ভাবতে ভাবতে কখন যে চোখ দুটো লেগে গিয়েছিল টেরও পাইনি। পাশের মহল্লাতেই মসজিদ। ফজরে আশেপাশে সবার আগে এই মসজিদের মোয়াজ্জিন সাহেবই আজান দেন। তাঁর আজানেই ঘুম ভাঙে আমার। আজো এর ব্যতিক্রম হলোনা। সারাদিন বাসায় ফেরা হয়না বলে প্রতিদিন ভোরেই গোসল করে বেরিয়ে যাই। গোসল সেরে পাটের তৈরি ব্যাগটা কাঁধে ঝুলিয়ে বেরুতে যাব তখনি খেয়াল করলাম হলদে রঙের একটি ভাজ করা কাগজ মেঝেতে পড়ে আছে। দরজার নিচ দিয়ে বাইরে থেকে কেউ রেখে গেছে এটা। তবে এখন পড়ার সময় নেই। আজান হয়েছে অনেকক্ষণ হয়ে গেলো। যেভাবে ছিলো সেভাবেই তুলে ব্যাগে থাকা প্রকাশিতব্য বইয়ের পাণ্ডুলিপির ভাজে রেখে দিলাম সেটা। তড়িঘড়ি করে হনহন করে ছুটে চললাম মসজিদের দিকে।


নামাজ শেষে প্রতিদিন মসজিদের বারান্দায় কিছুক্ষণ বসি আমি। নিজের করা কৃতকর্মের হিসেব মেলানোর চেষ্টা করি। পারিনা। পাপ ছাড়া চোখে পড়েনা কিছু। এরপর নিজের লিখাগুলো দেখি। ভুলত্রুটি খুঁজি। ভাবি, যদি আল্লাহ্ পাক মেধাশক্তি কিছুটা হলেও বাড়িয়ে দেন। তাঁর কাছে এটা আমার সরল মনের কামনা। এবার ব্যাগ থেকে পাণ্ডুলিপিটা বের করলাম। এর ভেতরে হলদে রঙের ভাজ করা কাগজটি রেখেছিলাম যে মনে ছিলোনা। এমনটি আমার সাথে প্রায়সই ঘটে। কখনোসখনো অতি নিকট অতীতের কথাও ভুলে যাই যেখানে অনেক পুরনো অতীতের অতি ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র বিষয়ও পুঙ্খানুপুঙ্খ স্বরণে থেকে যায়, ভুলিনা। কাগজটি নজরে আসায় মনে পড়লো। পাণ্ডুলিপিটা রেখে ভাজ গুলো খুলে নিলাম। সেই চেনা হাতের লিখা। না, এটা মসজিদে বসে পড়বোনা। বাইরে যাই। বেরিয়ে এলাম। গলির রাস্তার একপাশে গিয়ে পড়তে লাগলাম। তাতে লিখা;


'বাবার মুখে শুনলাম আমার চায়ের বেশ প্রশংসা করেছেন। এজন্য ধন্যবাদ। যে কারণে এটি লিখা। এতদিন আমি ভোরের পাখি ছিলাম। বলতে, আমার আগে বিল্ডিংয়ে আর কেউ উঠতে পারতো না। আপনি আসার পর এটা বদলে গেছে। এখন আপনিই আগে উঠেন। সকালে বেরুন, ফেরেন রাতে। জানিনা কি করেন আপনি। জানতেও চাইনা। আমার কাছে আপনাকে কেমন যেনো মনে হচ্ছিলো। একবার ছাদেও পর্যন্ত আসেন না। আর আমাদের বাসাতে তো না-ই। তাই ভাবলাম আপনাকে একটু উপর নিচ দৌড়ঝাপ করানো যাক। কাল দরজায় যা লিখে রেখেছিলাম সেজন্য দুঃখিত। ক্ষমা করবেন। আমি চাইবো যেনো চিঠির জবাব আসে। রেখে দিবেন যেখান থেকে আপনি এটা পেলেন। আমি নিয়ে নিব।


ইতি

নামটা না হয় পরে কখনো জানবেন'


হাতের লিখাগুলো খুব সুন্দর। বেশ গোছালো। পুরো লিখাটি পড়ে মনে মনে কিছুক্ষণ হাসলাম। বিস্মিতও হলাম। তারপর ভাজ করে সেটা পকেটে রেখে পথ চলতে চলতে নিজেকেই নিজে বলে উঠলাম,


চলবে______________


হলুদ খামে প্রেমের চিঠি

মুসকান মনিকা

পর্ব ১ সূচনা পর্ব


(হলুদ খামে প্রেমের চিঠি) সকল পর্ব 

Open this link 

https://www.facebook.com/share/p/1KBbczAZcJ/

বিটের রসের উপকারিতা
November 25, 2024

 

বিটের রসের উপকারিতা (Benefits of Beetroot Juice)


Beetroot Juice

বিটরুট একটি স্বাস্থ্যকর সবজি যা অনেক মানুষ খেতে পছন্দ করে কারণ এটি আমাদের শরীরকে বিভিন্ন উপায়ে সাহায্য করে। বিটরুট একটি সবজি যা ভিটামিন এ, ভিটামিন কে, আয়রন, পটাসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ক্যালসিয়াম এবং তামার মতো প্রচুর গুরুত্বপূর্ণ ভিটামিন এবং খনিজ রয়েছে। বিভিন্ন ধরণের শারীরিক সমস্যায় মানুষ তাদের শরীরকে ভালো বোধ করতে সাহায্য করার জন্য দীর্ঘদিন ধরে বিটরুট ব্যবহার করে আসছে। 

এটি আমাদের ত্বককে আরও সুন্দর করে তুলতে পারে। আমরা যদি বিটের রসে গাজর যোগ করি তবে এটি আরও ভাল স্বাদ পাবে এবং আরও উপকারী হবে। আজ আমরা জানবো কেন বিটের রস এত উপকারী।

বিটের রসের উপকারিতা 

  • হৃদরোগের সমস্যা কমায় 

বিট গুলিতে নাইট্রেট নামে একটি বিশেষ পদার্থ রয়েছে। আমরা যখন বিট খাই, তখন এই নাইট্রেটগুলি আমাদের দেহে নাইট্রিক অক্সাইড নামক কিছুতে পরিণত হয়। এতে রক্তনালীগুলো খুলে যায়, যা আমাদের রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। এটি আমাদের শরীরের চারপাশে রক্ত ​​​​প্রবাহকে আরও ভাল করে তোলে। এই কারণে, আমাদের হৃদয় শক্তিশালী হয় এবং আমাদের একটি নির্দিষ্ট হৃদরোগ হওয়ার সম্ভাবনা কম থাকে। এর সবই বিটে একটি বিশেষ জিনিস যার নাম বেটেইন।

  • রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় 

বাইরে বৃষ্টি হলে আমরা ভাইরাস এবং ব্যাকটেরিয়া থেকে অসুস্থ হতে পারি। এর ফলে জ্বর, সর্দি, কাশির মতো সমস্যা হতে পারে। এই সময়ে সবল ও সুস্থ থাকতে আমরা নিয়মিত বিটের রস পান করতে পারেন। এটিতে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং ভিটামিন সি নামক বিশেষ জিনিস রয়েছে যা আমাদের শরীরের প্রতিরক্ষা শক্তিশালী করতে সাহায্য করতে পারে।

  • ত্বক উজ্জ্বল করে 

বিট আপনার ত্বকের জন্য সত্যিই ভাল কারণ এতে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং ভিটামিন সি নামক বিশেষ জিনিস রয়েছে। এগুলো আপনার ত্বককে সুস্থ রাখতে এবং দাগমুক্ত রাখতে সহায়তা করে। এছাড়াও নিয়মিত বিটের রস খেলে ত্বকে একটা লালচে ভাব আসে। যখন আপনার রক্ত ​​ভালোভাবে চলে, তখন এটি আপনার ত্বককে সুন্দর এবং মোটা দেখায়। তাই আপনার গালকে গোলাপী এবং চকচকে দেখাতে মেকআপ ব্যবহার করার দরকার নেই।

  •   স্মৃতি শক্তি বাড়াতে সাহায্য করে 

বিট খাওয়া আপনার শরীর এবং মস্তিষ্কে আপনার রক্ত ​​​​প্রবাহকে আরও ভাল করে তুলতে পারে। এটি আপনাকে সুস্থ রাখতে এবং স্ট্রোক হওয়ার সম্ভাবনা কমাতে সাহায্য করতে পারে। আপনি যদি প্রায়শই বিটের রস পান করেন তবে বিট আপনার স্মৃতিশক্তি ভালো করে। 

  • চুল পড়ার সমস্যা দূর করে 

বিট গুলোতে বিশেষ খনিজ উপাদান রয়েছে যা আমাদের চুলের জন্য সত্যিই ভাল। এই খনিজগুলি আমাদের চুলকে সুস্থ রাখতে এবং তা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। বিটরুটের রস পান করলে চুল পড়া বন্ধ হয় এবং নতুন চুল হতে সাহায্য করে। 

বিটরুটের রস পান করলে আপনার শরীরকে ক্যান্সার নামক রোগে আক্রান্ত হওয়া থেকে রক্ষা করতে পারে। এর ভিতরে রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি নামক বিশেষ জিনিস যা ক্যান্সার প্রতিরোধে সাহায্য করে। বেটালাইনস নামক কিছুর কারণে রস লাল হয়, যা আপনার শরীরের ভাল কোষগুলিকে আঘাত করা থেকে ক্যান্সার সৃষ্টিকারী খারাপ কোষগুলিকে কমাতে সাহায্য করে।

  • মাসিকের সমস্যা দূর করে 

যাদের পিরিয়ডের সমস্যা আছে তাদের জন্য বিট একটি উপকারী সবজি। এতে রয়েছে আয়রন নামক একটি বিশেষ উপাদান যা নতুন লোহিত রক্তকণিকা তৈরি করতে সাহায্য করে। এটি পিরিয়ডের সমস্যা গুলো ভালো করে তুলতে পারে।

  • পরিপাক সমস্যা দূর করে 

বিটের রস আমাদের পেটের জন্য সুপারহিরো মত! তাদের বেটেইন নামক কিছু আছে যা আমাদের লিভারকে শক্তিশালী রাখতে সাহায্য করে এবং এর কাজ ভালোভাবে করতে সাহায্য করে। এগুলি পেটের সমস্যা যেমন অসুস্থ বোধ করা, একটি সর্দি যুক্ত পেট, হলুদ ত্বক এবং আমাদের পেটের অন্যান্য সমস্যা গুলো সহায়তা করতে পারে।

  • হাড় মজবুত করে 

এই জিনিসটি আপনার শরীরে ক্যালসিয়াম রেখে আপনার হাড়কে মজবুত ও সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। এইভাবে, আপনি যখন বড় হবেন, তখন আপনার হাড়ের সমস্যা হবে না। কিছু লোকের আর্থ্রাইটিস নামক একটি অবস্থা থাকে যা তাদের জয়েন্ট গুলোতে আঘাত করে। বিটরুট খাওয়া এই লোকদের ভাল বোধ করতে সাহায্য করতে পারে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন যে বাতের রোগীদের জন্য বিটরুট সত্যিই ভাল। গবেষণায় দেখা গেছে যে নিয়মিত বিটরুট খেলে বাতের ব্যথা ৩৩ শতাংশ কমে যায়। তাই আর্থ্রাইটিস হলে বিটরুট খাওয়া অবশ্যই ভালো।

  • ওজন কমায় 

যারা ওজন কমাতে চান তাদের জন্য বিটরুট একটি ভালো খাবার কারণ এতে প্রচুর ক্যালোরি বা চর্বি নেই। আপনি যদি এক মাসের জন্য প্রতিদিন সকালে আপেল সিডের ভিনেগার এবং বিটের রসের মিশ্রণ পান করেন তবে এটি আপনাকে আপনার ওজন নিয়ন্ত্রণ করতে এবং আপনাকে ভালো বোধ করতে সাহায্য করতে পারে। 

  • চোখের জন্য ভালো 

বিট আপনার চোখের জন্য সত্যিই ভাল। এগুলো সবুজ হয়ে গেলে, আপনি সেগুলো রান্না না করে খেতে পারেন। যখন সেগুলো রান্না করা হয় বা পাকা হয়, তখন তাদের লুটেইন নামক কিছু থাকে, যা একটি সুপারহিরোর মতো যা আপনার বয়স বাড়ার সাথে সাথে আপনার চোখকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। বিটগুলিতে উদ্ভিদ থেকে বিশেষ উপাদান রয়েছে যা আপনার চোখ এবং তাদের চারপাশের স্নায়ুকে শক্তিশালী এবং সুখী করে তোলে।

