ব্রেকিং নিউজ

6/recent/ticker-posts

Header Ads Widget

বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোর কার্যকলাপ, সঙ্কট এবং কাঠামোগত সংস্কারের রূপরেখা

 

বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোর কার্যকলাপ, সঙ্কট এবং কাঠামোগত সংস্কারের রূপরেখা

অধ্যায় ১: ভূমিকা, তাত্ত্বিক কাঠামো এবং ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট

১.১. বিশ্লেষণাত্মক পরিপ্রেক্ষিত ও লক্ষ্য নির্ধারণ

২০২৪ সালের গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে একটি মৌলিক পরিবর্তন সূচিত হয়েছে, যা দীর্ঘদিনের কর্তৃত্ববাদী শাসন ব্যবস্থার পতন ঘটিয়েছে । এই সন্ধিক্ষণে, দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর বিগত কার্যকলাপের সমালোচনামূলক পর্যালোচনা এবং একটি স্থিতিশীল গণতান্ত্রিক ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করতে তাদের করণীয় নির্ধারণ করা অপরিহার্য। এই প্রতিবেদনটির লক্ষ্য হলো, বাংলাদেশের প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর (বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এবং বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল) সাংগঠনিক প্রকৃতি, নীতিগত অবস্থান এবং শাসন প্রক্রিয়ায় তাদের বাস্তব ভূমিকা বিশ্লেষণ করা। বিশেষত, গণতান্ত্রিক আদর্শের সঙ্গে তাদের কার্যকলাপের যে গভীর ফারাক সৃষ্টি হয়েছে, তার মূল কারণগুলো উদ্ঘাটন করা এই বিশ্লেষণের কেন্দ্রীয় উদ্দেশ্য। প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে, একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক ও জবাবদিহিমূলক রাষ্ট্র কাঠামো গড়ে তোলার জন্য দলগুলোর সামনে সুনির্দিষ্ট কাঠামোগত সংস্কার এবং নীতিগত পথরেখা (Roadmap) তুলে ধরা হয়েছে। এই বিশ্লেষণ নীতি-নির্ধারকদের জন্য সহায়ক হবে, যাতে তারা অতীতের ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে গণতান্ত্রিক উত্তরণের পথে কৌশলগত সিদ্ধান্ত নিতে পারে    

১.২. গণতন্ত্রে রাজনৈতিক দলের আদর্শিক ভূমিকা (The Normative Role)

গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থায় রাজনৈতিক দল হলো প্রতিনিধিত্বমূলক গণতন্ত্রের মূল ভিত্তি এবং এর কার্যকারিতার জন্য অপরিহার্য । আদর্শগতভাবে, রাজনৈতিক দল একটি সংঘবদ্ধ জনসমষ্টি যারা রাষ্ট্রের সমস্যা সম্পর্কে ঐকমত্য পোষণ করে এবং নিয়মতান্ত্রিক উপায়ে ক্ষমতা গ্রহণের মাধ্যমে গৃহীত কর্মসূচি বাস্তবায়নে সচেষ্ট হয় । অধ্যাপক ফাইনারের মতে, আধুনিক গণতান্ত্রিক শাসন কার্যত রাজনৈতিক দলের শাসন    

রাজনৈতিক দলের আদর্শিক কাজের পরিধি অত্যন্ত ব্যাপক। এর প্রধান দায়িত্বগুলোর মধ্যে রয়েছে:

নেতৃত্ব সৃষ্টি: রাজনৈতিক দলগুলোর সাংগঠনিক কাঠামো বিভিন্ন স্তরে নেতৃত্ব তৈরি করে, যা রাষ্ট্রীয় নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য যোগ্য ব্যক্তি সরবরাহ করে    

নীতি নির্ধারণ ও জনমত গঠন: দলগুলো নিজেদের মতাদর্শের ভিত্তিতে সমাজের গুরুত্বপূর্ণ সমস্যার সমাধানকল্পে নীতি ও কর্মসূচি প্রণয়ন করে। দলীয় নেতারা সভা-সমিতি ও গণমাধ্যমের মাধ্যমে ব্যাপকভাবে প্রচার চালিয়ে নিজ নিজ কর্মসূচির পক্ষে জনমত গঠনে সচেষ্ট হন, যা জনগণের রাজনৈতিক সচেতনতা বৃদ্ধি করে    

সরকার গঠন ও রাষ্ট্র পরিচালনা: নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভকারী দল সরকার গঠন করে এবং নির্বাচনি প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী রাষ্ট্র পরিচালনা করে    

গঠনমূলক বিরোধীতা: বিরোধী দল সরকারের কার্যক্রমের ভুলত্রুটি ধরিয়ে দিয়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে এবং গণতন্ত্রের প্রহরী হিসেবে কাজ করে    

রাজনৈতিক ব্যবস্থার স্থায়িত্ব এবং গণতন্ত্রের অগ্রগতির সঙ্গে দলীয় ব্যবস্থা অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত । রাজনৈতিক দলগুলো জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষা, চিন্তা-ভাবনা এবং দৃষ্টিভঙ্গী প্রভাবিত করে, অর্থাৎ রাজনৈতিক সংস্কৃতি গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে । তবে, যদি রাজনৈতিক দলগুলো নিজেরাই অভ্যন্তরীণভাবে গণতান্ত্রিক না হয়, তবে রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া সুসংহতকরণে তারা কাঙ্ক্ষিত ভূমিকা পালনে ব্যর্থ হতে পারে    

১.৩. বাংলাদেশের দলীয় ব্যবস্থার বিবর্তন এবং বৈশিষ্ট্য

বাংলাদেশের রাজনীতিতে বর্তমানে বহুদলীয় গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা প্রচলিত। নির্বাচন কমিশন কর্তৃক নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের সংখ্যা প্রায় ৪১টি । তবে কার্যত, দেশের রাজনৈতিক ভূদৃশ্য বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ (AL) এবং বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (BNP)—এই দুটি প্রধান দলের প্রতিদ্বন্দ্বিতা দ্বারা প্রভাবিত।   

ঐতিহাসিক পটভূমি: বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ (১৯৪৯ সালে প্রতিষ্ঠিত) গঠিত হয়েছিল প্রধানত বাঙালি স্বার্থকে তুলে ধরার জন্য । অন্যদিকে, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (১৯৭৮ সালে প্রতিষ্ঠিত) বহুদলীয় গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার লক্ষ্য নিয়ে আত্মপ্রকাশ করে । উভয় দলই স্বাধীনতার চেতনার দাবিদার এবং তাদের জন্ম গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামের সঙ্গে যুক্ত।   

