রক্ত পরীক্ষায় জানা যাবে, শরীরের কোন অঙ্গ রয়েছে ঝুঁকিতে

 

রক্ত পরীক্ষায় জানা যাবে, শরীরের কোন অঙ্গ রয়েছে ঝুঁকিতে


সাম্প্রতিক এক গবেষণা বলছে, শরীরের কোন অঙ্গ দ্রুত অকেজো হয়ে যাচ্ছে, তা আগেই জানা সম্ভব
সাম্প্রতিক এক গবেষণা বলছে, শরীরের কোন অঙ্গ দ্রুত অকেজো হয়ে যাচ্ছে, তা আগেই জানা সম্ভবছবি: স্ট্যানফোর্ড মেডিসিন

সাম্প্রতিক এক গবেষণা বলছে, শরীরের কোন অঙ্গ দ্রুত অকেজো হয়ে যাচ্ছে, তা আগেই জানা সম্ভব। সাধারণ এক রক্ত পরীক্ষা করেই জানা যেতে পারে এসব তথ্য। গত ৬ ডিসেম্বর খ্যাতনামা বিজ্ঞান জার্নাল নেচার-এ গবেষণাটি প্রকাশিত হয়েছে। গবেষণা করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন বিভাগের গবেষকেরা। তাঁদের মতে, এর ফলে রোগ হওয়ার আগেই করা যাবে সমস্যার সমাধান। এ জন্য গবেষকেরা ৫ হাজার ৬৭৮ জনের ওপর জরিপ চালিয়েছেন।

সাধারণত মানুষের বিভিন্ন অঙ্গের বয়স বিভিন্ন রকম হয়। একই বয়সের কয়েকজন মানুষের মধ্যে কারো নির্দিষ্ট একটি অঙ্গের বয়স অন্যদের তুলনায় দ্রুত বাড়লে বুঝতে হবে, ওই ব্যক্তির নির্দিষ্ট অঙ্গের রোগাক্রান্ত হওয়া ও মৃত্যুর ঝুঁকি বেশি। গবেষণায় দেখা গেছে, ৫০ বছর বা তার বেশি বয়সের প্রতি ৫ জন স্বাস্থ্যবান প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের মধ্যে একজনের কমপক্ষে একটি অঙ্গের বয়স অন্যদের তুলনায় দ্রুত বাড়ে। এই গবেষণার জ্যেষ্ঠ লেখক ও স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের নিউরোলজির অধ্যাপক টনি ওয়িস-কোরে মনে করেন, এই গবেষণা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে মানুষের স্বাস্থ্যঝুঁকি কমাতে। তাঁর গবেষণাগারের দুই শিক্ষার্থী—হ্যামিল্টন ওহ এবং জ্যারড রুটলেজ এই গবেষণার প্রধান গবেষক। টনির ভাষ্যে, ‘আমরা যেকোনো সুস্থ (তবে অসুস্থতা ভেতরে সুপ্ত থাকতে পারে, এমন) মানুষের সব অঙ্গের জৈবিক বয়স অনুমান করতে পারি। এর মাধ্যমে সেই ব্যক্তির কোনো নির্দিষ্ট অঙ্গে কোনো রোগ হতে পারে কি না, তার পূর্বাভাস পাওয়া সম্ভব।’


জৈবিক বয়স মানে, একজন মানুষ কত বছর বেঁচে আছেন, তা নয়। বরং কোনো অঙ্গের নির্দিষ্ট কিছু বায়োমার্কার বা বিশেষ জৈবচিহ্ন, যেমন বিভিন্ন ধরনের প্রোটিন, দেখে বোঝা যায়, মানুষটির ওই অঙ্গের জৈবিক বয়স কত। গবেষকেরা এই গবেষণায় মানবদেহের গুরুত্বপূর্ণ ১১টি অঙ্গ, অঙ্গ ব্যবস্থা ও টিস্যু নিয়ে কাজ করেছেন, যেগুলোর বয়স তুলনামূলক দ্রুত বাড়ে। সেগুলো হলো হৃৎপিণ্ড, চর্বি, ফুসফুস, ইমিউন সিস্টেম বা রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা, কিডনি, লিভার, পেশী, অগ্ন্যাশয়, মস্তিষ্ক, ভাস্কুলার টিস্যু ও অন্ত্র।

টনি বলেন, ‘৫০ বছর বা এরচেয়ে বয়স্ক ১৮.৪ শতাংশ মানুষের অন্তত একটি অঙ্গ দ্রুত বাড়ে। তাদের ওই নির্দিষ্ট অঙ্গটি পরবর্তী ১৫ বছরের মধ্যে অকেজো হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা প্রবল।’