  • পটাশিয়াম এর উৎস 

বিটগুলিতে পটাশিয়াম নামক কিছু আছে যা আমাদের স্নায়ু এবং পেশীকে সঠিকভাবে কাজ করতে সাহায্য করে। সামান্য বিটের রস পান করা আমাদের পর্যাপ্ত পটাশিয়াম আছে তা নিশ্চিত করতে সাহায্য করতে পারে। যদি আমাদের পর্যাপ্ত পটাসিয়াম না থাকে, তাহলে আমরা ক্লান্ত, দুর্বল বা পেশী ক্র্যাম্প অনুভব করতে পারি। আমাদের যদি সত্যিই কম পটাসিয়াম থাকে তবে এটি আমাদের হৃদয়ের জন্য সত্যিই বিপজ্জনক হতে পারে। 

  • রক্ত চাপ নিয়ন্ত্রণ করে 

বিটরুট নাইট্রেট নামক কিছু আছে যা আমাদের শরীরের জন্য ভালো। আমরা যখন বিটরুট খাই, তখন এটি নাইট্রিক অক্সাইড নামে একটি বিশেষ পদার্থ তৈরি করে যা আমাদের রক্তনালীগুলোকে বড় হতে সাহায্য করে। এটি উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত ব্যক্তিদের ভাল বোধ করতে সাহায্য করতে পারে। নিয়মিত বিটরুট খাওয়া আমাদের রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করতে পারে।

উপসংহার 

আমরা যেভাবেই রান্না করি না কেন বিট আমাদের জন্য ভালো, কিন্তু বিটরুটের রস পান করাই ভালো কারণ এটি রান্না করলে ভিতরের কিছু ভালো জিনিস নিয়ে যায়। আপনি যদি নিজের থেকে বিটরুটের রসের স্বাদ পছন্দ না করেন তবে আপনি আপেলের টুকরো, পুদিনা, সাইট্রাস ফল বা গাজর যোগ করে এর স্বাদ আরও ভালো করতে পারেন। এই উপাদানগুলো রসের স্বাদকে ময়লার মতো কম এবং আরও উপভোগ্য করে তুলবে। আপনি যদি বিটরুটের রস পান করতে চান তবে ধীরে ধীরে যান। একটি ছোট বিটরুট থেকে সামান্য বিট রস দিয়ে শুরু করুন এবং দেখুন আপনার শরীর কেমন অনুভব করে। সবকিছু ঠিক থাকলে, আপনি পরে আরও রস খেতে পারেন।

ইউরিক এসিড কমাবে যে তিন খাবার
November 25, 2024

 

ইউরিক এসিড কমাবে যে তিন খাবার


Food

ইউরিক অ্যাসিড একটি সাধারণ লক্ষণ হল পায়ে ব্যথা অনুভব করা এবং আঙ্গুল বাঁকাতে অসুবিধা হওয়া। ফোলা জয়েন্টগুলো একটি সাধারণ ঘটনা। আজকাল, ইউরিক অ্যাসিড সম্পর্কিত অবস্থা যেমন রক্তচাপ এবং ডায়াবেটিস, জীবনধারার রোগ হিসাবে বিবেচিত হয়। যখন ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা বেড়ে যায়, তখন খাবারে প্রোটিনের উৎস এমনকি শাকসবজি এবং মসুর ডাল সহ কিছু খাবার এড়িয়ে চলতে হবে। তবে এখন প্রশ্ন হলো, কি খাবার খাওয়া উচিত যাতে ইউরিক অ্যাসিড কমবে? এই ব্লগটিতে আমরা তা আলোচনা করবো। 

ইউরিক অ্যাসিড কি?

ইউরিক অ্যাসিড বেশিরভাগই আপনার শরীরের বিভিন্ন খাবার থেকে তৈরি হয়। এই অ্যাসিড সাধারণত সবার শরীরে থাকে। যখন এটি তৈরি হতে শুরু করে, কিডনি অতিরিক্ত ইউরিক অ্যাসিড পরিত্রাণ করে জিনিসগুলো নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করে। কিন্তু কখনও কখনও, রক্তে ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা খুব বেশি হয়ে যায় এবং এটি বিভিন্ন জয়েন্টে জমা হয়, যার ফলে গাউট হয়। এটি আপনার কিডনিতে সম্ভাব্য সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। 

পিউরিন নামক পদার্থ ভেঙ্গে ইউরিক এসিড তৈরি হয়। কিছু খাবারে প্রচুর পিউরিন অ্যাসিড থাকে, তাই এগুলো থেকে দূরে থাকাই ভালো। অনেক লোক আজকাল ইউরিক অ্যাসিডের উচ্চ স্তরের সাথে যুক্ত সমস্যাগুলির সাথে মোকাবিলা করছে।

উচ্চ মাত্রার ইউরিক অ্যাসিড থাকাকে মেটাবলিক সিনড্রোমের একটি অংশ বলে মনে করা হয়। সুতরাং, যদি আপনার উচ্চ রক্তচাপ, উচ্চ কোলেস্টেরল এবং ট্রাইগ্লিসারাইডের মাত্রা এবং ডায়াবেটিস থাকে, তবে আপনার ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা বৃদ্ধির সম্ভাবনা অনেক বেশি। এবং, যদি আপনার নিকটাত্মীয়দের মধ্যে কেউ কিডনিতে পাথর বা গাউটের মতো সমস্যা নিয়ে থাকেন, তাহলে সম্ভবত আপনার ইউরিক অ্যাসিডের সমস্যা আরও প্রকট হবে।

আবারও, আমাদের জীবনযাত্রার কারণে উচ্চ ইউরিক অ্যাসিড হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সুতরাং, যদি আপনার লিপিড প্রোফাইল বেশি হয়, তবে আপনার ইউরিক অ্যাসিড পরীক্ষাটিও বেশিরভাগ সময় উচ্চতর হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। 

এখন, যদি আপনার রক্তে শর্করা, কোলেস্টেরল এবং ট্রাইগ্লিসারাইডের মাত্রা বেশি থাকে কিন্তু ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা কম থাকে, তাহলে প্রতি ১/২ বছর পর পর আপনার ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা পরীক্ষা করা ভালো।

বিশেষ তিনটি খাবার যা খেলে কমবে ইউরিক অ্যাসিড 

  • হলুদ 

হলুদ, এটি আমাদের সবার বাড়িতেই থাকে, এতে কার্কিউমিন নামক একটি বায়োঅ্যাকটিভ যৌগ থাকে। কারকিউমিন এর প্রদাহ বিরোধী এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বৈশিষ্ট্যের জন্য ব্যাপকভাবে অধ্যয়ন করা হয়েছে, এটি ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা কমাতে এবং গাউটের মতো অবস্থা পরিচালনার জন্য একটি প্রতিশ্রুতিশীল প্রার্থী করে তুলেছে।

গবেষণা পরামর্শ দেয় যে কারকিউমিন ইউরিক অ্যাসিড উৎপাদনে জড়িত একটি এনজাইম জ্যান্থাইন অক্সিডাইসের বাধা দিতে পারে। এই এনজাইমকে সংশোধন করে, হলুদ শরীরে ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করতে পারে। উপরন্তু, কারকিউমিনের অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি প্রভাব সামগ্রিক জয়েন্টের স্বাস্থ্যে অবদান রাখতে পারে এবং উন্নত ইউরিক অ্যাসিডের সাথে যুক্ত লক্ষণগুলি উপশম করতে পারে।

আপনার ডায়েটে হলুদ যোগ করুন, তরকারি, স্যুপ এর মাধ্যমে। আপনার ব্যক্তিগত প্রয়োজনের জন্য সঠিক ডোজ নিশ্চিত করার জন্য আপনি একটি প্রশান্তিদায়ক হলুদ চা তৈরি করতে পারেন বা স্বাস্থ্যসেবা পেশাদারের সাথে পরামর্শ করার পরে হলুদের পরিপূরক গ্রহণ করতে পারেন।

  • বাদাম 

ব্রাজিল বাদাম, বাদাম, ম্যাকাডামিয়া বাদাম এবং আখরোট এর মতো কিছু ধরনের বাদামে পিউরিনের পরিমাণ কম থাকে, যা ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা কমাতে সাহায্য করতে পারে। ব্রাজিল বাদামে বিশেষভাবে মাত্র ৪০ মিলিগ্রাম পিউরিন থাকে। যাইহোক, সাধারণত রাস্তায় পাওয়া বাদাম এড়ানো উচিত কারণ তাদের প্রতি কাপে ৪০ মিলিগ্রাম পিউরিন থাকে।

  • আনারস 

আনারস শুধুমাত্র একটি সুস্বাদু গ্রীষ্মমন্ডলীয় ফল নয় বরং এটি ব্রোমেলাইনের একটি সমৃদ্ধ উৎস, শক্তিশালী প্রদাহ-বিরোধী বৈশিষ্ট্যের সাথে এনজাইমের মিশ্রণ। ব্রোমেলাইন প্রদাহ কমাতে এবং গাউটের সাথে যুক্ত লক্ষণগুলি উপশম করার ক্ষমতার জন্য অধ্যয়ন করা হয়েছে।

ব্রোমেলিনের এনজাইমগুলি প্রোটিনগুলিকে ভেঙে ফেলতে সাহায্য করে, হজমে সহায়তা করে এবং ইউরিক অ্যাসিড সহ বর্জ্য পণ্যগুলিকে অপসারণ করতে সহায়তা করে। পাচনতন্ত্রের কার্যকারিতা বৃদ্ধি করে এবং কিডনির কার্যকারিতাকে সমর্থন করে, আনারস স্বাস্থ্যকর ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা বজায় রাখতে অবদান রাখতে পারে।

আপনার খাদ্যতালিকায় আনারস অন্তর্ভুক্ত করা উপভোগ্য এবং বহুমুখী হতে পারে। টাটকা আনারসের টুকরোগুলি একটি সুস্বাদু খাবার তৈরি করে আপনার খাবারের স্বাদ এবং পুষ্টির উভয়ই উন্নত করতে পারে।

ইউরিক অ্যাসিড বেড়ে যাওয়া কোথায় যন্ত্রনা হয়ে?

  • জয়েন্ট এ জ্বালা ভাব 

যখন আপনার শরীরে ইউরিক অ্যাসিডের পরিমাণ বেড়ে যায়, তখন আপনার হাড়ের চারপাশে বর্জ্য পদার্থ তৈরি হতে থাকে। এর ফলে আপনার জয়েন্টগুলো লাল হয়ে যেতে পারে। আপনি যদি আপনার কনুই, হাঁটু বা জয়েন্টগুলির চারপাশে লালভাব লক্ষ্য করেন তবে এর অর্থ হতে পারে আপনার ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা বেশি। 

  • আঙ্গুল ফুলে যাওয়া 

যদি আপনার বুড়ো আঙুল ফোলা বা ভারী মনে হয়, তাহলে এটি উচ্চ ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রার লক্ষণ হতে পারে। ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা বেড়ে গেলে গাউটের সমস্যা হতে পারে।

  • গোড়ালিতে ব্যথা

আপনার যদি আর্থ্রাইটিস থাকে, তাহলে আপনার গোড়ালিও আক্রান্ত হতে পারে। এই ক্ষেত্রে, আপনার গোড়ালি ফুলে যেতে পারে। গোড়ালি স্পর্শে সংবেদনশীল এবং খুব বেদনাদায়ক হতে পারে। এই সমস্যার কারণে সিঁড়ি বেয়ে উঠতে অসুবিধা হতে পারে।

  • হাঁটু ব্যথা 

আপনার হাঁটুতে যদি অনেক ব্যাথা হয়, তাহলে সম্ভবত এটি আর্থ্রাইটিসের কারণে। যখন আপনার ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা বেড়ে যায়, আপনি প্রথমে অনুভব করবেন এটি আপনার হাঁটুতে। আপনার যদি সত্যিই খারাপ হাঁটুতে ব্যথা হয় এবং সিঁড়ি বেয়ে উঠতে কষ্ট হয়, তাহলে আপনি পিউরিন বেশি থাকে এমন খাবার বাদ দিতে চাইতে পারেন। 

  • ঘাড়ে এবং পিঠে ব্যথা 

আপনি যদি আপনার পিঠ এবং ঘাড়ে গুরুতর ব্যথা অনুভব করেন, বিশেষ করে অল্প বয়সে, এটি আপনার ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা বেশি হওয়ার লক্ষণ হতে পারে। যখন ইউরিক অ্যাসিড বেড়ে যায়, এটি আপনার সারা শরীরে ব্যথার কারণ হতে পারে এবং এটি সত্যিই তীব্র হতে পারে।

উপসংহার 

যদি আপনার ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা ভাল খাবারের সাথে কমে যায়, তাহলে ২ মাসের মধ্যে আবার আপনার রক্তের ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা পরীক্ষা করুন। ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা স্বাভাবিক থাকলেও, আপনি এখনই বাদ দেওয়া খাবার খাওয়া শুরু করতে পারবেন না। পরিবর্তে, বিশেষজ্ঞের পরামর্শ অনুযায়ী ধীরে ধীরে আপনার নিয়মিত ডায়েটে ফিরে যান। যদি আপনার রক্তে ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা বেড়ে যায়, তাহলে আপনাকে দ্রুত এবং কোনো ব্যথা ছাড়াই পুনরুদ্ধার করতে সাহায্য করার জন্য আপনার খাদ্যকে সামঞ্জস্য করতে হবে।