দলীয় সংস্কৃতির সংকট: ঐতিহাসিক দিক থেকে, এই দলগুলোর প্রতিষ্ঠাতা নেতৃত্ব গণতন্ত্রের স্বপ্ন দেখালেও, ক্ষমতায়নের পর দ্রুতই তারা কর্তৃত্ববাদী প্রবণতা দেখায়। যেমন, শেখ মুজিবুর রহমান সরকার গঠনের পর দ্রুতই দমন-পীড়ন শুরু করেন এবং একদলীয় শাসনের দিকে ঝুঁকে পড়েন । একইভাবে, পরবর্তী সময়ে আওয়ামী লীগের দীর্ঘ ১৫ বছরের শাসনামলে ক্ষমতার চরম কেন্দ্রীকরণ এবং গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোর অবমাননা হয়, যা শাসন ব্যবস্থাকে 'হাইব্রিড রেজিম' (দোআঁশলা শাসন ব্যবস্থা) হিসেবে চিহ্নিত করেছে বিশ্লেষকরা । এই প্রবণতা প্রমাণ করে যে, গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলির সুরক্ষা দলগুলোর ঐতিহাসিক ভিত্তি বা আদর্শের ওপর নির্ভর করে না, বরং নেতৃত্ব ও অভ্যন্তরীণ কাঠামোর ওপর নির্ভরশীল।   

বর্তমানে বাংলাদেশের দলীয় রাজনীতিতে সহিষ্ণুতার অভাব, শঠতা, গলাবাজি এবং ধ্বংসাত্মক প্রবণতা (হরতাল, অবরোধ) প্রায়শই দেখা যায় । উপরন্তু, বেশিরভাগ দলই শহরকেন্দ্রিক, এবং খুব কম সংখ্যক দলের সংগঠনই পল্লী অঞ্চলে পৌঁছাতে সক্ষম হয়েছে । এই নিম্ন রাজনৈতিক সংস্কৃতি গণতন্ত্র সুসংহতকরণের পথে প্রধান বাধা হিসেবে কাজ করে    

সারণি ১: বাংলাদেশের প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর মৌলিক তথ্য ও আদর্শিক ভিত্তি

দলের নামপ্রতিষ্ঠার বছরপ্রতিষ্ঠাতাপ্রধান আদর্শিক ভিত্তিপ্রতীক
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ (AL)১৯৪৯আব্দুল হামিদ খান ভাসানী, ইয়ার মোহাম্মদ খানবাঙালি জাতীয়তাবাদ, গণতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা, সমাজতন্ত্র

নৌকা    

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (BNP)১৯৭৮জিয়াউর রহমানবাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ, বহুদলীয় গণতন্ত্র

ধানের শীষ    

জাতীয় পার্টি (JP)১৯৮৬হুসেইন মুহম্মদ এরশাদইসলাম ও জাতীয়তাবাদী চেতনা, সমাজতন্ত্র

লাঙল    

অধ্যায় ২: প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর সাংগঠনিক প্রকৃতি ও নীতিগত অবস্থান

২.১. বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ (AL): সাংগঠনিক শক্তি ও মতাদর্শিক গতিপথ

আওয়ামী লীগ বাংলাদেশের প্রাচীনতম রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে অন্যতম এবং দেশের প্রারম্ভিক বছরগুলোতে এর ব্যাপক ভিত্তি, সদস্যপদ এবং সাংগঠনিক শক্তি অন্য কোনো দল প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারেনি । দলটির সাংগঠনিক কাঠামোতে সভাপতি (বর্তমানে শেখ হাসিনা) এবং সাধারণ সম্পাদকের (বর্তমানে ওবায়দুল কাদের) নেতৃত্বে কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদ (Central Working Committee) থাকে । এই কাঠামো মূলত দলীয় প্রধানের হাতে ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত রাখার প্রবণতা দেখায়।   

নীতিগত অবস্থান ও ভিশন: সাম্প্রতিককালে আওয়ামী লীগের মূল নীতিগত ফোকাস হলো 'ডিজিটাল বাংলাদেশ' থেকে 'স্মার্ট বাংলাদেশে' রূপান্তর । এই ভিশনের চারটি মূল স্তম্ভ রয়েছে: স্মার্ট সিটিজেন, স্মার্ট সরকার, স্মার্ট অর্থনীতি, এবং স্মার্ট সমাজ। এই ভিশনটিকে চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের যুগে বৈশ্বিক প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার জন্য অপরিহার্য প্রযুক্তিগত সক্ষমতা অর্জনের কৌশল হিসেবে দেখা হয় । ২০২৪ সালের নির্বাচনি ইশতেহারে কর্মসংস্থান সৃষ্টি, সামাজিক নিরাপত্তা এবং সুশাসনকে প্রধান রাজনৈতিক এজেন্ডা হিসেবে স্থান দেওয়া হয় । যদিও সুশাসনকে কেন্দ্রে রাখা হয়েছিল, বাস্তবতা হলো দীর্ঘ শাসনামলে সুশাসনের সূচকগুলো দুর্বল হয়েছে    

২.২. বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (BNP): নীতি এবং বিরোধীতার কৌশল

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) প্রতিষ্ঠার মূল লক্ষ্য ছিল একদলীয় বাকশাল প্রথার অবসান ঘটিয়ে বহুদলীয় গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করা । দলটির মূল চালিকা শক্তি হলো মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধারণ করে 'বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ'-এর পতাকাতলে সকলকে ঐক্যবদ্ধ করা । দলটির নেতৃত্ব দেন চেয়ারপারসন (বেগম খালেদা জিয়া) এবং মহাসচিব (মীর্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর)    

ভিশন ২০৩০ ও নীতিগত লক্ষ্য: বিএনপি তাদের 'ভিশন ২০৩০' এর মাধ্যমে একটি সহনশীল, মানবিক, ন্যায়বিচারভিত্তিক গণতান্ত্রিক সমাজ গড়ার অঙ্গীকার করেছে । তারা বিশ্বাস করে যে রাষ্ট্রের মালিকানা জনগণের হাতে ফিরিয়ে দিতে হবে এবং 'এক দিনের গণতন্ত্রে' বিশ্বাসী নয় । রাষ্ট্র পরিচালনায় তারা তিনটি মূল বিষয় (3 Gs) সমন্বয় করতে চায়: 'Good policy', 'Good governance' এবং 'Good administration' । ট্রান্সন্যাশনাল ও আঞ্চলিক ইস্যুতে বিএনপি স্থিতিশীলতা, নিরাপত্তা, এবং সন্ত্রাসবাদ দমনে কঠোর নীতি বজায় রাখার পক্ষে    

রাজনৈতিক কৌশল: ক্ষমতাসীন দলের অধীনে নির্বাচন প্রক্রিয়ার ওপর অনাস্থা থাকায় বিএনপি ২০২৪ সালের নির্বাচন বয়কট করে । তারা নির্বাচনকালীন সময়ে নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবির পক্ষে হরতাল ও অবরোধের মাধ্যমে আন্দোলন চালিয়ে যায় । জোটের রাজনীতিতে BNP অতীতে গঠিত ২০ দলীয় জোটকে আনুষ্ঠানিকভাবে বিলুপ্ত করে বর্তমানে '১২-দলীয় জোট' এবং 'জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট' নামে পৃথক জোটের সঙ্গে কাজ করে, যদিও BNP, জামায়াত ও এলডিপি নিজেরা আলাদা থেকে যায়    