গবেষণায় আরও দেখা গেছে, প্রতি ৬০ জন মানুষের মধ্যে মাত্র একজনের একসঙ্গে দুটি অঙ্গের বয়স দ্রুত বাড়ে। এ ধরনের মানুষের আর কোনো অঙ্গ দ্রুত বৃদ্ধির ঝুঁকিতে না থাকলেও তাঁদের মৃত্যু হার বেড়ে যায় ৬.৫ শতাংশ। 

বিশেষ অ্যালগরিদম ব্যবহার করে পরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে মানুষের গুরুত্বপূর্ণ ১১ অঙ্গের বয়স
বিশেষ অ্যালগরিদম ব্যবহার করে পরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে মানুষের গুরুত্বপূর্ণ ১১ অঙ্গের বয়স
ছবি: সাইটেক ডেইলি

এ ছাড়াও তাঁরা ২০ থেকে ৯০ বছর বয়সী প্রায় ১ হাজার ৪০০ সুস্থ মানুষের রক্তের প্রায় ৫ হাজার প্রোটিনের মাত্রা পরীক্ষা করেছেন। এ জন্য একটি বিশেষ প্রযুক্তি ও সুনির্দিষ্ট অ্যালগরিদম ব্যবহার করা হয়েছে। দেখা গেছে, পরিমাপকৃত প্রোটিনগুলো মানুষের প্রায় এক হাজার নির্দিষ্ট অঙ্গ থেকে এসেছে। এগুলোর কারণে এসব অঙ্গের বয়স দ্রুত বাড়ে, রোগ ও মৃত্যুর ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়। বেশির ভাগ প্রোটিনই জীবদ্দশার মাঝামাঝি থেকে শেষ পর্যায়ে ছিল। তাঁরা এমন কিছু প্রোটিনও শনাক্ত করেছেন, যেগুলোর পেছনের কারিগর জিনগুলো অন্য যে কোনো অঙ্গের চেয়ে চারগুণ বেশি সক্রিয়। এখানে বলে রাখা প্রয়োজন, মানুষের ডিএনএতে জিন থাকে। এই জিনগুলোই প্রোটিনের গঠন ও কাজের নির্দেশনা দেয়। একদম এককথায়, এই জিনগুলোই প্রোটিনগুলোকে চালিত করে।

পরিমাপকৃত প্রায় ৫ হাজার প্রোটিনের মাত্রার ওপর ভিত্তি করে, মেশিন লার্নিং অ্যালগরিদম ব্যবহার করে মানুষের বয়স অনুমান করা হয়েছে গবেষণাটির পরের ধাপে। অ্যালগরিদমটি এমন কিছু প্রোটিন নির্বাচন করেছে, যেগুলো মানুষের কিছু নির্দিষ্ট বৈশিষ্ট্যের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কিত। পরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আরও প্রায় ৪ হাজারে মানুষের রক্ত সংগ্রহ করে, জৈবিক বয়স মূল্যায়ন করে অ্যালগরিদমের নির্ভুলতা যাচাই করা হয়েছে এ গবেষণায়। আসলে তাঁরা ওপরে গবেষণা করা ১১টি অঙ্গের কোনো একটির প্রকৃত বয়স (মানুষটি কতদিন বেঁচে আছেন) ও জৈবিক বয়সের (বিশেষ জৈবচিহ্ন, যেমন প্রোটিন অনুসারে) পার্থক্য বের করতে চেয়েছেন। এর ১০টিতে বয়সের পার্থক্য পাওয়া গেছে। যে ব্যক্তিদের অঙ্গে বয়সের পার্থক্য আছে, তাঁদের পরবর্তী ১৫ বছরের মধ্যে মৃত্যুর ঝুঁকি ১৫ থেকে ৫০ শতাংশ বেড়ে যাবে বলে জানা গেছে এ গবেষণায়। 

টনির মতে, এই গবেষণা আরও বেশি মানুষ, যেমন ৫০ হাজার বা ১ লাখ মানুষকে নিয়ে করতে পারলে প্রতিরক্ষামূলক স্বাস্থ্যসেবায় উন্মোচিত হতে পারে নতুন দিগন্ত। সাধারণ রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে মানুষের অঙ্গের অবস্থা পরীক্ষা করে যেগুলোর দ্রুত বয়স বাড়ে, সেগুলো শনাক্ত করা যাবে সহজে। ফলে অসুস্থ হওয়ার আগেই চিকিৎসা করে সমস্যার সমাধান করা যেতে পারে। এর ফলে রক্ষা পেতে পারে অনেক প্রাণ, সহজ হতে পারে অনেক বয়স্ক ও মধ্যবয়সী মানুষের জীবন।

সূত্র: সায়েন্স টেক ডেইলি, নেচার ও ফক্স নিউজ ডটকম

Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.