কাঠবাদামের উপকারিতা: সুস্থ্য উপকারিতা এবং ব্যবহার পদ্ধতি
November 25, 2024

 

কাঠবাদামের উপকারিতা: সুস্থ্য উপকারিতা এবং ব্যবহার পদ্ধতি


কাঠবাদামের উপকারিতা

পুষ্টিকর বিভিন্ন ড্রাই ফুডের মধ্যে বাদাম হলো অন্যতম এবং এরই মধ্যে কাঠ বাদাম হলো সব চেয়ে জনপ্রিয় এবং পুষ্টিকর। অনেকে অন্য কিছু খাওয়ার আগে সকালে জলে ভিজিয়ে রাখা কাঠবাদাম খেতে পছন্দ করেন। এই কাঠ বাদাম গুলিতে ভিটামিন-ই, ম্যাগনেসিয়াম এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট নামক জিনিস গুলির মতো প্রচুর ভালো উপাদান রয়েছে। এগুলি খাওয়া আপনাকে অসুস্থ হওয়া থেকে বাঁচাতে সাহায্য করতে পারে। প্রতিদিন কাঠবাদাম খেলে আমাদের কি কি উপকারিতা দিতে পারে সে বিষয়ে স্ববিস্তর আলোচনা এই ব্লগটা করা হবে। 

কাঠ বাদামের পুষ্টিগুণ 

আপনি যদি সঠিক পরিমাণে কাঠ বাদাম খান তবে সেগুলি আপনার জন্য সত্যিই ভাল। এগুলিতে প্রচুর ক্যালসিয়াম রয়েছে, যা আপনার হাড়কে শক্তিশালী করতে সাহায্য করে। কাঠ বাদাম আপনার জন্যও ভাল কারণ এতে তেল, প্রোটিন এবং প্রচুর ভিটামিন এবং খনিজ রয়েছে। এছাড়াও কাঠবাদামের রয়েছে  অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট ফ্ল্যাভোনয়েড নামক বিশেষ জিনিস রয়েছে যা আপনাকে অসুস্থ হওয়া থেকে রক্ষা করতে সাহায্য করতে পারে। এসব কারণে কাঠবাদাম কে সুপারফুড ও বলে। 

কাঠ বাদামের উপকারিতা 

  • কোলেস্টরল নিয়ন্ত্রণ করে 

প্রতিদিন কাঠ বাদাম খেলে আপনার কোলেস্টেরলের মাত্রা বেড়ে যেতে পারে। তবে চিন্তা করবেন না, এটি একটি ভালো জিনিস! কাঠ বাদামে মনোস্যাচুরেটেড ফ্যাট নামে এক বিশেষ ধরনের চর্বি থাকে যা আপনার স্বাস্থ্যের জন্য সত্যিই ভালো। এই চর্বি আপনার শরীরের জন্য ভালো কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়াতে সাহায্য করে। গবেষণায় দেখা গেছে যে নিয়মিত ৫০ গ্রাম কাঠ বাদাম খেয়েছে তাদের LDL এর পরিমান কমেছে এবং HDL ভারসাম্য বজায়  থেকেছে। 

  • হৃদরোগের জন্য ভালো 

কাঠবাদাম সুস্থ হৃদয়ের জন্যও খুবই ভালো। এটিতে উচ্চ পরিমাণে কোলেস্টেরল নিয়ে কাজ করার জন্য বাধানুলক্ষ্য সহকারে পুনর্নির্মাণ করার জন্য প্রোটিন ও প্রকৃতির অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে। এছাড়া, কাঠবাদামে উচ্চ প্রয়োজনীয় মানের মনোস্যাকারাইড ও ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড রয়েছে, যা হৃদয়ের স্বাস্থ্য উন্নত করতে সাহায্য করে এবং কোলেস্টেরলের স্তরকে নিয়ন্ত্রণ করে।

এটা বলা হয় যে বাদাম খাওয়া রক্তে শর্করার মাত্রা  নিয়ন্ত্রণ করে। এর কারণ হল প্রতিদিন এক মুঠো কাঠ বাদাম খাওয়া উচিত কারণ এতে ম্যাগনেসিয়াম রয়েছে।  যাদের টাইপ ২ ডায়াবেটিস আছে তাদের বজায় রাখার জন্য কাঠ বাদাম অপরিহার্য। বাদামের ম্যাগনেসিয়াম ঘনত্বের কারণে শরীরে ইনসুলিন প্রতিরোধের বিকাশ ঘটাতে পারে, যা ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য উপকারী।

  • ওজন কমায় 

কাঠ বাদাম আপনার খিদে এবং তেল জাতীয় স্নাক্স এর ইচ্ছাকে  দমন করে কারণ এতে প্রোটিন এবং ফাইবার বেশি এবং কার্বোহাইড্রেট কম। এটি প্রতিদিন খাওয়া ক্যালোরি কমাতে সহায়তা করে। যেহেতু কাঠ বাদাম খিদে কমায় অতএব  আপনি কতটা খাবেন তা আপনি নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন, যা স্বাস্থ্যকর ওজন বজায় রাখতে সহায়তা করে।

  • দৃষ্টি শক্তির জন্য উপকারী 

কাঠবাদাম ভিটামিন ই এর একটি বড় উৎস, যা আপনার চোখকে রক্ষা করে এবং আপনার লেন্সে অস্বাভাবিক পরিবর্তন বন্ধ করে। ফলে কাঠ বাদাম খেলে চোখ সুরক্ষিত থাকবে। তবে বেশি খেলে ওজন বাড়তে পারে, তাই সঠিক পরিমাণ জানা দরকার।

  • কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে 

এটি একটি যন্ত্রণাদায়ক এবং দীর্ঘস্থায়ী রোগ হলেও এই আমাদের মধ্যে খুবই সাধারণ। সঠিক চিকিৎসা না করলে এই কোষ্ঠকাঠিন্য পরবর্তীকালে পাইলস হতে পারে। তাই অনেক সময়ে কাঠবাদাম সঠিক পরিমানে খেলে হজম ক্ষমতা বাড়ায়ে কারণ এটাই আঁশ থাকে যা কোষ্টকাঠিন্য দূর করে। 

  • হাড় শক্তিশালী করে 

চিনাবাদাম আপনার হাড়ের জন্য ভাল কারণ এতে ক্যালসিয়াম রয়েছে, যা আপনার হাড়কে শক্তিশালী করতে সাহায্য করে। সুতরাং আপনি যদি নিরামিষভোজী হন এবং লোকেরা বলে যে আপনার হাড় শক্ত নয়, আপনি তাদের বলতে পারেন যে চিনাবাদাম খাওয়ার কথা!

  • ত্বকের জন্য ভালো 

আপনি হয়তো পড়েছেন যে কাঠবাদাম বেশিরভাগ ত্বকের পণ্যের উপাদানগুলির একটি প্রধান অংশ। এটি এই কারণে যে এই কাঠ বাদামের আপনার ত্বকের জন্য প্রচুর উপকারিতা রয়েছে। কাঠ বাদামে একটি ফ্ল্যাভোনয়েড থাকে যা একইভাবে গ্রিন টি এবং ব্রকলিতে পাওয়া যায়। এই উপাদানটি আপনার ত্বকে পুষ্টি যোগায় এবং এটি আপনার ত্বকের জন্য একটি অ্যান্টি-এজিং হিসাবে কাজ করে। এটি ছাড়াও কাঠ বাদামের যে তেল হয়ে সেটির সাথে মধু আর লেবু মিশিয়ে মুখে লাগালে উজ্জ্বল ভাব বজায় থাকে।

  • স্মৃতি শক্তি বাড়ায়ে 

কাঠ বাদামে এল-কারনিটাইন এবং রিবোফ্লাভিন থাকে যা মস্তিষ্কের কোষের বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। একটি প্রধান রাসায়নিক যা মস্তিষ্ককে জ্ঞানীয় কাজে সাহায্য করে তা হল ফেনিল্যালানিন এবং বাদামের মধ্যে এই রাসায়নিক থাকে। প্রতিদিন সকালে মাত্র পাঁচ টুকরো কাঠ বাদাম খাওয়া আপনার মস্তিষ্কের শক্তি বাড়াতে সাহায্য করতে পারে।

  • গর্ভবতীর জন্য উপকারী 

কাঠ বাদামে রয়েছে ফলিক অ্যাসিড যা মাকে যেকোনো ধরনের জন্মগত ত্রুটি থেকে রক্ষা করে। ফলিক অ্যাসিড সুস্থ কোষের বৃদ্ধির বিকাশে একটি অবিচ্ছেদ্য ভূমিকা পালন করে এবং ক্রমবর্ধমান ভ্রূণের জীবনচক্র সহায়তা করে। গর্ভবতী মহিলারা যারা কাঠবাদাম খান তারা তাদের শিশুকে যে কোনও ধরণের জন্মগত ত্রুটি থেকে রক্ষা করতে সহায়তা করতে পারে।

কাঠ বাদামে নির্দিষ্ট পরিমাণে ফাইবার থাকে যা শরীরকে ডিটক্সিফাই করতে সাহায্য করে। বাদাম খাওয়া খাবারকে আরও সহজে পরিপাকতন্ত্রের মধ্য দিয়ে যেতে সাহায্য করে। কাঠ বাদামে উচ্চ ফাইবার থাকে এবং এটি আপনার কোলন ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়। এটিতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ই এবং ফ্ল্যাভোনয়েড রয়েছে যা স্তন ক্যান্সার নিয়ন্ত্রণ করে।

কাঠবাদাম খাবার নিয়ম 

কিছু লোক আপনাকে বলতে পারে যে আপনি যখনই চান কাঠ বাদাম খেতে পারেন। কিন্তু গবেষণায় দেখা গেছে যে অনেক বেশি চিনাবাদাম খাওয়া আসলে আপনার স্বাস্থ্যের জন্য খারাপ হতে পারে।

ডায়েট বিশেষজ্ঞরা বলছেন যে প্রতিদিন ৮-১০ টি কাঠ বাদাম বা তার একটি ছোট গুচ্ছ খাওয়া আপনার পক্ষে ভাল। 

মনে রাখবেন, একসাথে অনেক বাদাম খাওয়া আপনার শরীরের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। বাদাম আপনার ওজন বাড়াতে পারে এবং অনেক বেশি খেলে শ্বাস নিতে কষ্ট হতে পারে, পেটে ব্যথা হতে পারে, এমনকি অসুস্থও হতে পারে।

কাঠ বাদাম রাতারাতি পানিতে ভিজিয়ে রাখলে তা আমাদের শরীরকে আরও সহজে সব ভালো জিনিস নিতে সাহায্য করে।

উপসংহার 

কাঠ বাদাম একটি স্বাস্থ্যকর খাবার। এটি প্রয়োজনীয় পুষ্টির একটি পরিসীমা প্রদান করে এবং যারা শাকসবজির ডায়েট অনুসরণ করে তাদের জন্য প্রোটিনের ভালো উৎস হতে পারে। এগুলি সর্বোপরি  হয়, এবং বিভিন্ন উপায় এগুলিকে ডায়েটে অন্তর্ভুক্ত করতে পারে। কাঠ বাদামের অ্যালার্জিযুক্ত ব্যক্তিদের এটি খাওয়া উচিত নয়, অতএব খাবার আগে সঠিক ভাবে জেনে নিন।

Chia Seeds in Bengali: উপকারিতা এবং ব্যবহার
November 25, 2024

 

Chia Seeds in Bengali: উপকারিতা এবং ব্যবহার


Chia Seeds

আজকাল বেশিভাগ মানুষের ওজনের সমস্যা এবং এর সাথে আসে নানা জটিল অসুখ। যখন কারও ওজন বেশি হয়, তখন এটি তাদের শরীরের কাজকে ধীর করে দিতে পারে এবং তাদের ডায়াবেটিস, উচ্চ কোলেস্টেরল এবং হার্টের সমস্যার মতো গুরুতর রোগে আক্রান্ত হতে পারে। সুস্থ থাকার জন্য ওজন কমানোর চেষ্টা করা গুরুত্বপূর্ণ। 

তাই সব ডাক্তার ওজন কমানোর কথা বলেন। এই ওজন কমানোর কথা আসলে এখনকার দিনে চিয়া সিডের কথা খুব এ শোনা যায়। অনেকেই হয়তো এটির ব্যাপারে জানেন বা আবার অনেকেই হয়তো এই নতুন শুনছেন তাই এই ব্লগ তে চিয়া সিডির ব্যাপারে স্ববিস্তরে আলোচনা করা হবে। 

চিয়া সিড কি ?