২.৩. প্রধান দলগুলোর তুলনামূলক নীতি বিশ্লেষণ

নীতিগতভাবে AL এবং BNP উভয়েই গণতন্ত্র ও সুশাসন প্রতিষ্ঠার অঙ্গীকার করে, কিন্তু বাস্তব কার্যক্রমে আদর্শিক অসঙ্গতি দেখা যায়। AL তার 'স্মার্ট বাংলাদেশ' ভিশনের মাধ্যমে প্রযুক্তি-নির্ভর উন্নয়নকে প্রাধান্য দেয় , অন্যদিকে BNP 'ভিশন ২০৩০'-এর মাধ্যমে সুশাসন ও প্রাতিষ্ঠানিক জবাবদিহিতাকে কেন্দ্রে স্থান দেয় । এই নীতিগত অঙ্গীকার থাকা সত্ত্বেও, উভয় দলের শাসনামলেই সুশাসনের মাত্রা আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে সন্তোষজনক ছিল না    

এখানে একটি গুরুত্বপূর্ণ পর্যবেক্ষণ হলো, দুই দলের মধ্যে বিদ্যমান শত্রুতা কেবল আদর্শিক নয়, বরং এটি ব্যক্তিগত এবং ঐতিহাসিক বৈরিতায় (যেমন ‘Battling Begums’) রূপান্তরিত হয়েছে । এই শূন্য-সমষ্টি (Zero-sum) মানসিকতার কারণে রাজনৈতিক প্রতিযোগিতা ধ্বংসাত্মক রূপ নেয়, যেখানে ক্ষমতা হারানোর অর্থ কেবল নীতির পরিবর্তন নয়, বরং অস্তিত্বের সংকট (যেমন বিরোধী নেতার কারাদণ্ড )। এই পরিস্থিতি রাজনীতিতে সহনশীলতা ও গঠনমূলক বিরোধিতার সংস্কৃতিকে বিলুপ্ত করে। বিএনপি নির্বাচন বর্জনের কৌশল গ্রহণ করে ক্ষমতার বাইরে থাকে, যা প্রকৃতপক্ষে ক্ষমতাসীন দলকে একচেটিয়া ক্ষমতা ভোগ করার সুযোগ দিয়েছে, গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় তাদের কার্যকর অংশগ্রহণ সীমিত করেছে।   

২.৪. অন্যান্য দল ও তৃতীয় শক্তির সংকট (JP & Others)

বাংলাদেশের বহুদলীয় ব্যবস্থায় তৃতীয় বৃহত্তম দল হিসেবে জাতীয় পার্টির (JP) অবস্থান গুরুত্বপূর্ণ। ১৯৮৬ সালের ১ জানুয়ারি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ দলটি প্রতিষ্ঠা করেন । বর্তমানে গোলাম মোহাম্মদ কাদের (জি এম কাদের) দলটির চেয়ারম্যান    

তবে, জাতীয় পার্টি বর্তমানে অভ্যন্তরীণ গণতন্ত্র এবং নেতৃত্ব নির্বাচনের ক্ষেত্রে বড় সংকটের সম্মুখীন। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত দশম জাতীয় কাউন্সিলের পর দলের একাংশ নেতৃত্ব নিয়ে বিতর্ক তুলেছে । ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ দাবি করেছেন যে তিনি সর্বসম্মতিক্রমে পার্টির চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন এবং জি এম কাদেরের চেয়ারম্যান চরিত্র ধারণ করার বৈধতা নেই । লাঙল প্রতীক নিয়েও একাধিক দাবিদার থাকায় নির্বাচন কমিশন প্রধান এ এম এম নাসির উদ্দিন বলেছেন যে প্রতীকের মালিক খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না । সংগঠনের ভেতরে এই চলমান বিতর্কটি দলের ঐক্য, বৈধতা ও নির্বাচনের প্রস্তুতিতে প্রভাব ফেলতে পারে। তৃতীয় বৃহত্তম রাজনৈতিক দলের এই অভ্যন্তরীণ অস্থিরতা প্রমাণ করে যে, বাংলাদেশের সামগ্রিক দলীয় ব্যবস্থা কেবল দ্বি-দলীয় প্রতিদ্বন্দ্বিতার মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, বরং সাংগঠনিক স্থিতিশীলতা ও অভ্যন্তরীণ গণতন্ত্রের সংকটেও ভুগছে।   

অধ্যায় ৩: রাজনৈতিক দলগুলোর কার্যকলাপের সমালোচনামূলক পর্যালোচনা (২০০৮-২০২৪)

৩.১. ক্ষমতাসীন দলের কার্যকলাপ: কর্তৃত্ববাদী প্রবণতা ও ক্ষমতার কেন্দ্রীকরণ (Awami League Era)

২০০৮ সালের নির্বাচনের পর, যেখানে জনগণ পূর্ববর্তী BNP সরকারের উচ্চ দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনার বিরুদ্ধে রায় দিয়েছিল , আওয়ামী লীগ সুশাসন প্রতিষ্ঠার সুযোগ পেয়েছিল। কিন্তু বিশ্লেষণে দেখা যায়, এই সুযোগ কাজে লাগানোর পরিবর্তে শাসনের প্রবণতা দ্রুত কেন্দ্রীভূত কর্তৃত্ববাদের দিকে মোড় নেয়    

গণতান্ত্রিক পশ্চাদপসরণ ও প্রাতিষ্ঠানিক দুর্বলতা: ক্ষমতার কেন্দ্রীভূতকরণের প্রধান পদ্ধতি ছিল সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর নির্বাহী বিভাগের প্রভাব বিস্তার। আইনসভার ওপর নির্বাহী বিভাগের বিধিনিষেধ ক্রমাগত হ্রাস পায়, যা দ্রুত স্বৈরাচার প্রতিষ্ঠায় সহায়ক হয় । এর অন্যতম উদাহরণ হলো তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার বিলুপ্তি। নির্বাচনগুলো নিয়মিত বিরতিতে অনুষ্ঠিত হলেও, বিরোধী দলের বর্জন এবং ব্যাপক রাজনৈতিক সহিংসতা ও অধিকারের চরম অবক্ষয়ের কারণে নির্বাচনগুলো অর্থবহ প্রতিদ্বন্দ্বিতা নিশ্চিত করতে পারেনি । রাষ্ট্রের শাসন ব্যবস্থার এই রূপান্তরকে 'হাইব্রিড রেজিম' (দোআঁশলা শাসন ব্যবস্থা) হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে, যেখানে দৃশ্যত গণতান্ত্রিক উপাদান থাকলেও শক্তিশালী কর্তৃত্ববাদী প্রবণতা বিদ্যমান ছিল    

বিরোধী দল ও সমালোচকদের দমন: ক্ষমতাসীন দল বিরোধী দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) এবং সুশীল সমাজের সমালোচনামূলক কণ্ঠস্বরকে ক্রমাগত হয়রানির শিকার করেছে । বিএনপির হাজার হাজার সদস্য ও সমর্থককে গ্রেপ্তার করা হয়, বিশেষ করে ২০২৪ সালের নির্বাচনের আগে । সমালোচনামূলক মতামতের ওপর বিধিনিষেধ আরোপে বিতর্কিত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন এবং এর পরিবর্তিত রূপ সাইবার নিরাপত্তা আইন ব্যবহৃত হয়    

