নচ্ছার আক্কেল দাঁত!

 

নচ্ছার আক্কেল দাঁত!


আক্কেল দাঁত ওঠার সময় মাড়িতে প্রচণ্ড ব্যথা হয়
আক্কেল দাঁত ওঠার সময় মাড়িতে প্রচণ্ড ব্যথা হয়

আক্কেল দাঁত ওঠে স্বাভাবিক নিয়মে। এসব দাঁত না ওঠাই বরং অস্বাভাবিক। মুখের ভেতরের দিকে দাঁতের পাটির একদম শেষের দাঁতগুলো ‘মাড়ির দাঁত’ নামে পরিচিত। ওপরের বা নিচের মাড়ির দাঁতের শেষ চারটিকে বলা হয় আক্কেল দাঁত। ইংরেজিতে বলে উইজডোম টুথ। তৃতীয় মোলার দাঁত নামেও পরিচিত।

সাধারণত ১৭ থেকে ২৫ বছর বয়সে এসব দাঁত ওঠে। কারও কারও ক্ষেত্রে আরও পরেও উঠতে পারে। মাড়ির স্থায়ী ৩২টি দাঁতের মধ্যে সবার শেষে ওঠে এগুলো। অর্থাৎ, একটু বয়স হলে দেখা মেলে আক্কেল দাঁতের। সে জন্যই অমন নাম ইংরেজিতে—উইজডোম টুথ। সেটাই বাংলায় এসে হয়ে গেছে আক্কেল দাঁত। যেন বোঝানো হচ্ছে, আক্কেল দাঁত না উঠলে মানুষের জ্ঞান পরিপূর্ণ হয় না। তবে জ্ঞানের সঙ্গে আক্কেল দাঁতের সত্যি সত্যি কোনো সম্পর্ক নেই। আবার আক্কেল দাঁত সবার ওঠেও না। তাই বলে তাঁরা জ্ঞানী নন, এমন নয় কিন্তু!   

সত্যি বলতে, আক্কেল দাঁত আমাদের জন্য তেমন গুরুত্বপূর্ণ নয়। এসব দাঁত কাজে লাগানোর সেরকম উপায়ও নেই। তবে আমাদের পূর্বপূরুষদের জন্য খুব দরকারি ছিল। কারণ আদিকালে মানুষ আজকের মতো আগুনের ব্যবহার জানত না। রান্না করে খাওয়ার প্রশ্নই ওঠে না। তা ছাড়া খাবার কাটার জন্যও তাদের কাছে ছুরি বা এ জাতীয় কিছু ছিল না। বুঝতেই পারছেন, প্রাগৈতিহাসিক কালের কথা বলা হচ্ছে। সে কালে তাই খাবার অনেক বেশি চিবোতে হতো। এ জন্য প্রয়োজন ছিল শক্ত চোয়াল ও দাঁত। তাই আদিযুগের মানুষের জন্য আক্কেল দাঁত ছিল গুরুত্বপূর্ণ।

তাদের চোয়ালও ছিল এখনকার মানুষদের চেয়ে বেশি প্রশস্ত। ফলে আক্কেল দাঁত উঠতে কোনো সমস্যা হতো না। আবার দিনের পর দিন এ ধরনের শক্ত খাবার খেয়ে তাদের দাঁত দ্রুত পড়ে যেত। সেই ফাঁকা জায়াগায় অনায়াসে জায়গা করে নিত উইজডোম টুথ। 

এখন আমাদের খাদ্যাভাস বদলে গেছে। তা ছাড়া আমরা বেশির ভাগ খাবার খাই রান্না করে। কাঁচা খাবার বলতে মূলত ফলমূল। কালের আবর্তে তাই আমাদের চোয়ালের হাড়গুলো আগের তুলনায় ছোট হয়ে গেছে। ৩২টি দাঁত পাটিতে ঠিকভাবে জায়গা করে নিতে পারে না। তাই পর্যাপ্ত জায়গা পায় না আক্কেল দাঁত। কিন্তু বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এগুলো ঠেলে ওপরে আসতে চায়। তখন অন্য দাঁতগুলো কষ্টে-সৃষ্টে জায়গা ফাঁকা করে দেয়। পর্যাপ্ত জায়গা না পেলে বাঁকা হয়ে উঠে যায় আক্কেল দাঁত। সেটুকু জায়গাও না পেলে সামান্য অংশ হলেও মাথা জাগিয়ে নিজের অস্তিত্ব জানান দেয়। ফলে প্রচণ্ড ব্যথা লাগে। অনেক সময় মুখ ফুলে উঠতে পারে। এতে খাবার খেতেও সমস্যা হয়।

পর্যাপ্ত জায়গা না পেলে আক্কেল দাঁত বাঁকা হয়ে ওঠে
পর্যাপ্ত জায়গা না পেলে আক্কেল দাঁত বাঁকা হয়ে ওঠে
ফাইল ছবি

বর্তমানে প্রায় ২৫ শতাংশ মানুষের আক্কেল দাঁত ওঠে না। মানে, প্রতি চারজনের একজন আক্কেল দাঁতের যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পায়। তবে কেন এই এক-চতুর্থাংশ মানুষের আক্কেল দাঁত ওঠে না, সে বিষয়ে বিজ্ঞানীরা এখনও নিশ্চিত নন। হয়তো বাবা-মার কাছ থেকে উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া জিনের সঙ্গে এর সম্পর্ক থাকতে পারে। অনেক গবেষক মনে করেন, যাদের আক্কেল দাঁত ওঠে না, তাদের চোয়াল তুলনামূলক ছোট। তাদের আক্কেল দাঁতগুলো চোয়ালের মাড়িতে আটকে থাকতে পারে। সাধারণত ওপরের চোয়াল থেকে নিচের চোয়ালে আক্কেল দাঁত বেশি ওঠে। তাই এ নচ্ছার দাঁত ঠিকভাবে না উঠে সামান্য অংশ বা বাঁকা হয়ে উঠলে বিপদে পড়তে পারেন। মুখের মাংশপেশী কেটে যাওয়া, দাঁতক্ষয় কিংবা মাড়িতে সমস্যা হতে পারে। 

সে ক্ষেত্রে আক্কেল দাঁত উঠিয়ে ফেলার পরামর্শ দেন গবেষকেরা। কিন্তু ঠিকভাবে দাঁত উঠলে কোনো সমস্যা নেই। তবে আক্কেল দাঁত অনেক ক্ষেত্রে থাকার চেয়ে না থাকাই ভালো। কারণ দাঁত ব্রাশ করার সময় আক্কেল দাঁত পর্যন্ত সাধারণত ব্রাশ পৌঁছে না। এতে অনেকের দাঁতে জমতে পারে ক্যাভিটি (খাবার জমে তৈরি পাথরের মতো ময়লা)। ক্যাভিটি থেকে হতে পারে ইনফেকশন। এ দাঁতের কারণে মুখের ভেতরে আলসার বা ওই দাঁত সংলগ্ন টিস্যুতেও সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে। তাই আক্কেল দাঁত ফেলে দেওয়াই সমীচীন মনে করেন অনেক গবেষক। 



সূত্র: সায়েন্স অ্যালার্ট, লাইভ সায়েন্স ও পপুলার সায়েন্স

Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.