চিয়া বীজ চিয়া নামক একটি উদ্ভিদ থেকে আসে, যা পুদিনা সম্পর্কিত। এগুলি মধ্য আমেরিকায় জনপ্রিয় এবং এক প্রকার ভেষজ হিসাবে বিবেচিত হয়। চিয়া বীজ খুবই পুষ্টিকর, এতে প্রচুর ক্যালসিয়াম, ওমেগা-৩ এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে যা আপনাকে শক্তি জোগায়। তারা ওজন কমাতে সাহায্য করতে পারে কারণ তারা প্রচুর চর্বি শোষণ করে এবং আপনাকে হাইড্রেটেড রাখতে সাহায্য করে। 

চিয়া সিডের পুষ্টির মান 

চিয়া বীজ আপনার জন্য সত্যিই ভাল কারণ তাদের অনেক গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি রয়েছে। এগুলিতে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার রয়েছে, যা আপনার পেট ভরা বোধ করতে এবং হজমে সহায়তা করে। এগুলিতে ওমেগা -৩ ফ্যাটি অ্যাসিড রয়েছে যা আপনার হৃদয়ের জন্য ভাল এবং প্রদাহ কমাতে।

চিয়া বীজে ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম এবং ফসফরাসের মতো গুরুত্বপূর্ণ খনিজ রয়েছে যা আপনার হাড়ের জন্য ভালো। তাদের প্রোটিন রয়েছে যা আপনার পেশীগুলোকে বৃদ্ধি করতে এবং নিজেদের মেরামত করতে সহায়তা করে। চিয়া বীজ গ্লুটেন-মুক্ত, তাই তারা নির্দিষ্ট খাদ্যতালিকাগত বিধিনিষেধ সহ লোকেদের জন্য একটি ভাল বিকল্প। সামগ্রিকভাবে, চিয়া বীজ একটি স্বাস্থ্যকর খাদ্যের জন্য একটি দুর্দান্ত সংযোজন কারণ এতে আপনার শরীরের জন্য অনেক ভাল জিনিস রয়েছে।

চিয়া সিডের উপকারিতা 

  • পুষ্টি পাওয়ার হাউস

চিয়া বীজ একটি শক্তিশালী পুষ্টির পাঞ্চ প্যাক. এগুলি ফাইবার, প্রোটিন, ওমেগা -৩ ফ্যাটি অ্যাসিড, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, ভিটামিন এবং খনিজ গুলোর মতো প্রয়োজনীয় পুষ্টিতে সমৃদ্ধ। চিয়া বীজের মাত্র এক আউন্স (প্রায় দুই টেবিল চামচ) বেশ কিছু প্রয়োজনীয় পুষ্টির জন্য প্রস্তাবিত দৈনিক গ্রহণের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ প্রদান করে, যা গুলি যেকোনো সুষম খাদ্যের জন্য একটি চমৎকার সংযোজন করে তোলে।

চিয়া বীজের সবচেয়ে পরিচিত সুবিধা গুলোর মধ্যে একটি হল তাদের হার্টের স্বাস্থ্যের উন্নতির সম্ভাবনা। চিয়া বীজের উচ্চ ফাইবার সামগ্রী, বিশেষ করে দ্রবণীয় ফাইবার, পিত্ত অ্যাসিডের সাথে আবদ্ধ হয়ে এবং শরীর থেকে তাদের নির্গমনে সহায়তা করে কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে সাহায্য করতে পারে। উপরন্তু, চিয়া বীজ ওমেগা -৩ ফ্যাটি অ্যাসিডের একটি ভালো উৎস, যা নিম্ন রক্তচাপ এবং হৃদরোগের ঝুঁকি হ্রাস সহ প্রদাহ হ্রাস এবং হৃদরোগের উন্নতির সাথে যুক্ত।

  • পাচক স্বাস্থ্য

চিয়া বীজ খাদ্যতালিকাগত ফাইবার একটি সমৃদ্ধ উৎস, এতে অদ্রবণীয় ফাইবারের উচ্চ অনুপাত রয়েছে, যা মলের জন্য প্রচুর পরিমাণে যোগ করে এবং নিয়মিত মলত্যাগ সহায়তা করে, এইভাবে কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধ করে এবং হজমের স্বাস্থ্য বজায় রাখে। অধিকন্তু, চিয়া বীজ তরল পদার্থের সাথে মিশ্রিত হলে জেলের মতো সামঞ্জস্য তৈরি হয় যা কার্বোহাইড্রেটের শোষণ ধীর করে এবং পূর্ণতার অনুভূতি প্রচার করে, যা ওজন নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করতে পারে।

  • ওজন ব্যবস্থাপনা

আপনার ডায়েটে চিয়া বীজ অন্তর্ভুক্ত করা ওজন নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করতে পারে। চিয়া বীজে ফাইবার, প্রোটিন এবং স্বাস্থ্যকর চর্বি গুলির সংমিশ্রণ তৃপ্তি বাড়াতে এবং ক্ষুধা কমাতে সাহায্য করে, সম্ভাব্য ক্যালোরি গ্রহণের হ্রাস ঘটায়। তদুপরি, চিয়া বীজের বৈশিষ্ট্য ক্ষুধা নিয়ন্ত্রণ করতে এবং আপনাকে দীর্ঘ সময়ের জন্য পূর্ণ বোধ করে অতিরিক্ত খাওয়া প্রতিরোধ করতে সহায়তা করে।

  • ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণ 

চিয়া বীজ খাওয়া রক্তে শর্করার ভালো নিয়ন্ত্রণে অবদান রাখতে পারে, বিশেষ করে টাইপ 2 ডায়াবেটিস বা এটি হওয়ার ঝুঁকিতে থাকা ব্যক্তিদের জন্য। চিয়া বীজের দ্রবণীয় ফাইবার কার্বোহাইড্রেট হজম এবং শোষণ ধীর করে দেয়, যা খাবার পর রক্তে শর্করার মাত্রা বৃদ্ধি রোধ করতে সাহায্য করে। উপরন্তু, কিছু গবেষণায় দেখা যায় যে চিয়া বীজ ইনসুলিন সংবেদনশীলতা উন্নত করতে পারে এবং ইনসুলিন প্রতিরোধ ক্ষমতা কমাতে পারে, যা রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণে আরও সাহায্য করে।

  • হাড়ের স্বাস্থ্য

চিয়া বীজ ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, ম্যাগনেসিয়াম এবং ম্যাঙ্গানিজ সহ হাড়ের স্বাস্থ্যের জন্য প্রয়োজনীয় বিভিন্ন খনিজ গুলোর একটি ভালো উৎস। এই খনিজ গুলি শক্তিশালী এবং স্বাস্থ্যকর হাড় বজায় রাখতে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, অস্টিওপরোসিস এবং ফ্র্যাকচারের ঝুঁকি হ্রাস করে, বিশেষ করে আপনার বয়স হিসাবে। আপনার ডায়েটে চিয়া বীজ অন্তর্ভুক্ত করা এই প্রয়োজনীয় খনিজ গুলোর জন্য আপনার দৈনন্দিন প্রয়োজনীয়তা পূরণ করতে এবং সামগ্রিক হাড়ের স্বাস্থ্যকে সমর্থন করতে অবদান রাখতে পারে।

চিয়া সিডি কি ভাবে খাওয়া উচিত?

জল বা দুধের একটি পাত্রে চিয়া বীজ ডুবিয়ে রাখুন এবং সারারাত ঢেকে রাখতে দিন। খুব সকালে উঠে খালি পেটে বিশুদ্ধ পানি বা দুধের সাথে মিশিয়ে চিয়া বীজ খান। এই অভ্যাসটি কার্যকরভাবে প্রয়োজনীয় খনিজ, ভিটামিন, ওমেগা থ্রি এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এর অপ্রতুলতা দূর করে, এইভাবে শরীরের সুস্থতা বজায় রাখে। তদুপরি, জল বা দুধের সাথে মিশ্রিত চিয়া বীজের সংযোজন ডিহাইড্রেশন বা শারীরিক তরলগুলির অপ্রতুলতার ঝুঁকিকে উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস করে। অতএব, প্রতিটি ভোরে জাগ্রত হওয়ার পর চিয়া বীজের সাথে মিশ্রিত জল বা দুধ খাওয়ার জন্য বিশ্বস্তভাবে লিপ্ত হওয়া উচিত! যাইহোক, যারা ল্যাকটোজ অসহিষ্ণুতা ভুগছেন তাদের অবশ্যই দুধ খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে, কারণ এটি তাদের অসুস্থতা বাড়িয়ে তুলতে পারে।

উপসংহার 

চিয়া বীজ আপনার জন্য সত্যিই ভাল এবং আপনার শরীরকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করতে পারে। এগুলি খুব ছোট তবে প্রচুর ভিটামিন এবং খনিজ রয়েছে যা আপনার শরীরের প্রয়োজন। তারা আপনার হৃদয়কে সাহায্য করতে পারে, আপনার পেটকে ভালো করে তুলতে পারে, আপনাকে আপনার ওজন নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করতে পারে এবং আপনাকে প্রচুর শক্তি দিতে পারে। চিয়া বীজ খাওয়া আপনার শরীরকে দুর্দান্ত অনুভব করার একটি সহজ এবং মুখরোচক উপায়।

মঙ্গলে কি মানববসতি তৈরি করা সম্ভব?
November 02, 2024

 

মঙ্গলে কি মানববসতি তৈরি করা সম্ভব

পাঠকের প্রশ্ন

মঙ্গলে কি মানববসতি তৈরি করা সম্ভব? যদি তৈরি করা সম্ভব হয়, তাহলে এখনো হচ্ছে না কেন? আর যদি সম্ভব না হয়, তাহলে কেন? সেখানে তো চাঁদ-সূর্য সবই আছে।


উত্তর: চমৎকার প্রশ্ন। চিন্তাভাবনা করেই প্রশ্ন করেছ। বেশ বুদ্ধিমত্তার পরিচয় পাওয়া যায় তোমার প্রশ্নে। কারণ, তুমি জানতে চেয়েছ, মঙ্গল গ্রহে মানববসতি তৈরি করা সম্ভব কি না। সবাই জানতে চায়, সেখানে মানুষ কবে যাবে। কিন্তু বসতি স্থাপনের ব্যাপারটি আরও কঠিন ও সময়সাপেক্ষ। মঙ্গল গ্রহে যাওয়ার স্বপ্ন আমরা সবাই দেখি। নাসা একটি পরিকল্পনা নিয়েছে। ২০৩০ সালের মধ্যে সেখানে মানুষ পাঠাবে। স্পেস এক্স তো আরও আগেই পাঠাতে চায়। তারা বলছে, ২০২৪ সালের মধ্যে মঙ্গল গ্রহে মানুষ পাঠাবে। কিন্তু মানুষ গেলেও সেটি হবে সাময়িক কালের জন্য। হয়তো তাঁবু খাটিয়ে অক্সিজেনের ব্যবস্থা এবং সঙ্গে খেয়ে-পরে বেঁচে থাকার ব্যবস্থা করে সেখানে মানুষ পাঠানো যাবে, কিন্তু বসতি স্থাপন করতে হলে অনেক বড় প্রস্তুতি লাগবে।

মঙ্গল গ্রহের বায়ুমণ্ডলের ৯৫ ভাগেরও বেশি কার্বন ডাই-অক্সাইড ও অক্সিজেন খুবই কম। সুতরাং সেখানে জনবসতি স্থাপন করতে হলে প্রথমে বায়ুমণ্ডলে প্রচুর অক্সিজেনের ব্যবস্থা করতে হবে। এটিই হলো সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। কীভাবে সে ব্যবস্থা করা যায়?