৩.২. বিরোধী দলের কার্যকলাপ: দুর্বলতা ও ধ্বংসাত্মক রাজনীতি (BNP and Opposition)

গণতন্ত্রে বিরোধী দলের ভূমিকা হলো সরকারের কার্যকলাপের গঠনমূলক সমালোচনা করা এবং জনস্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয় উত্থাপন করা । তবে, বাংলাদেশে বিরোধী দল হিসেবে BNP গঠনমূলক সমালোচনার চেয়ে সহিংস আন্দোলন, হরতাল ও অবরোধের মাধ্যমে রাজনীতিতে মনোনিবেশ করেছে    

আভ্যন্তরীণ গণতন্ত্রের অভাব: গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় ভোটদাতাদের পছন্দমত প্রতিনিধি নির্বাচনের ক্ষমতা বাস্তবে নির্ভর করে দলীয় মনোনয়ন প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতার ওপর। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)-এর গবেষণা অনুসারে, রাজনৈতিক দলের অভ্যন্তরে গণতন্ত্র চর্চার ঘাটতি, অন্ধ দলীয় আনুগত্য এবং প্রার্থী সম্পর্কে তথ্যের অপ্রতুলতা অবাধ পছন্দের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে । দলগুলো যদি নিজেরাই অভ্যন্তরীণভাবে গণতান্ত্রিক না হয়, তবে তারা কীভাবে রাষ্ট্রে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে পারে—এই প্রশ্নটিই তাদের বিশ্বাসযোগ্যতা কমিয়ে দেয়    

নীতিগত ব্যর্থতা ও আন্তর্জাতিক মূল্যায়ন: যদিও বিএনপি 'ভিশন ২০৩০'-এ সুশাসন প্রতিষ্ঠার অঙ্গীকার করেছে , আন্তর্জাতিক বিশ্লেষণে তাদের পূর্ববর্তী শাসনামল (২০০৬ সালের আগে) উচ্চ দুর্নীতি এবং দুর্বল শাসনের জন্য সমালোচিত হয়েছিল । কেউ কেউ আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন যে, বিএনপি যদি তার পূর্বের অগণতান্ত্রিক কৌশল, দুর্বল শাসন এবং দুর্নীতির পথে ফিরে আসে, তবে তা বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতিকে ব্যাহত করে দেশকে ভঙ্গুর রাষ্ট্রে পরিণত করতে পারে    

৩.৩. সুশাসন, দুর্নীতি এবং প্রাতিষ্ঠানিক অবক্ষয়

সুশাসন (Good Governance) প্রতিষ্ঠার জন্য স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা, আইনের শাসন, দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণ এবং রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা অপরিহার্য । বাংলাদেশে এই উপাদানগুলোর ঘাটতি ছিল প্রকট।   

দুর্নীতি ও ক্ষমতার সহাবস্থান: আন্তর্জাতিক প্রতিবেদন অনুসারে, বাংলাদেশে দুর্নীতির হার অত্যন্ত উচ্চ । জরিপে অংশ নেওয়া বিপুল সংখ্যক উত্তরদাতা (৮৪.৩%) সরকারি পরিষেবা পেতে ঘুষ ও দুর্নীতির কথা উল্লেখ করেন । ক্ষমতার কেন্দ্রীভবন এবং দুর্নীতি পরস্পরকে শক্তিশালী করেছে।   

আওয়ামী লীগ ২০০৮ সালের নির্বাচনী ইশতেহারে দুর্নীতি দমনের অঙ্গীকার করেছিল, যার মধ্যে ক্ষমতাধরদের সম্পদের বিবরণী দাখিল এবং কালো টাকার মালিকদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের কথা ছিল । কিন্তু দীর্ঘ ১৫ বছরের শাসনে সেই অঙ্গীকারের পূর্ণ বাস্তবায়ন ঘটেনি। বরং, দলীয় মনোনয়ন প্রক্রিয়ায় মেধা বা আদর্শের চেয়ে 'পারিবারিক আনুগত্য' এবং 'পেশিশক্তি' মূল নির্ণায়ক হিসেবে কাজ করেছে । এই পৃষ্ঠপোষকতার সংস্কৃতি রাজনীতির সাথে দুর্নীতি ও কালো টাকার প্রভাবের সরাসরি কার্যকারণ সম্পর্ক তৈরি করে। যারা দলীয় আনুগত্য নিশ্চিত করতে এবং স্থানীয় সাংগঠনিক সক্ষমতা (muscle power) সরবরাহ করতে পারে, তারাই নেতৃত্বের কাছে বেশি সুবিধা পায় । এর ফলে রাজনীতিতে জবাবদিহি ও অংশগ্রহণমূলক ব্যবস্থার প্রতি আগ্রহহীন একটি নতুন ধনী শ্রেণীর উদ্ভব ঘটেছে, যা রাজনৈতিক দুর্নীতিকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেয়    

প্রাতিষ্ঠানিক অবক্ষয়: বিচার বিভাগের স্বাধীনতাও প্রশ্নের মুখে পড়েছে। ৭০% উত্তরদাতা মনে করেন বিচার ব্যবস্থা আপোসকৃত । বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ও নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করা সুশাসন প্রতিষ্ঠার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ । অন্যদিকে, আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোও প্রায় দায়মুক্তি নিয়ে মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছে, যা গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর জনগণের আস্থা কমিয়েছে    

সার্বিক বিশ্লেষণে দেখা যায়, বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলো, বিশেষত ক্ষমতায় থাকা অবস্থায়, সুশাসনের মূল্যবোধের চেয়ে ক্ষমতা নিয়ন্ত্রণকেই প্রাধান্য দিয়েছে। এই প্রবণতা অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির পাশাপাশি রাজনৈতিক স্বাধীনতা ও সুশাসনের স্কোরকে ক্রমাগত নিম্নগামী করেছে    

অধ্যায় ৪: ২০২৪ গণ-অভ্যুত্থান: দলগুলোর ব্যর্থতার চূড়ান্ত প্রকাশ

৪.১. অভ্যুত্থানের প্রকৃতি ও প্রেক্ষাপট

২০২৪ সালের জুলাই গণ-অভ্যুত্থান, যা ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থান নামেও পরিচিত, বাংলাদেশের রাজনীতিতে এক অভূতপূর্ব ঘটনা । এই আন্দোলন শুরু হয়েছিল সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে, কিন্তু শেখ হাসিনা নেতৃত্বাধীন সরকারের দমন-পীড়নের ফলে তা দ্রুত অসহযোগ আন্দোলনে রূপ নেয় । আন্দোলনের চূড়ান্ত লক্ষ্য ছিল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগ । ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগ করে দেশ ত্যাগ করলে সাংবিধানিক সংকটের সৃষ্টি হয়, যার ফলস্বরূপ মুহাম্মদ ইউনূসকে প্রধান উপদেষ্টা করে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হয়    