সমস্যা আরও আছে। মঙ্গলের অভিকর্ষ শক্তি পৃথিবীর অভিকর্ষ শক্তির মাত্র ৩৮ শতাংশ। আবার মঙ্গলের বায়ুমণ্ডল পৃথিবীর সমুদ্রপৃষ্ঠের বায়ুমণ্ডলের মাত্র ১ শতাংশ। এত হালকা বায়ুমণ্ডলে পর্যাপ্ত অক্সিজেন থাকলেও স্থায়ী বসবাস কঠিন।

তারপরও মানুষ আশায় বাঁচে। উপায় একটি অবশ্য আছে। সেখানে প্রথমে বনায়ন করতে হবে। সবুজ গাছ মঙ্গলের কার্বন ডাই-অক্সাইড গ্রহণ করে বায়ুমণ্ডলে অক্সিজেন উন্মুক্ত করবে। এভাবে ধীরে ধীরে মঙ্গলের বায়ুমণ্ডলে অক্সিজেনের অংশ বাড়াবে। এরপর হয়তো এমন দিন আসবে, যখন মানুষ সেখানে গিয়ে বসতি স্থাপন করবে।

কিন্তু সাবধান। এ পরিকল্পনা জানলে এখনই মঙ্গলে জমি বিক্রির ব্যবসা শুরু হয়ে যেতে পারে! তবে বনায়ন করে পরিবেশ তৈরি করতে অন্তত ১০০ বছর তো লাগবেই। তাই এটি নিশ্চিত, আমাদের প্রজন্ম হয়তো মঙ্গলে বসতি স্থাপন দেখে যেতে পারবে না।


প্রশ্ন করেছেন শারিয়া চৌধুরী, ষষ্ঠ শ্রেণি, সিটি সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়, চট্টগ্রাম

*লেখাটি ২০২০ সালে বিজ্ঞানচিন্তার অক্টোবার সংখ্যায় প্রকাশিত

মহাশূন্যে বাতাস নেই অথচ পৃথিবীতে এত বাতাস কেন?
November 02, 2024

 

মহাশূন্যে বাতাস নেই অথচ পৃথিবীতে এত বাতাস কেন

সূর্যের গ্রহগুলোর মধ্যে একমাত্র পৃথিবীতেই প্রাণ ধারণের উপযুক্ত বায়ুমণ্ডল আছে। এই বায়ুমণ্ডল কোটি কোটি বছরের বিশেষ প্রক্রিয়ায় সৃষ্টি হয়েছে। পৃথিবী সৃষ্টির প্রথম দিকে লাখ লাখ আগ্নেয়গিরি থেকে অগ্ন্যুৎপাত ঘটত। তরল লাভার সঙ্গে প্রচুর বাষ্পও বের হতো। বাষ্প তো আসলে পানি, যার উপাদানগুলো হলো ২ ভাগ হাইড্রোজেন ও ১ ভাগ অক্সিজেন পরমাণু। অগ্ন্যুৎপাতে আরও বের হতো কার্বন ডাই–অক্সাইড ও অ্যামোনিয়া। ১টি কার্বন ও ২টি অক্সিজেন পরমাণু নিয়ে কার্বন ডাই–অক্সাইড অণু এবং ১টি নাইট্রোজেন ও ৩টি হাইড্রোজেন পরমাণু নিয়ে অ্যামোনিয়া অণু গঠিত। লক্ষ করলে দেখব, এসব অণু–পরমাণু নিয়েই মূলত বায়ুমণ্ডল গঠিত। অবশ্য আরও কিছু ছোটখাটো গ্যাসীয় অণু বাতাসে রয়েছে। ওগুলোও এসেছে সেই অগ্ন্যুৎপাতের সময় গলিত লাভার সঙ্গে। এখন প্রশ্ন হলো, আগ্নেয়গিরি থেকে তো মুক্ত অক্সিজেন বের হয়নি। তাহলে পৃথিবীর বাতাসে এত অক্সিজেন এল কীভাবে? অক্সিজেন এসেছে কার্বন ডাই–অক্সাইড ও বাষ্পীয় পানি থেকে। আমরা আগেই দেখেছি, এদের উপাদানে অক্সিজেন রয়েছে। এই অক্সিজেন গ্যাসীয় অণুগুলো থেকে মুক্ত করার ক্ষেত্রে আসল ভূমিকা রেখেছে মহাসাগরের পানি ও প্রাথমিক স্তরের ব্যাকটেরিয়া। সূর্যের আলোও সেখানে ভূমিকা রেখেছে। সাগরের পানিতে কার্বন ডাই–অক্সাইডের একটি বড় অংশ দ্রবীভূত হয়। সেখান থেকে ব্যাকটেরিয়া সূর্যের আলো ও কার্বন ডাই–অক্সাইড নিয়ে শুধু কার্বনটুকু কাজে লাগায় ও অক্সিজেন মুক্ত করে। অন্যদিকে সূর্যের আলো অ্যামোনিয়ার অণু ভেঙে নাইট্রোজেন ও হাইড্রোজেন আলাদা করে। হাইড্রোজেনের ঘনত্ব খুব কম। হালকা বলে বেশ কিছু হাইড্রোজেন পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণ বল উপেক্ষা করে মহাশূন্যে বিলীন হয়ে যায়।


প্রায় ৫ ভাগের ১ ভাগ অক্সিজেন ও বাকি ৪ ভাগের সামান্য কম নাইট্রোজেন। এ ছাড়া রয়েছে ১ শতাংশের মতো কার্বন ডাই–অক্সাইড। সামান্য কিছু হিলিয়াম, আরগন, ক্রিপটন, নিয়ন, জেনন প্রভৃতি নিষ্ক্রিয় গ্যাসও আছে। পৃথিবীর আদি যুগে এসব গ্যাসের পরিমাণ কিন্তু ছিল খুবই কম। কালের বিবর্তনে পরিমাণ বাড়তে থাকে। গ্যাসগুলোর বর্তমানের এই নির্দিষ্ট অনুপাতে পৌঁছাতে প্রায় ৫০০ কোটি বছর লেগেছে। বায়ুমণ্ডলের উপাদানগুলোর এই অনুপাত পৃথিবীতে প্রাণের অস্তিত্বের জন্য একেবারে আদর্শ। প্রাণী ও উদ্ভিদের ব্যবহারের জন্য গ্যাসগুলো এক অভাবনীয় অনুপাতে অবস্থান করছে। প্রাণীরা বাতাস থেকে অক্সিজেন গ্রহণ করে ও কার্বন ডাই–অক্সাইড ত্যাগ করে। বিপরীতে উদ্ভিদ কার্বন ডাই–অক্সাইড গ্রহণ করে ও অক্সিজেন ত্যাগ করে। এই দুই গ্যাসীয় উপাদানের অনুপাতের হেরফের হলে বিপর্যয় দেখা দেবে। কারণ, বনভূমি কমে গেলে কার্বন ডাই–অক্সাইডের পরিমাণ বেড়ে যায়, দেখা দেয় জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি। তখন পৃথিবীতে প্রাণের অস্তিত্ব বিপন্ন হয়। এই প্রতিকূল প্রক্রিয়া এখনই শুরু হয়ে গেছে। সৌরমণ্ডলের অন্যান্য গ্রহে কিছু বায়ুমণ্ডল থাকলেও সেখানে প্রাণের অস্তিত্বের জন্য অপরিহার্য অক্সিজেন কম বা একেবারেই নেই। মঙ্গল গ্রহের বায়ুমণ্ডল খুবই হালকা। গ্রহগুলোর বাইরে মহাশূন্যে বাতাস থাকতে পারে না, কারণ বাতাস ধরে রাখার জন্য দরকার অভিকর্ষ বল। কোনো বস্তুপিণ্ড তথা ভর ছাড়া তো অভিকর্ষ বল থাকে না। তাই পদার্থবিহীন মহাশূন্যে কোনো বাতাস নেই।


সূত্র: থেরেসা ম্যাশেমার, স্মিথসোনিয়ানম্যাগ ডট কম

*লেখাটি ২০২১ সালে বিজ্ঞানচিন্তা জুন সংখ্যায় প্রকাশিত

নভোচারীরা ভাসমান অবস্থায় থাকেন কেন?
November 02, 2024

 

নভোচারীরা ভাসমান অবস্থায় থাকেন কেন

পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণ শক্তির প্রায় ৯০ ভাগই মহাশূন্যযান পর্যন্ত পৌঁছায়। তাহলে পৃথিবীর কক্ষপথ পরিভ্রমণরত মহাকাশযানের ভেতরে নভোচারীরা কেন ভেসে থাকেন? কেন পৃথিবীর আকর্ষণে মাটিতে পড়ে যান না? তাঁদের ওপর তো পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণ শক্তির অন্তত ১০ শতাংশ কাজ করছে। সেই আকর্ষণ অকার্যকর হয়ে যাচ্ছে কেন? এর সহজ উত্তর হলো, মহাশূন্যে পৃথিবী প্রদক্ষিণকারী কোনো বস্তু ওজন হারায়, তাই ভেসে থাকে, মাটিতে পড়ে না। কিন্তু এত উঁচুতে থাকে বলেই কি বস্তু ওজন হারায়? না, তা নয়। আসল কারণ হলো, ওরা পৃথিবীর চারপাশে ঘুরছে বটে, কিন্তু এই পরিভ্রমণ আসলে পৃথিবীর দিকে পড়ন্ত বস্তু হিসেবে হচ্ছে। আর আমরা জানি, ওপর থেকে পড়ন্ত কোনো বস্তুর ওজন থাকে না। যেমন আমরা যখন উঁচু কোনো ভবনের ২০–৩০ তলা থেকে লিফটে দ্রুত নিচে নামতে থাকি, তখন বুক ঢিপ ঢিপ করে। মনে হয়, আমাদের ওজন কমে যাচ্ছে এবং প্রায় ওজনহীন অবস্থায় মাটিতে পড়ছি। আমাদের সাধারণ অভিজ্ঞতা থেকেই এটা আমরা বলতে পারি।

আরেকটি মজার উদাহরণ দেখুন। আমরা একটা ভারী ক্রিকেট বল ছুড়ে মারলাম। কিছু দূর গিয়ে সেটা মাটিতে পড়বে। এরপর আরও জোরে ছুড়ে মারলাম। বলটা আরও একটু দূরে গিয়ে মাটিতে পড়বে। আরও জোরে, আরও জোরে ছুড়ে মারলাম... একসময় দেখা যাবে, বলটা উঁচু আকাশে উঠে পৃথিবী প্রদক্ষিণ করছে, মাটিতে পড়ছে না; অর্থাৎ ঘূর্ণমান অবস্থায় বলটি ওজন হারায়, তাই মাধ্যাকর্ষণ শক্তির টানে মাটিতে পড়ে না। এর মানে হলো, কক্ষপথে পরিভ্রমণরত বস্তু ওজন হারায়। সে জন্যই বলা যায়, রকেটের ভেতরে মহাকাশচারীরা ওজন হারান, ভেসে বেড়ান।


*টুডে আই ফাউন্ড আউট ওয়েব পেজে প্রকাশিত কয়েকটি লেখায় এসব বিষয়ে আরও মজার অনেক তথ্য পাওয়া যাবে।

*লেখাটি ২০২৩ সালে বিজ্ঞানচিন্তার জানুয়ারি সংখ্যায় প্রকাশিত

অ্যারোপ্লেনে বাজ পড়লে যাত্রীরা রক্ষা পান কীভাবে?
November 02, 2024

 

অ্যারোপ্লেনে বাজ পড়লে যাত্রীরা রক্ষা পান কীভাবে


ঝড়বৃষ্টির সময় আকাশে ঘন ঘন বিজলি চমকায়। বিকট শব্দে বাজও পড়ে। মেঘে মেঘে বিদ্যুৎ চমকায়। আবার বিদ্যুতের ঝলক মেঘ থেকে নিচে মাটির দিকেও নেমে আসে। এর উত্তাপ সূর্যপৃষ্ঠের তাপমাত্রার পাঁচ গুণ বেশি পর্যন্ত হতে পারে। এই প্রচণ্ড তাপ চারপাশের বাতাসের সঙ্গে বিক্রিয়া করে শকওয়েভ সৃষ্টি করে, যা প্রচণ্ড শব্দের বাজ বলে অভিহিত করি আমরা।

প্রশ্ন হলো, এ ধরনের বাজ তো আকাশে চলার সময় অ্যারোপ্লেনেও আঘাত করতে পারে। সে সময় যাত্রীরা রক্ষা পান কীভাবে? এ জন্য আধুনিক বিমানে বিদ্যুতের তাপ সহনের বিশেষ ব্যবস্থা থাকে। বিজলির বিদ্যুৎ–প্রবাহ বিমানের এক প্রান্ত দিয়ে প্রবেশ করে যেন অন্য প্রান্ত দিয়ে অনায়াসে বেরিয়ে যায়, সে ব্যবস্থা রাখা হয়। ফলে কোনো ক্ষয়ক্ষতি ছাড়াই বজ্রপাতের মধ্য দিয়েও বিমান চলে যায়।

বজ্রপাতের সময় মেঘে সঞ্চিত অতিরিক্ত ঋণাত্মক বিদ্যুৎ চার্জ মাটির দিকে সঞ্চিত ধনাত্মক চার্জের সঙ্গে সম্মিলনের জন্য নেমে আসে, সৃষ্টি হয় বিদ্যুৎ–প্রবাহ। এ সময় উঁচু গাছপালা বা ঘরবাড়িতে বজ্রাঘাত হয়। অনেক ক্ষয়ক্ষতি হয়। তাই এ সময় আপনাকে নিরাপদ আশ্রয় বেছে নিতে হবে। বাইরে খোলা মাঠ বা বড় গাছের নিচে থাকবেন না। প্রশস্ত ঘর নিরাপদ। টেলিফোন ব্যবহার থেকে বিরত থাকবেন। পুকুর, নদীতে সাঁতার না কাটাই ভালো। বাড়ির পাশে উঁচু নারকেলগাছ রাখা ভালো। তাহলে উঁচু গাছেই বাজ পড়বে, বাড়ি রক্ষা পাবে। শহরে উঁচু উঁচু দালানে আর্থিং ব্যবস্থা রাখা হয়, যেন বিদ্যুতের এই প্রচণ্ড প্রবাহ এর মধ্য দিয়ে মাটিতে চলে যায়।


*লেখাটি ২০২৪ সালে বিজ্ঞানচিন্তার এপ্রিল সংখ্যায় প্রকাশিত

ফিলিস্তিনের স্বাধীনতা আন্দোলনের মহানায়ক শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ দা’য়ী ইসমাইল হানিয়া
July 11, 2024

 post

ফিলিস্তিনের স্বাধীনতা আন্দোলনের মহানায়ক শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ দা’য়ী ইসমাইল হানিয়া

ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী রাজনৈতিক দল হামাসের রাজনৈতিক শাখার প্রধান ও ফিলিস্তিনের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন শহীদ ইসমাইল হানিয়া। বিশ্ব ইসলামী আন্দোলনের জন্য ইসমাইল হানিয়া ছিলেন একজন অন্যতম অগ্রনায়ক। তিনি একাধারে হাফেজে কুরআন, শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ দা’য়ী, সমাজসংস্কারক, প্রাজ্ঞ রাজনীতিবিদ, সফল প্রধানমন্ত্রী, শহীদি কাফেলা হামাসের প্রিয় রাহবার এবং মজলুম জননেতা। বিশ্ববিজয়ী বীর ও অগণিত মানুষের প্রিয় এ রাহবারকে হারিয়ে আমরা গভীরভাবে শোকাহত! আমরা বিশ্বাস করি, ফিলিস্তিন এবং গাজার মজলুম জনগণের মুক্তি সংগ্রামের এই অবিসংবাদিত নেতা তাঁর জীবনে যে বিশাল দায়িত্ব আঞ্জাম দিয়েছেন, ইতিহাসের পাতায় তাঁর নাম স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে, ইনশাআল্লাহ। মহান আল্লাহ রব্বুল আলামিন তাঁর শাহাদাতকে কবুল করুন।

গত ৩১ জুলাই বুধবার ইরানের রাজধানী তেহরানে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী রাজনৈতিক দল হামাসের রাজনৈতিক ব্যুরোর প্রধান ইসমাইল হানিয়া গুপ্তহত্যার শিকার হয়ে নিহত হন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলায়হি রাজিউন)। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৬২ বছর। ৩০ জুলাই মঙ্গলবার ইরানের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ানের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়ার পর তাঁকে হত্যা করা হয়। ইসমাইল হানিয়া যে বাসভবনে ছিলেন সেখানে তিনি ও তাঁর এক দেহরক্ষী নিহত হন। হামাস এই ঘটনার জন্য ইসরাইলকে দায়ী করেছে। আন্তর্জাতিক কূটনীতিক মহল হামাসের অন্য কট্টরপন্থি নেতাদের তুলনায় হানিয়াকে মধ্যপন্থি বলে মনে করতেন। গাজায় যুদ্ধবিরতি নিয়ে আলোচনার গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার ছিলেন হানিয়া। তাঁর মৃত্যুর মধ্য দিয়ে আলোচনা থমকে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। হামলার পাল্টা জবাব দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান। কাতার, চীন, জর্ডান ও লেবানন এই হামলার নিন্দা জানিয়েছে। তবে তিনি কীভাবে নিহত হয়েছেন, সে বিষয়ে কোনো বিস্তারিত তথ্য উল্লেখ করা হয়নি ইরানের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমে। এদিকে ২৪ ঘণ্টার কম সময়ের মধ্যে ইরান সমর্থিত দুই বাহিনীর দুজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাকে হত্যার ঘটনায় ওই অঞ্চলে সংঘর্ষ বেড়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এর ফলে হামাস ও ইসরাইলের মধ্যে শান্তি আলোচনা ও হুমকির মধ্য পড়ল বলে মনে করা হচ্ছে, কারণ ইসমাইল হানিয়া ওই আলোচনার গুরুত্বপূর্ণ একজন ব্যক্তি ছিলেন। (সূত্র: আল-জাজিরা, আরব নিউজ, বিবিসি, আল-আরাবিয়া  এবং আল-হাদথ।) 

তবে ইসমাইল হানিয়াকে ক্ষেপণাস্ত্র হামলার মাধ্যমে হত্যা করা হয়েছে বলে গতকাল বুধবার জানিয়েছে সৌদি সংবাদ সংস্থা আল-আরাবিয়া এবং আল-হাদথ। কিছু সূত্রের বরাতে আল হাদথ নিশ্চিত করেছে যে, ইসমাইল হানিয়াহ এবং তার সঙ্গী ওয়াসিম আবু শাবানকে লক্ষ্য করেই বাসভবনটিতে হামলা চালানো হয়। এমনকি তারা যেখানে বিশ্রাম নেন সেই স্থান লক্ষ্য করেই হামলা চালানো হয়।

যেভাবে মোসাদ এজেন্টরা ইসমাইল হানিয়াকে হত্যা করে 

ফিলিস্তিনের স্বাধীনতা আন্দোলনের প্রধান রাজনৈতিক দল হামাসের প্রধান ইসমাইল হানিয়াকে হত্যা করতে ইরানি এজেন্ট ভাড়া করেছিল অবৈধ দখলদার ইসরাইলের কুখ্যাত গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদ। তবে এখনও ইসরাইল হানিয়াকে হত্যার দায় স্বীকার করেনি। তবে একজন ইসরাইল এবং দুই মার্কিন কর্মকর্তা বলেছেন, ইসরাইল এই হামলার পেছনে ছিল। ইরান ইন্টারন্যাশনালের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, হানিয়ার মৃত্যুর প্রায় দুঘণ্টা আগে ফাউন্ডেশন ফর ডিফেন্স অব ডেমোক্রেসিসের একজন সিনিয়র উপদেষ্টা রিচার্ড গোল্ডবার্গ এই হামলার ইঙ্গিত দিয়ে বলেছিলেন, ইসরাইলি বিমানবাহিনী আজ রাতে তার হামলার পরিসর বাড়াতে পারে। হামাস নেতার হত্যার খবর প্রকাশ হওয়ার পর গোল্ডবার্গ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্স-এ একটি পোস্ট করেন। ইসরাইলের আগে ইরানে হামলার প্রসঙ্গ টেনে বলেন, আপনি (ইসরাইল) যদি পারমাণবিক সাইটের পাশে রাডারে আঘাত করতে পারেন, তাহলে আপনি তেহরানের একটি বাড়িতেও আঘাত হানতে পারেন। আয়াতুল্লাহ উন্মুক্ত। মোসাদের সদস্যরাই তেহরানে হানিয়ার অস্থায়ী বাসভবনের তিনটি কামরায় বোমা পেতে রেখেছিলেন। এক প্রতিবেদনে এমনটিই দাবি করেছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম টেলিগ্রাফ। সংবাদমাধ্যম প্রতিবেদন অনুসারে, ইসমাইল হানিয়াকে হত্যার পরিকল্পনা আরও মাস কয়েক আগেই করা হয়েছিল। চলতি বছরের মে মাসে হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় মারা যান ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি। তখন হানিয়া রাইসির জানাজায় যোগ দিতে তেহরানে গিয়েছিলেন। সেসময়েই তাকে হত্যার পরিকল্পনা ছিল মোসাদের।

ইরানের দুই কর্মকর্তা টেলিগ্রাফকে বলেছেন, ইব্রাহিম রাইসির জানাজায় ব্যাপক ভিড় থাকায় সেসময় হানিয়াকে হত্যা করা সম্ভব হয়নি। এর বদলে পরবর্তীতে যখন হানিয়া তেহরান সফর করবেন এবং কোথায় অবস্থান করতে পারেন, সেই তথ্য নিশ্চিত হয়েই ভবনটির তিনটি কামরায় বোমা পেতে রেখে আসেন মোসাদের এজেন্টরা। ইসমাইল হানিয়া যে ভবনে ছিলেন, সেখানকার সিসিটিভি ফুটেজ দেখতে পাওয়া একাধিক কর্মকর্তা নাম না প্রকাশের শর্তে বলেন, বোমা রাখার জন্য মোসাদের এজেন্টরা মাত্র কয়েক মিনিটের ব্যবধানে বেশ কয়েকটি কামরায় প্রবেশ করেন। এসময় তারা তাদের পরিচয় লুকিয়ে রাখার চেষ্টা করেছেন। বোমা সেট করে আসার পরপরই মোসাদ এজেন্টরা ইরান ছেড়ে চলে যান। ওই কর্মকর্তারা আরও জানিয়েছেন, মোসাদের অধিকাংশ সদস্য ইরান ছাড়লেও বেশ কয়েকজন রয়েই যান। এর মধ্যেই ইরানের নতুন প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ানের শপথ অনুষ্ঠানে যোগ দিতে তেহরানে যান হানিয়া। সেসময় রয়ে যাওয়া মোসাদের মধ্য থেকেই কয়েকজন হয়তো বাইরে থেকে হানিয়ার বাসভবনে রাখা বোমার বিস্ফোরণ ঘটান। তাতে হানিয়া ও তার এক দেহরক্ষী মারা যান।

হানিয়ার নিরাপত্তা নিশ্চিতের দায়িত্বে নিয়োজিত ইরানের বিপ্লবী গার্ড বাহিনীর (আইআরজিসি) উচ্চ পর্যায়ের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেছেন, আমরা এখন নিশ্চিত যে মোসাদ ইরানের ইসলামী রেভ্যুলেশনারী গার্ড কর্পসের ‘আনসার আল-মাহদি সুরক্ষা ইউনিট’ থেকে এজেন্ট ভাড়া করেছিল। এই ইউনিটিই ইরানে দেশি-বিদেশি উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত থাকে। আইআরজিসির একটি সূত্র বলেছে, এ ঘটনা কেন্দ্র করে আইআরজিসিতে একে অপরকে দোষ দেওয়ার খেলা শুরু হয়েছে। আইআরজিসি কমান্ডার ইসমাইল কানি নিজ বাহিনী থেকে সদস্যদের বহিষ্কার ও গ্রেফতার করছেন। এমনকি কয়েকজনকে মৃত্যুদণ্ডও দেওয়া হতে পারে বলে শোনা যাচ্ছে। (সূত্র : দ্য টেলিগ্রাফ)

ইসলামীক রেভল্যুশনারি গার্ড (আইআরজিসি)-এর বিবৃতিতে বলা হয়েছে, বাইরে থেকে  ক্ষেপণাস্ত্র ছোঁড়া হয়েছিল। তবে ক্ষেপণাস্ত্রটি কোন জায়গা থেকে ছোঁড়া হয়েছিল এখনো স্পষ্ট নয়। স্কাই নিউজ আরাবিয়া জানিয়েছে, ইরানি সূত্রের ভিত্তিতে হানিয়া যে ভবনে ছিল তার কাছের একটি ভবন থেকে ছোড়া ক্ষেপণাস্ত্রের হামলায় তিনি নিহত হয়েছিলেন। ফাইটার জেট বা সামরিক ড্রোন থেকেও ‘এরিয়াল প্রজেক্টাইল’ উৎক্ষেপণ করা যেতে পারে। কিন্তু এ ধরনের হামলার জন্য সামরিক বিমানগুলোকে সাধারণত প্রতিবেশী দেশগুলোর আকাশসীমা ব্যবহার করতে হবে। তবে অনুমোদন ছাড়া অন্য দেশের আকাশসীমা ব্যবহার করা এবং সীমান্ত এলাকায় অভিযান পরিচালনা করা চ্যালেঞ্জিং হলেও অসম্ভব নয়। ইসফাহানের ৮তম কৌশলগত বিমানঘাঁটিতে ইসরাইল এপ্রিলে হামলা চালায়। তখন এক আমেরিকান কর্মকর্তারা নিশ্চিত করেছিলেন, ইসরাইল বিমান ইরানের সীমানার বাইরে থেকে একটি রাডার সাইটকে লক্ষ্য করে তিনটি ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছে। ইরানি কর্মকর্তারা অবশ্য এই সামরিক ঘাঁটিতে শত্রুর ড্রোন আক্রমণকে দায়ী করেছেন।