নেতৃত্বের সংকট এবং স্বতঃস্ফূর্ততা: এই অভ্যুত্থানের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য ছিল এর অ-দলীয় প্রকৃতি। আন্দোলনে অংশ নেওয়া বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী নুসরাত জাহান টুম্পা বা অন্যান্য সাধারণ জনগণের মতে, তারা আশেপাশে কোনো দল বা সংগঠনের দৃশ্যমান দলীয় নেতৃত্ব দেখেননি। বরং তারা একে সাধারণ শিক্ষার্থী ও জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ হিসেবেই দেখেছেন, যেখানে কোনো 'দলীয় ট্যাগ' ছিল না । এটি বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোর গণভিত্তি এবং নেতৃত্ব প্রদানের সক্ষমতা হারানোর চরম প্রমাণ। যখন জনগণের সবচেয়ে বড় সংকট (কর্তৃত্ববাদী শাসনের অবসান) রাজনৈতিক দলগুলোর সহায়তা ছাড়াই সমাধান হয়, তখন তা দলীয় ব্যবস্থার গভীর কার্যকারিতা সংকটকে নির্দেশ করে।   

৪.২. প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর অবস্থান এবং দূরত্ব

ক্ষমতাসীন দলের ভুল মূল্যায়ন: আওয়ামী লীগ সরকার আন্দোলন দমনে কঠোর অবস্থান নিয়েছিল এবং ক্রমাগত আঙুল তুলেছিল বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর দিকে । আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আন্দোলনকারীদেরকে ছাত্রদল ও ছাত্রশিবিরের 'সশস্ত্র ক্যাডার বাহিনী' হিসেবে অভিহিত করেছিলেন । ক্ষমতাসীন দলের এই ভুল মূল্যায়ন তাদের জনগণের আকাঙ্ক্ষা বুঝতে পারার সম্পূর্ণ ব্যর্থতা প্রকাশ করে।   

বিরোধী দলের দ্বিধা এবং কৌশলগত দূরত্ব: বিএনপি যদিও আন্দোলনের নৈতিক সমর্থন জানিয়েছিল , কিন্তু তারা প্রকাশ্য নেতৃত্ব দিতে ব্যর্থ হয়। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জনগণের (ছাত্রদের) 'দলীয় ট্যাগ' গ্রহণ না করার সংস্কৃতির কথা উল্লেখ করে আন্দোলনে সরাসরি জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করেন । এই কৌশলগত দূরত্ব ইঙ্গিত করে যে, দীর্ঘদিনের দমন-পীড়ন এবং অভ্যন্তরীণ দুর্বলতার কারণে রাজনৈতিক দলগুলো তাদের ঐতিহ্যবাহী গণভিত্তি হারিয়ে ফেলেছে। গণ-অভ্যুত্থান কার্যত প্রতিষ্ঠিত রাজনৈতিক ব্যবস্থার ওপর জনগণের গভীর অনাস্থার প্রতীক হিসেবে কাজ করে। দলগুলোকে অবশ্যই বুঝতে হবে যে তারা কেবল ক্ষমতা দখলের জন্য সংঘবদ্ধ নয়, বরং তারা প্রকৃত অর্থেই আদর্শিক নেতৃত্ব এবং গণতন্ত্রের প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।   

৪.৩. অভ্যুত্থান-পরবর্তী প্রেক্ষাপটে চ্যালেঞ্জসমূহ

গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে কর্তৃত্ববাদী শাসনের অবসানের পর দেশ একটি বিরল মুহূর্তে উপনীত হয়েছে, যেখানে ন্যায়ের ভিত্তিতে একটি নতুন গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র গঠনের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে । অন্তর্বর্তী সরকার রাষ্ট্রীয় সংস্কার, দুর্নীতি প্রতিরোধ, গণতন্ত্র ও সুশাসন প্রতিষ্ঠায় মনোযোগ দিয়েছে । আন্তর্জাতিক মহল, যেমন ইউরোপীয় পার্লামেন্টের মানবাধিকার-বিষয়ক উপকমিটি, বাংলাদেশের এই গণতান্ত্রিক উত্তরণের প্রচেষ্টাকে স্বাগত জানিয়েছে এবং সংস্কারের প্রতি শান্তিপূর্ণ অঙ্গীকার দেখানোর আহ্বান জানিয়েছে    

তবে এই পথে চ্যালেঞ্জও রয়েছে। দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতার ফলে সৃষ্ট আস্থার সংকট এবং জুলাই সনদ বাস্তবায়নের পদ্ধতি নিয়ে প্রধান দলগুলোর মধ্যে মৌলিক মতবিরোধ রয়েছে, যা সংস্কার প্রক্রিয়াকে মারাত্মকভাবে বিপন্ন করছে । রাজনৈতিক দলগুলোর প্রধান 'করণীয়' হলো এই গণ-আকাঙ্ক্ষাকে (জুলাই সনদ) মেনে নিয়ে ভবিষ্যৎ রাষ্ট্র কাঠামো প্রতিষ্ঠা করা, নিজেদের দলীয় স্বার্থকে প্রাধান্য না দেওয়া।   

অধ্যায় ৫: রাজনৈতিক দলগুলোর করনীয় (Duties) এবং কাঠামোগত সংস্কারের রূপরেখা

২০২৪ সালের গণ-অভ্যুত্থান প্রমাণ করেছে যে, কেবল নির্বাচনের মাধ্যমে সরকার পরিবর্তনই যথেষ্ট নয়; বরং প্রয়োজন প্রাতিষ্ঠানিক ভারসাম্য ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করে এমন কাঠামোগত সংস্কার। রাজনৈতিক দলগুলোর প্রাথমিক দায়িত্ব হওয়া উচিত এই সংস্কার প্রক্রিয়াকে সফল করা।

৫.১. জুলাই সনদ: নতুন রাজনৈতিক সমঝোতার ভিত্তি স্থাপন

জুলাই গণ-অভ্যুত্থান সফলকারী এ দেশের জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতিচ্ছবি হলো 'জুলাই সনদ', যা একটি বৈষম্যহীন, গণতান্ত্রিক এবং জবাবদিহিমূলক সমাজ গঠনের প্রতিশ্রুতি দেয়    

করণীয়: ঐকমত্য প্রতিষ্ঠা: রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে বর্তমানে এই সনদ বাস্তবায়নের পদ্ধতি নিয়ে মৌলিক অচলাবস্থা বিরাজ করছে। বিএনপি মনে করে যে সংবিধান-সংশ্লিষ্ট সংস্কারগুলো কেবলমাত্র নির্বাচিত সংসদের মাধ্যমেই বাস্তবায়ন করা উচিত, কারণ নির্বাচনের আগে বিশেষ সাংবিধানিক আদেশ দিলে 'দুটি সংবিধান' চালু হওয়ার মতো অস্বাভাবিক পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে । অন্যদিকে, জামায়াতে ইসলামী ও জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)-এর মতো দলগুলো মনে করে, জনগণের বিপ্লবকে সফল করতে হলে নির্বাচনের আগেই গণভোট বা গণপরিষদ গঠনের মাধ্যমে এর আইনি ভিত্তি নিশ্চিত করতে হবে    