ইসরাইলি চ্যানেল ১৪-এর সামরিক সংবাদদাতা হ্যালেল বিটন রোজেনের মতে, হামলাটি একটি ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণের মাধ্যমে করা হয়নি। তবে তার কাছাকাছি আরেকটি অস্ত্র দিয়ে বিস্ফোরণ ঘটানো হয়েছিল। ইসরাইলের অতীতের কার্যক্রম যাচাই করে বলা যায়, দেশটির ইরানের মাটিতে ড্রোন হামলা চালানোর ইতিহাস রয়েছে। ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল রিপোর্ট করেছে, ইসফাহানে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের একটি ওয়ার্কশপ কমপ্লেক্সে ড্রোন হামলা এবং শহরের একটি যুদ্ধাস্ত্র কেন্দ্রে বিস্ফোরণের জন্য ইসরাইল দায়ী। ইরানি কর্মকর্তারা এই হামলাকে একটি ব্যর্থ হামলা বলে অভিহিত করেছেন এবং বলেছেন, এতে অল্প ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। জ্যাকসন ইনস্টিটিউটের গবেষক এবং সাবেক ব্রিটিশ প্যারাট্রুপার মেজর অ্যান্ড্র ফক্সও ইরান ইন্টারন্যাশনাল ইংলিশকে বলেছেন, ইরানের বাইরে থেকে উৎক্ষেপণ করা ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে হামলা চালানো হতে পারে। তার মতে, কাস্পিয়ান সাগর তেহরানের নিকটবর্তী হওয়ায় এই অপারেশনের জন্য একটি উপযুক্ত বিকল্প ছিল। ফক্স তার অভিজ্ঞতা থেকে বলে, এই  জাতীয় ক্ষেপণাস্ত্রগুলো সুনির্দিষ্ট লেজার প্রযুক্তির মাধ্যমে পরিচালিত হয়। ভূমিতে থাকা একজন সেনা লেজার পয়েন্টারটি দিয়ে ঠিক সেই পয়েন্ট লক্ষ্য করে ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়তে পারে এবং ক্ষেপণাস্ত্রটি সেই বিন্দু বরাবরই যাবে। বিশেষজ্ঞ আরও উল্লেখ করেছেন, ইসরাইলের এমন ক্ষেপণাস্ত্র রয়েছে, যেগুলো ওয়ারহেডের গতি এবং ওজন থেকে গতিশক্তি ব্যবহার করার জন্য নকশা করা হয়েছে। একজন ইসরাইলি গোয়েন্দা ও নিরাপত্তা বিশ্লেষক রনেন সলোমন বাকু তেল আবিবের নৈকট্য এবং ইরানের সঙ্গে আজারবাইজানের সীমান্তের কথা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, এই অঞ্চলে স্বল্প দূরত্বের কারণে আক্রমণের জন্য আজারবাইজানীয় আকাশসীমা ব্যবহার করার সম্ভাবনা বেশি।

ইসমাইল হানিয়ার জীবন ও সংগ্রাম

ইসমাইল হানিয়া হামাসের একজন শীর্ষস্থানীয় রাজনৈতিক নেতা এবং বিশ্ব ইসলামী আন্দোলনের একজন শ্রেষ্ঠ দা’য়ী। ২০২১ সালের আগস্টের শুরুতে হামাসের প্রধান হিসেবে দ্বিতীয় মেয়াদের জন্য পুনর্র্নিবাচিত হয়েছিলেন ইসমাইল হানিয়া। এর মধ্য দিয়ে হামাস ও ফিলিস্তিনের রাজনীতিতে তাঁর প্রভাব ও নিয়ন্ত্রণ আরও মজবুত হয়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকগণ। ইসমাইল হানিয়া ফিলিস্তিনিদের চোখে ছিলেন স্বাধীনতা আন্দোলনের মহানায়ক, অপরদিকে পশ্চিমাদের চোখে ছিলেন সন্ত্রাসী। হামাসের প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই সক্রিয় ছিলেন ইসমাইল হানিয়া। ১৯৪৮ সালে অবৈধ দখলদার ইসরাইল প্রতিষ্ঠা হলে, সে সময় সন্ত্রাসী ইহুদীদের বর্বর হামলার মুখে ইসমাইল হানিয়ার পরিবার ফিলিস্তিনের আল মাজদাল আসকালান থেকে পালিয়ে আসতে বাধ্য হয়। ফিলিস্তিনের আসকালান শহরই এখন দক্ষিণ ইসরাইলের আশকেলন। ইসমাইল হানিয়ার পরিবার আর তাদের পৈত্রিক ভূমিতে ফিরে যেতে পারেননি। ১৯৬২ সালে গাজার আল-শাতি শরণার্থী শিবিরে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। সেই হিসেবে তার জন্মের ১৫ বছর আগে অবৈধ দখলদার ইসরাইল রাষ্ট্রের জন্ম। ইসমাইল হানিয়ার পুরো নাম ‘ইসমাইল আবদুস সালাম আহমেদ হানিয়া’ বা Ismail Abdel Salam Ahmed Haniyeh.  ইসমাইল হানিয়া গাজার আল-আজহার ইনস্টিটিউটে তার মাধ্যমিক শিক্ষা গ্রহণ করেন। তরুণ বয়সে হানিয়া গাজা ইসলামীক বিশ্ববিদ্যালয়ে মুসলিম ব্রাদারহুডের ছাত্র শাখার সদস্য ছিলেন। প্রথম ইন্তিফাদার সময় হানিয়াকে বেশ কয়েকবার আটক করে কারাদণ্ড দিয়েছে ইসরাইল। ১৯৮৪ সালে ছাত্র থাকাকালীন ইসলামী ছাত্র ব্লকে যোগদান করেন হানিয়া। ১৯৮৫ সালে তিনি মুসলিম ব্রাদারহুডের প্রতিনিধি ছাত্র কাউন্সিলের প্রধান ছিলেন। ইসলামীক এসোসিয়েশন ফুটবল দলে তিনি মিডফিল্ডার হিসেবে খেলতেন। ১৯৮৭ সালে গাজার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আরবি সাহিত্যে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। প্রথম ইন্তিফাদা শুরু হলে তিনি এতে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। ইসরাইল বিরোধী জনপ্রিয় নেতা এবং হামাসের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ছিলেন ইসমাইল হানিয়া। তিনি ১৯৮৮ সালে ছয় মাস ইসরাইলের কারাগারে বন্দি ছিলেন এবং ১৯৮৯ সালের শুরু থেকে আরও তিন বছর কারাগারে বন্দি ছিলেন। ১৯৯৩ সালে পিএলও ইসরাইলের সাথে অসলো চুক্তি স্বাক্ষর করার পর, হানিয়া গাজায় ফিরে এসে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। এছাড়াও নির্বাসনে থাকার পর তিনি গাজায় ফিরে আসেন এবং ১৯৯৭ সালে হামাস আন্দোলনের আধ্যাত্মিক নেতা শেখ আহমেদ ইয়াসিনের অফিসের প্রধান হিসেবে নিযুক্ত হন, যা তার অবস্থানকে আরও শক্তিশালী করে। তিনি ২০০১ সালে হামাসের তৃতীয় সর্বোচ্চ দায়িত্বশীল হিসেবে নির্বাচিত হন। ২০০৬ সালে ফিলিস্তিনের নির্বাচনে বিপুল ভোটে জয়লাভ করে ইসমাইল হানিয়া প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হয়। ২০০৬ সালে নির্বাচনে হামাসের বিপুল জয়লাভের পর, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় হামাসের নেতৃত্বের প্রতি প্রতিক্রিয়া জানিয়ে ফিলিস্তিনি অথরিটি-PA-কে সাহায্য বন্ধ করে দেয়। ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্ট আব্বাস তাকে বরখাস্ত করলেও গাজার জনগণ তাকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে সমর্থন দেন। ২০০৭ সালে গাজার পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নেয় হামাস। হামাস নেতারা ২০১৭ সালে ১৫ সদস্যের পলিটব্যুরোর প্রধান হিসেবে তাকে নির্বাচিত করার আগ পর্যন্ত হানিয়া গাজার ডি ফ্যাক্টো নেতা ছিলেন (২০০৭-২০১৭)। তখন তিনি খালিদ মিশালের স্থলাভিষিক্ত হন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র  তাকে ২০১৮ সালে ‘বিশেষভাবে মনোনীত বৈশ্বিক সন্ত্রাসী’ হিসেবে  চিহ্নিত করে। তিনি ২০১৯ সালে গাজা ছেড়ে কাতারে একটি অফিস স্থাপন করেন। হানিয়া ২০২১ সালে আবারও হামাসের পলিটব্যুরোর প্রধান নির্বাচিত হন।

ফিলিস্তিনি লেখক ও রাজনীতি বিশ্লেষক হুসাম আন দাজানি বলেন, গাজার রাজনীতিতে ভারসাম্য এনেছেন হানিয়া। তিনি একজন সহানুভূতিশীল মানুষ, যিনি শান্তি, ঐক্য ও স্থিতিশীলতা সমর্থন করেন এবং তাঁর স্বপ্ন ছিল ১৯৬৭ সালের মানচিত্রের আলোকে ইসরাইলের দখলদার মুক্ত স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার। বিপুল ভোটে নির্বাচিত জনপ্রিয় নেতা ইসমাইল হানিয়ার উত্থান ও গাজায় হামাসের নিয়ন্ত্রণ ভালো চোখে দেখেনি পশ্চিমারা। যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) তাঁকে ও হামাসকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে ঘোষণা দেয়। এর মধ্যেই হানিয়ার হাত ধরে ইসরাইলের সঙ্গে কয়েক দফা সংঘাতে জড়ায় হামাস। দূরত্ব বাড়ে পশ্চিমাদের সঙ্গেও। তবে পশ্চিম তীর ও গাজা উপত্যকায় হামাসের প্রভাব রয়ে যায়। সংগঠনে প্রভাব বাড়ে হানিয়ার। ২০১৩ সালের এপ্রিলে হানিয়া হামাসের উপপ্রধান হন। এরপর হামাসের প্রধান হিসেবে ইসমাইল হানিয়া ২০১৭ সালের ৬ মে খালিদ মিশালের স্থলাভিষিক্ত হন। ২০১৮ সালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প হানিয়াকে ‘বিশেষ ট্যাগযুক্ত বৈশ্বিক সন্ত্রাসী’ হিসেবে ঘোষণা দেন। 

ইসমাইল হানিয়াকে বেশ কয়েকবার হত্যার চেষ্টা হয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, হানিয়াকে হত্যাচেষ্টার ঘটনাগুলোর পেছনে যেমন ইসরাইল জড়িত, তেমনি জড়িত ফাতাহ। ব্যক্তিগত জীবনে হানিয়া ১৩ সন্তানের জনক। তাঁর পরিবার ২০০৯ সাল পর্যন্ত গাজার উত্তরাঞ্চলের আল শাতি শরণার্থীশিবিরে ছিল। এরপর গাজার রিমাল এলাকায় জমি কিনে থিতু হয় হানিয়া পরিবার। তবে ইসমাইল হানিয়া কখন কোথায় থাকেন, সেটার সুষ্পষ্ট তথ্য পাওয়া কঠিন। মনে করা হয়, নিরাপত্তার জন্য তিনি তাঁর অবস্থানের কথা আগাম জানান না। ফিলিস্তিনের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পরপরই ২০০৬ সালে প্রথম বিদেশ সফরে তিনি ইরানে গিয়েছিলেন। ওই সময় ইসরাইল সম্পর্কে তিনি বলেন, আমরা কখনোই দখলদার ইহুদী সরকারকে স্বীকৃতি দেবো না। মুসলমানদের প্রথম কিবলা জেরুজালেম তথা বাইতুল মুকাদদাস মুক্ত করার আগপর্যন্ত সংগ্রাম চালিয়ে যাব। 

১৯৮৭ সালে যখন ইসলামপন্থী দল হামাস গঠিত হয়; তখন ইসমাইল হানিয়া তার কনিষ্ঠ প্রতিষ্ঠাতা সদস্যদের মধ্যে একজন ছিলেন। গোষ্ঠীর আধ্যাত্মিক নেতা শায়খ আহমাদ ইয়াসিনের সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তুলেছিলেন। ইয়াসিনের সাথে সম্পর্কের কারণে হামাসে তার খ্যাতি বৃদ্ধি পায়। ১৯৮৮ সালে সন্ত্রাসী রাষ্ট্র ইসরাইলি বাহিনী ইসমাইল হানিয়াকে গ্রেপ্তার করে এবং প্রথম ইন্তিফাদায় (ইসরাইলি অবৈধ দখলের বিরুদ্ধে প্রথম গণবিদ্রোহ) অংশগ্রহণের জন্য ছয় মাসের জন্য কারারুদ্ধ হয়। ১৯৮৯ সালে তিনি আবার গ্রেফতার হন এবং ১৯৯২ সালে ইসরাইল তাঁকে আব্দেল আজিজ আল-রানতিসি, মাহমুদ জাহহার ও আরো ৪০০ জন ইসলামপন্থীর সাথে দক্ষিণ লেবাননে নির্বাসন না দেওয়া পর্যন্ত কারাগারেই বন্দী ছিলেন। তারা দক্ষিণ লেবাননের মার্জ আল-জহুরে এক বছর অবস্থান করেছিলেন। বিবিসির মতে, এখানে হামাস যথেষ্ট পরিমাণে মিডিয়ার দৃষ্টি আকর্ষণ করে এবং বিশ্বের কাছে পরিচিত হয়ে ওঠে। এক বছর পর অসলো চুক্তি হলে ১৯৯৩ সালে ইসমাইল হানিয়া গাজায় ফিরে আসেন। দেশে ফিরে তিনি ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিন নিযুক্ত হন। হামাসে ইসমাইল হানিয়া ১৯৯৭ সালে যখন ইয়াসিনের ব্যক্তিগত সচিব হন তখন নেতৃত্বের শেকড় গড়ে ওঠে। ইয়াসিনের বাকি জীবনের জন্য তিনি আধ্যাত্মিক নেতার ঘনিষ্ঠ আস্থাভাজন ছিলেন। 