দলগুলোর উচিত জনগণের আকাঙ্ক্ষাকে প্রাধান্য দিয়ে এই অনমনীয় অবস্থান পরিহার করে একটি নমনীয় ও কার্যকরী সমাধানে পৌঁছানো। ঐকমত্য প্রতিষ্ঠার মাধ্যমেই জুলাই সনদকে নতুন রাজনৈতিক সমঝোতার ভিত্তি হিসেবে সাংবিধানিক স্বীকৃতি দেওয়া সম্ভব । সনদে ভবিষ্যতে অভ্যুত্থানে অংশগ্রহণকারীদের আইনি হয়রানি বা বিচারের মুখোমুখি না হওয়ার সাংবিধানিক সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে    

সারণি ৩: জুলাই সনদ বাস্তবায়ন অচলাবস্থা: রাজনৈতিক অবস্থান বিশ্লেষণ

দল/পক্ষসংস্কার বাস্তবায়নের পদ্ধতিগত অবস্থানপ্রধান যুক্তি
বিএনপি

সংস্কারগুলো আগামী সংসদ ছাড়া বাস্তবায়নের কোনো আইনগত ভিত্তি নেই; বিশেষ সাংবিধানিক আদেশ দিলে 'দুটি সংবিধান' চালু হওয়ার ঝুঁকি    

আইনি ধারাবাহিকতা বজায় রাখা এবং ভবিষ্যতে আদালতে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়া এড়ানো।
জামায়াতে ইসলামী ও এনসিপি

জনগণের বিপ্লব সফল করতে নির্বাচনের আগেই আইনগত ভিত্তি (গণভোট বা গণপরিষদ) নিশ্চিত করতে হবে    

সংস্কারের দায়িত্ব পরবর্তী সংসদের হাতে ছাড়লে তা অর্থহীন হবে এবং স্বার্থান্বেষী পক্ষ রাষ্ট্রকে আবার বিপদে ফেলবে।

৫.২. অভ্যন্তরীণ গণতন্ত্র ও আদর্শিক শুদ্ধাচার

রাজনৈতিক দলের অভ্যন্তরে গণতন্ত্রের অভাব থাকলে তা জাতীয় পর্যায়ে গণতন্ত্রের সাফল্যের পথে বাধা সৃষ্টি করে । দলগুলোকে অবশ্যই নিজেদের সাংগঠনিক কাঠামোতে কাঠামোগত পরিবর্তন আনতে হবে।   

নেতৃত্বের বিকেন্দ্রীকরণ ও স্বচ্ছতা: দলীয় প্রধানের হাতে ক্ষমতার চরম কেন্দ্রীকরণ রোধ করে নেতৃত্বের বিকেন্দ্রীকরণ করা অপরিহার্য । প্রার্থী মনোনয়ন প্রক্রিয়ায় তৃণমূল পর্যায়ের নেতা-কর্মী ও স্থানীয় জনগণের কার্যকর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা উচিত, যাতে পেশিশক্তি এবং কালো টাকার প্রভাব হ্রাস পায় এবং যোগ্য নেতৃত্ব বিকাশের সুযোগ তৈরি হয় । রাজনৈতিক দলগুলোর তহবিল ব্যবস্থাপনায় অডিট এবং আর্থিক স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা জরুরি, যা জাতীয় শুদ্ধাচার কৌশলের (২০১২) অন্যতম অনুষঙ্গ    

রাজনৈতিক সংস্কৃতির উন্নয়ন: রাজনৈতিক দলগুলোকে অবশ্যই সহনশীলতা ও সহমর্মিতার ভাব গড়ে তুলতে হবে। শঠতা, গলাবাজি, কাদা ছোঁড়াছুড়ি এবং ধ্বংসাত্মক প্রবণতা পরিহার করে মানুষ ও মাটির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ কর্মসূচি ও আদর্শ গ্রহণ করতে হবে । সরকার ও বিরোধী দলের মধ্যে ফলপ্রসূ ইতিবাচক সহযোগিতা নিশ্চিত হলে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে রাজনৈতিক দল সফলতা অর্জন করতে পারে    

৫.৩. সাংবিধানিক ও প্রাতিষ্ঠানিক ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা

ক্ষমতার কেন্দ্রীকরণ রোধে এবং প্রতিষ্ঠানগুলোর রাজনৈতিক নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করার জন্য সাংবিধানিক সংস্কারে রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হওয়া প্রয়োজন।

উচ্চকক্ষ প্রতিষ্ঠা: ক্ষমতার কেন্দ্রীভূতকরণের সুরাহা করতে জাতীয় সংসদে একটি উচ্চকক্ষ (Higher Chamber) প্রতিষ্ঠা করা উচিত । এই উচ্চকক্ষের আসনগুলো রাজনৈতিক দলগুলোর নিম্নকক্ষের নির্বাচনে প্রাপ্ত ভোটের অনুপাতে গঠিত হবে । এই কাঠামোর মাধ্যমে ক্ষমতার ভারসাম্যতা বজায় রাখা সম্ভব। উচ্চকক্ষের প্রধান দায়িত্ব হবে নিম্নকক্ষের সঙ্গে তদারকিমূলক সম্পর্ক তৈরি করা। সংবিধান সংশোধন, জাতীয় নিরাপত্তা-সংক্রান্ত চুক্তি এবং সাংবিধানিক ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর চেয়ারপারসন ও সদস্যদের নিয়োগ/অপসারণের জন্য উচ্চকক্ষের অনুমোদন বাধ্যতামূলক হওয়া উচিত    

স্বাধীন সাংবিধানিক নিয়োগ: বিচার বিভাগ, দুর্নীতি দমন কমিশন, এবং নির্বাচন কমিশনের মতো সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে নিয়োগের ক্ষেত্রে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ বন্ধ করা জরুরি। নিয়োগ প্রক্রিয়া নিরপেক্ষ করতে উচ্চকক্ষ বা জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিলের (এনসিসি) মাধ্যমে একটি নিরপেক্ষ প্রক্রিয়া অনুসরণ করা যেতে পারে    

স্থানীয় সরকার শক্তিশালীকরণ: রাষ্ট্রের অতিকেন্দ্রীকরণের সমস্যাটি সমাধানে স্থানীয় সরকার ও কেন্দ্রীয় সরকারের মধ্যে রাজনৈতিক, প্রশাসনিক ও আর্থিক ক্ষমতার ভাগাভাগি করা দরকার । এটি স্থানীয় জনগণের অংশগ্রহণ বৃদ্ধি করবে এবং কেন্দ্রীয় ক্ষমতার চাপ হ্রাস করবে।   

৫.৪. সুশাসন ও দুর্নীতি দমনে কার্যকর ভূমিকা

রাজনৈতিক দলের কার্যকলাপের একটি বড় অংশ জুড়ে থাকে সুশাসন ও দুর্নীতি দমনের প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন।

OHCHR-এর সুপারিশ বাস্তবায়ন: জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয় (OHCHR) কর্তৃক ২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থান-পরবর্তী প্রেক্ষাপটে প্রস্তাবিত শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা রাজনৈতিক দলগুলোর জন্য বাধ্যতামূলক হওয়া উচিত । বিদ্যমান আইন ব্যবহার করে ঋণ আত্মসাৎ এবং অন্যান্য বৃহৎ দুর্নীতির মাধ্যমে অবৈধভাবে অর্জিত সম্পদ দ্রুত জব্দ ও আটক করার জন্য জরুরি পদক্ষেপ নেওয়া দরকার । এই সম্পদ যারা দেশের বাইরে পাচার করেছে, সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর সাথে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করে সেই সম্পদ ফিরিয়ে আনার প্রক্রিয়া নিশ্চিত করা উচিত    

দুর্নীতি দমন কমিশনের স্বাধীনতা: দুর্নীতিবিরোধী আইন কঠোরভাবে ও সমানভাবে প্রয়োগ করা উচিত, বিশেষত উচ্চ-স্তরের সরকারি কর্মকর্তা, রাজনীতিবিদ ও প্রভাবশালী ব্যবসায়ীদের ক্ষেত্রে । দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) স্বাধীনতা ও কার্যকারিতা বাড়ানোর জন্য এর সদস্যদের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা এবং পর্যাপ্ত আইনি কর্মীসহ সহায়তা প্রদান করা দরকার    

রাজনৈতিক দলগুলোকে নির্বাচনী ইশতেহারের অঙ্গীকারগুলোকে (যেমন AL-এর দুর্নীতিমুক্ত প্রশাসনের অঙ্গীকার ) শুধু আনুষ্ঠানিকতা হিসেবে নয়, বরং রাজনৈতিক সদিচ্ছার সাথে বাস্তবায়ন করতে হবে।   

সারণি ২: রাজনৈতিক দলগুলোর জন্য অপরিহার্য কাঠামোগত সংস্কারসমূহ

সংস্কারের ক্ষেত্রপ্রস্তাবিত করণীয় (দায়িত্ব)লক্ষ্য ও ফলাফল (Purpose/Outcome)
সাংবিধানিক কাঠামো

জাতীয় সংসদে উচ্চকক্ষ প্রতিষ্ঠা ও সাংবিধানিক নিয়োগে তার তদারকি    

ক্ষমতার কেন্দ্রীকরণ রোধ, প্রাতিষ্ঠানিক ভারসাম্য ও জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠা।
অভ্যন্তরীণ রাজনীতি

মনোনয়ন প্রক্রিয়া তৃণমূলমুখী করা; দলের তহবিল ব্যবস্থাপনায় আর্থিক স্বচ্ছতা ও অডিট নিশ্চিতকরণ    

পেশিশক্তি ও কালো টাকার প্রভাব হ্রাস; যোগ্য ও আদর্শিক নেতৃত্বের বিকাশ।
দুর্নীতি প্রতিরোধ

উচ্চ-পর্যায়ের দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত সম্পদ জব্দ ও বিচার; দুদক স্বাধীনতা নিশ্চিত করা    

আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা; রাজনৈতিক দুর্নীতিবাজদের দায়মুক্তি রোধ।
রাজনৈতিক ঐকমত্য

জুলাই সনদকে সাংবিধানিক ভিত্তি প্রদান এবং সংস্কার বাস্তবায়নের সময়সীমা নিয়ে দলীয় ঐকমত্য প্রতিষ্ঠা    

গণ-আকাঙ্ক্ষার প্রতি শ্রদ্ধা এবং গণতন্ত্রের পথে শান্তিপূর্ণ উত্তরণ।

অধ্যায় ৬: উপসংহার এবং কৌশলগত সুপারিশমালা

৬.১. দলগুলোর সামনে প্রধান চ্যালেঞ্জসমূহ

বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোর সামনে বর্তমানে একাধিক গুরুতর চ্যালেঞ্জ রয়েছে, যা গণতান্ত্রিক উত্তরণের প্রক্রিয়াকে ব্যাহত করতে পারে:

১. আস্থার সংকট: সরকার, নির্বাচন কমিশন এবং আইন প্রয়োগকারী সংস্থার নিরপেক্ষতার প্রতি রাজনৈতিক দলগুলোর পারস্পরিক আস্থার অভাব নির্বাচনকে অংশগ্রহণমূলক করতে প্রধান বাধা    

২. অর্থ ও পেশিশক্তির নিয়ন্ত্রণ: নির্বাচনে টাকার খেলা, পেশিশক্তির প্রভাব ও দুর্বৃত্তায়ন রোধ করা দলীয় আদর্শ ও নৈতিক শুদ্ধাচার প্রতিষ্ঠার জন্য অপরিহার্য    

৩. রাজনৈতিক সহনশীলতার অভাব: প্রতিদ্বন্দ্বী দলগুলোর মধ্যে ঐতিহাসিক বৈরিতা এবং শূন্য-সমষ্টি (Zero-sum) মানসিকতার কারণে সহনশীলতা ও সহমর্মিতার সংস্কৃতি গড়ে ওঠেনি। এই সংকট দীর্ঘমেয়াদী রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য সবচেয়ে বড় হুমকি    

৪. সংস্কার বাস্তবায়নে অচলাবস্থা: জুলাই সনদের মতো গণ-আকাঙ্ক্ষার মূর্ত প্রতীক হওয়া সত্ত্বেও, এর সাংবিধানিক বাস্তবায়নের সময়সীমা নিয়ে দলগুলোর অনমনীয় অবস্থান দেশের গণতান্ত্রিক ভবিষ্যতকে ঝুঁকির মুখে ফেলছে    

৬.২. কৌশলগত সুপারিশমালা

রাজনৈতিক দলগুলোর উচিত নিজেদের আদর্শিক দায়িত্বের প্রতি মনোনিবেশ করা এবং নিম্নলিখিত কৌশলগত সুপারিশগুলো বাস্তবায়ন করা:

১. পুনর্গঠিত জনসম্পৃক্ততা এবং নৈতিক শুদ্ধাচার: দলগুলোকে অবশ্যই ২০২৪ সালের গণ-আন্দোলনের চেতনা থেকে শিক্ষা নিতে হবে যে, দলীয় ট্যাগবিহীন জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ প্রমাণ করে যে রাজনৈতিক দলগুলো জনগণের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছিল । এখন দলগুলোর প্রধান কাজ হওয়া উচিত তৃণমূলের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করে, আদর্শিক নেতৃত্ব এবং সৎ রাজনৈতিক কর্মীর মাধ্যমে গণভিত্তি পুনর্বাসন করা। জাতীয় পার্টির মতো দলগুলোর অভ্যন্তরীণ কোন্দল দ্রুত নিরসন করে নেতৃত্বকে আইনি ও নৈতিক বৈধতা প্রদান করা জরুরি    

২. সাংবিধানিক সংস্কারে আপোসকামিতা: জুলাই সনদ বাস্তবায়নের পদ্ধতিগত অচলাবস্থা নিরসনের জন্য দলগুলোকে নমনীয় হতে হবে। জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষাকে প্রাধান্য দিয়ে একটি মধ্যবর্তী পথ খুঁজতে হবে, যেখানে সাংবিধানিক কাঠামোর মৌলিক পরিবর্তনগুলো দ্রুত শুরু করা যায় (যেমন, উচ্চকক্ষ প্রতিষ্ঠা ও নিরপেক্ষ নিয়োগ প্রক্রিয়া) এবং বাকিটা পরবর্তী নির্বাচিত সংসদের হাতে ন্যস্ত করা যায়। এই প্রক্রিয়ায় ঐকমত্য কমিশন এবং অন্তর্বর্তী সরকারের উচিত আইনি ধারাবাহিকতা বজায় রেখে দ্রুত অধ্যাদেশ বা নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে যেসব সংস্কার সম্ভব, সেগুলোর বাস্তবায়ন শুরু করা    