ইসমাইল হানিয়ার সাফল্য 

জেল কিংবা একাধিক হামলায় হানিয়াকে দমানো সম্ভব হয়নি। অনেকের মতে, তিনি ফিলিস্তিনিদের মুক্তির দূত। দেশি-বিদেশি বাধার মুখেও এক দশকের বেশি সময় গাজার নিয়ন্ত্রণ ধরে রেখেছেন তিনি। ইসরাইলের বিরুদ্ধে ফিলিস্তিনিদের মুক্তির সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছেন। গড়ে তুলেছেন হামাসের সশস্ত্র বাহিনী। হামাসের রাজনৈতিক শাখার ভিত্তি মজবুত করেছেন। ইরান, তুরস্ক, লেবাননের হিজবুল্লাহর মতো মিত্রদের কাছে নিজের গ্রহণযোগ্যতা ধরে রেখেছেন। গাজায় স্বঘোষিত সরকার চালাচ্ছেন হানিয়া। যদিও জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক মহলে তাঁর সরকারের স্বীকৃতি ছিল না। 

গাজার রাজনীতি বিশ্লেষক ইবরাহিম মাধৌন বলেছিলেন, “আগামী দিনগুলোয় হানিয়াকে মিশর, কাতার ও সৌদি আরবের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদারে কাজ করতে হবে।’’ হানিয়ার মৃত্যুর পর আল কাসাস ব্রিগ্রেড এক বিবৃতিতে বলেন, ‘‘আমাদের নেতা ইসমাইল হানিয়ার রক্ত আজ গাজার শিশু, নারী, যুবক ও প্রবীণদের রক্তে এবং আমাদের জনগণ ও যোদ্ধাদের রক্তের সঙ্গে মিশে আছে। এটা স্পষ্ট করে যে হামাস ও এর নেতারা যুদ্ধের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছেন, একেবারেই জনগণের পাশাপাশি। ইসমাইল হানিয়ার মূল্যবান রক্ত কিছুতেই বৃথা যাবে না, বরং আলোকিত করবে মুক্তির পথ এবং স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পথ। গাজা, পশ্চিম তীর এবং এর সীমানার মধ্যে, মহান আল্লাহর ইচ্ছায় আমাদের যোদ্ধারা যেখানেই পৌঁছাবে, সেখানেই শত্রুরা তাদের রক্ত দিয়ে এ আগ্রাসনের মূল্য দেবে। ইসমাইল হানিয়া গাজার জনগণের জন্য স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করতে অসংখ্য হাসপাতাল ও ক্লিনিক স্থাপন করে জনগণের চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করেন। গাজার জনগণের জন্য পার্ক নির্মাণ, রাস্তা-ঘাট নির্মাণ, নতুন নতুন আবাসন স্থাপন, বেকার সমস্যা সমাধান, বিদ্যুৎ সমস্যার সমাধান, ট্যানেল নির্মাণ, ফ্রি রুটি ও স্যুপের দোকান স্থাপন, অসংখ্য মসজিদ, মক্তব, স্কুল ও কলেজ স্থাপন করেন হানিয়ার সরকার।  

যুক্তরাষ্ট্রের সন্ত্রাসী তালিকায় হামাস নেতা ইসমাইল হানিয়া

ফিলিস্তিনের ইসলামী প্রতিরোধ আন্দোলন হামাসের রাজনৈতিক শাখার নেতা ইসমাইল হানিয়াকে বিশ্ব সন্ত্রাসী তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করেছে যুক্তরাষ্ট্র। ৩১ জানুয়ারি ২০১৮ সালের বুধবার দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, হামাসের সামরিক শাখার সঙ্গে হানিয়ার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। এছাড়াও তিনি ইসরাইলের বেসামরিক লোকজনের বিরুদ্ধে সশস্ত্র সংগ্রামের প্রস্তাবক। (আল-জাজিরা ও বিবিসি) 

হানিয়ার মৃত্যুর জন্য ইসরাইলকে ‘সম্পূর্ণ দায়ী’ করেছে ওআইসি

গত সপ্তাহে ইরানের রাজধানী তেহরানে নিহত হন হামাসের রাজনৈতিক প্রধান ইসমাইল হানিয়া। তাকে হত্যার জন্য ইসরাইলকে দায়ী করেছে ইসলামিক সহযোগিতা সংস্থা (ওআইসি)। এই হত্যাকাণ্ডের প্রতিশোধ নেওয়ার অঙ্গীকার করেছে সংস্থাটি। গত ৩১ জুলাই রাজধানী তেহরানে নিজ বাসভবনে এক ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় নিহত হন ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাসের প্রধান ইসমাইল হানিয়া। একই হামলায় তার একজন দেহরক্ষীও নিহত হন। এখন পর্যন্ত ওই হামলার দায় কেউ স্বীকার না করলেও ইরান, হিজবুল্লাহ ও হামাস ইসরাইলকেই দায়ী করেছে। তবে ইসরাইল এখন পর্যন্ত এই হামলার ব্যাপারে আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো মন্তব্য করেনি। ওআইসির সদস্য দেশ ৫৭টি। স্থানীয় সময় বুধবার (৭ আগস্ট) সৌদি আরবে সংস্থাটির একটি অসাধারণ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, এই জঘন্য হামলার জন্য অবৈধ দখলদার ইসরাইল সম্পূর্ণরূপে দায়ী। তারা এভাবে হামলা চালিয়ে হানিয়াকে হত্যা করে ইরানের সার্বভৌমত্বের ‌‘গুরুতর লঙ্ঘন’ করেছে। এদিকে হানিয়াকে হত্যায় ইসরাইলকে অভিযুক্ত করেছে ইরান ও দেশটির মিত্ররা। এই হত্যাকাণ্ডের প্রতিশোধ নিতে আলোচনায় বসার কথাও জানিয়েছেন তারা। জানা গেছে, এ বিষয়ে আলোচনা করতে ইরানের শীর্ষ কর্মকর্তারা লেবানন, ইরাক ও ইয়েমেনের মিত্রদের সঙ্গে বৈঠক করবেন।

বর্তমানে ওআইসির নেতৃত্ব দিচ্ছে গাম্বিয়া। দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী মামাদু টাঙ্গারা বলেছেন, হানিয়ার ‘জঘন্য’ হত্যাকাণ্ড এবং গাজায় চলমান যুদ্ধ একটি আঞ্চলিক সংঘাতের দিকে নিয়ে যেতে পারে। তিনি বলেন, ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানের মাটিতে একজন রাজনৈতিক নেতাকে হত্যার মাধ্যমে দেশটির সার্বভৌমত্ব এবং আঞ্চলিক অখণ্ডতা লঙ্ঘন করা হয়েছে। এই জঘন্য হত্যাকাণ্ডের মাধ্যমে বিদ্যমান উত্তেজনা আরও বাড়তে পারে এবং এটা ওই অঞ্চলকে বিস্তৃত সংঘাতের দিকে নিয়ে যেতে পারে। সৌদি উপকূলীয় শহর জেদ্দায় ওআইসির বৈঠকের আহ্বান জানায় ইরান এবং ফিলিস্তিন। এই সংস্থাটি নিজেকে মুসলিম বিশ্বের সম্মিলিত কণ্ঠস্বর হিসেবে উল্লেখ করে থাকে। ওই বৈঠকের আয়োজক দেশ সৌদি আরব আরও বলেছে যে, হানিয়ার হত্যাকাণ্ডের মাধ্যমে ইরানের সার্বভৌমত্বের ‘স্পষ্ট লঙ্ঘন’ করা হয়েছে। সৌদির উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়ালিদ আল-খেরেজি বলেছেন, তার দেশ ‘যে-কোনো রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্ব লঙ্ঘন বা যে-কোনো দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ’ করার বিষয়টি প্রত্যাখ্যান করে।

কাতারে চিরনিদ্রায় শায়িত ইসমাইল হানিয়া

কাতারে চিরনিদ্রায় শায়িত হলেন হামাস প্রধান ইসমাইল হানিয়া। শুক্রবার (২ আগস্ট) কাতারের সবচেয়ে বড় মসজিদ ইমাম মুহাম্মদ বিন আব্দুল ওয়াহাবের জানাজা শেষে লুসাইল রয়্যাল কবরস্থানে তার মরদেহ দাফন করা হয়। হামাসের এসব নেতা ১ আগস্ট বৃহস্পতিবার দোহা বিমানবন্দরের টার্মাকে হানিয়াকে বহনকারী কফিন গ্রহণ করতে আসেন। ইসমাইল হানিয়ার জানাজায় হামাসের উচ্চপদস্থ নেতারা অংশ নেন। তাদের মধ্যে ছিলেন খালিদ মিশালও, যাকে হানিয়ার উত্তরসূরী বলে ধারণা করা হচ্ছে। 

হানিয়ার পর হামাসের নতুন প্রধান ইয়াহিয়া সিনওয়ার

গাজায় হামাসের সামরিক শাখার প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসা ইয়াহিয়া সিনওয়ারকে হামাসের রাজনৈতিক শাখার নতুন প্রধান হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। গত সপ্তাহে তেহরানে ইসমাইল হানিয়া গুপ্তহত্যার শিকার হলে এই ঘোষণা আসে।

ইসমাইল হানিয়ার মৃত্যুর পর ইরান প্রতিশোধের অঙ্গীকার করেছে। গত ৩১ জুলাই হানিয়ার ওপর হামলার পরও ইসরাইল কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি। ইয়াহিয়া সিনওয়ার এখন অজ্ঞাত স্থান থেকে তার সহকর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করবেন এবং ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাসের দৈনন্দিন কার্যক্রম পরিচালনা করবেন বলে আশা করা হচ্ছে। সিনওয়ারকে হামাসের নতুন প্রধান হিসেবে ঘোষণা করার মাধ্যমে ইসরাইলের বিরুদ্ধে তার কঠোর অবস্থানের বার্তা দিয়েছে হামাস। তবে তার বর্তমান অবস্থান থেকে তিনি কতটা কার্যকরভাবে যোগাযোগ রক্ষা করতে পারবেন এবং গাজায় যুদ্ধবিরতি প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা রাখতে পারবেন, তা এখনো অস্পষ্ট।

১৯৬২ সালে গাজার খান ইউনিস শহরে জন্মগ্রহণ করা সিনওয়ারকে হামাসের সবচেয়ে অনমনীয় নেতাদের একজন হিসেবে বিবেচনা করা হয়। আশির দশকের শুরুর দিকে গাজার ইসলামিক ইউনিভার্সিটিতে সক্রিয় ভূমিকা রাখার জন্য তাঁকে বারবার গ্রেফতার করা হয়। ১৯৮৭ সালে হামাস প্রতিষ্ঠার পরপরই তিনি সংগঠনের নেতৃত্বে আসেন এবং পরের বছরই ইসরাইলি বাহিনী তাকে গ্রেফতার করে চার দফা যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়। দীর্ঘ ২৩ বছর কারাগারে কাটিয়ে ২০১১ সালে এক বন্দিবিনিময় চুক্তির মাধ্যমে মুক্তি পান সিনওয়ার। মুক্তি পাওয়ার পর তিনি হামাসের শীর্ষ পদে ফিরে আসেন এবং ২০১২ সালে সংগঠনটির রাজনৈতিক ব্যুরোর সদস্য নির্বাচিত হন। ২০১৭ সালে তিনি হামাসের গাজা শাখার প্রধান হন এবং ইসমাইল হানিয়ার স্থলাভিষিক্ত হন।

ইসরাইলের বিরুদ্ধে হামাসের হামলার কৌশল সম্পর্কে জানতে চাইলে সিনওয়ার বলেছিলেন, ‘ফিলিস্তিনিরা তাদের কাছে থাকা অবলম্বন দিয়েই লড়াই করছেন।’ তিনি অভিযোগ করেন, অত্যাধুনিক অস্ত্রশস্ত্র থাকা সত্ত্বেও ইসরাইল বেসামরিক ফিলিস্তিনিদের নির্বিচারে হত্যা করছে। সিনওয়ার আরও বলেছিলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে আমরা শান্তিপূর্ণ উপায়ে ও জনসমর্থনভিত্তিক প্রতিরোধ গড়ে তোলার চেষ্টা করছি। আমরা আশা করছি, গোটা বিশ্ব, মুক্ত মানুষেরা ও আন্তর্জাতিক সংগঠনগুলো আমাদের জনগণের পাশে দাঁড়াবে এবং আমাদের জনগণের বিরুদ্ধে দখলদার শক্তির (ইসরাইল) অপরাধ ও নৃশংসতা বন্ধ করবে। দুঃখজনকভাবে, বিশ্ব নীরব দাঁড়িয়ে দেখেছে।

লেখক : প্রাবন্ধিক ও গবেষক

Ads 728x90