৩. নির্বাচন প্রক্রিয়ায় সুষ্ঠুতা নিশ্চিত করা: অন্তর্বর্তী সরকার ও নির্বাচন কমিশনের উচিত সকল রাজনৈতিক দল যাতে নির্বিঘ্নে ও নিরপেক্ষ পরিবেশে প্রচার চালাতে পারে, তা নিশ্চিত করা । রাজনৈতিক দলগুলোর উচিত ধ্বংসাত্মক রাজনীতি পরিহার করে নির্বাচনী আইন ও আচরণবিধি কঠোরভাবে অনুসরণ করা । সরকারের কোনো সংস্থা যেন হয়রানিমূলক মামলা না করে, সে বিষয়ে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে    

৪. গঠনমূলক বিরোধীতার প্রতিজ্ঞা: বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর উচিত কেবল ক্ষমতা দখলের চেষ্টা না করে, বরং সরকারের গঠনমূলক সমালোচনা করা এবং বিকল্প জনকল্যাণমূলক নীতি ও কর্মসূচি নিয়ে জনগণের সামনে আসা । সহিষ্ণুতা তৈরি ও সহমর্মিতার ভাব গড়ে উঠলে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে রাজনৈতিক দলগুলো সফলতা অর্জন করতে পারে    

৬.৩. চূড়ান্ত পর্যবেক্ষণ

বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোর কার্যকলাপ দীর্ঘদিন ধরে কেন্দ্রীভূত ক্ষমতা, অভ্যন্তরীণ গণতন্ত্রের অভাব এবং সুশাসনের প্রতি দুর্বল অঙ্গীকার দ্বারা চিহ্নিত হয়েছে। এই দুর্বলতাগুলি ২০২৪ সালের গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে চূড়ান্তভাবে প্রকাশিত হয়েছে। এই অভ্যুত্থান একটি নতুন সুযোগ তৈরি করেছে, যেখানে দলগুলোর 'করণীয়' কেবল ক্ষমতা অর্জন নয়, বরং সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোর রাজনৈতিক নিরপেক্ষতা এবং রাষ্ট্রের কাঠামোগত দুর্বলতাগুলি দূর করার জন্য জনগণের সঙ্গে একজোট হয়ে কাজ করা। গণতন্ত্রের পথে উত্তরণে বাংলাদেশের দলগুলোকে সংস্কারের প্রতি শান্তিপূর্ণ উপায়ে প্রতিশ্রুতি দেখাতে হবে । দলগুলোর জন্য এই মুহূর্তটি কেবল নির্বাচন জেতার নয়, বরং রাষ্ট্র কাঠামোয় বিশ্বাসযোগ্যতা এবং স্থায়িত্ব ফিরিয়ে আনার মাধ্যমে জাতির আস্থা পুনরুদ্ধারের শেষ সুযোগ।   

hrw.org
After the Monsoon Revolution: A Roadmap to Lasting Security Sector Reform in Bangladesh
Opens in a new window
rand.org
Nurturing and Destroying Democracy: The Two Sides of Bangladesh's Ousted Awami League | RAND
Opens in a new window
prothomalo.com
রাজনৈতিক দলগুলোকে শান্তিপূর্ণ উপায়ে সংস্কারের প্রতি প্রতিশ্রুতি দেখাতে হবে | প্রথম আলো
Opens in a new window
ti-bangladesh.org
'নতুন বাংলাদেশ': কর্তৃত্ববাদী সরকার পতন-পরবর্তী ১০০ দিনের ওপর পর্যবেক্ষণ
Opens in a new window
ebookbou.edu.bd
রাজনৈতিক দল
Opens in a new window
10minuteschool.com
Brief on Political Parties | বাংলাদেশের রাজনৈতিক ব্যবস্থা - 10 Minute School
Opens in a new window
ebookbou.edu.bd
রাজনৈতিক দল গণতন্ত্রের আবশ্যকীয় একটি প্রতিষ্ঠান। রাজনৈতিক দল বিভিন্ন নীতি ও আদর্শ দ্বরা পরিচালিত হয়। এ
Opens in a new window
elearning.chittamahatomemorialcollege.ac.in
উদারনৈতিক গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় রাজনৈতিক দলের কার্যাবলি ও ভূমিকা (Functions and Role of Political Parties
Opens in a new window
ebookbou.edu.bd
জনমত ও রাজনৈতিক সংস্কৃতি
Opens in a new window
ti-bangladesh.org
রাজনৈতিক দলের নির্বাচনী ইশতেহারে
Opens in a new window
ebookbou.edu.bd
২১ - রাজনৈতিক দল- সংজ্ঞা ও বৈশিষ্ট্য
Opens in a new window
ebookbou.edu.bd
জনমত ও রাজনৈতিক সংস্কৃতি - ভূমিকা
Opens in a new window
ti-bangladesh.org
জাতীয় নির্বাচনে মনোনয়ন প্রক্রিয়ায় স্থানীয় অংশগ্রহণ ও প্রত্যাশা
Opens in a new window
votebd.org
সকল নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলসমূহ - Votebd
Opens in a new window
2009-2017.state.gov
Bangladesh (07/02) - State.gov
Opens in a new window
shujan.org
নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি-২০০১: বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল - সুজন-সুশাসনের জন্য নাগরিক
Opens in a new window
bn.wikipedia.org
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল - উইকিপিডিয়া
Opens in a new window
cgs-bd.com
বাংলাদেশের রাজনীতির ভবিষ্যৎ গতিপ্রকৃতি - CGS
Opens in a new window
atlanticcouncil.org
After the Monsoon Revolution, Bangladesh's economy and government need major reforms
Opens in a new window
file-barisal.portal.gov.bd
সুশাসন ও বাংলাদেশ - BARISAL
Opens in a new window
en.wikipedia.org
Awami League - Wikipedia
Opens in a new window
netmission.asia
Bangladesh's 2024 Elections and the Trajectory of Digital Governance – Mahee Kirindigoda
Opens in a new window
cgs-bd.com
Decoding Bangladesh Election: Sheikh Hasina's Manifesto, Economic Challenges, and The Crucial West Factor | CGS
Opens in a new window
bnpbd.org
Bangladesh Nationalist Party - BNP - Vision - 2030
Opens in a new window
usip.org
What Does Bangladesh's Upcoming Election Mean for its Foreign Policy?
Opens in a new window
freedomhouse.org
Bangladesh: Freedom in the World 2024 Country Report
Opens in a new window
acleddata.com
The Violent Politics of Bangladesh's 2024 Elections | ACLED
Opens in a new window
bn.wikipedia.org
বিশ দলীয় জোট - উইকিপিডিয়া
Opens in a new window
carnegieendowment.org
From Revolutionaries to Visionless Parties: Leftist Politics in Bangladesh
Opens in a new window
jatiyoparty.org.bd
জাতীয় পার্টি – জাতীয় পার্টির অফিসিয়াল ওয়েবসাইট
Opens in a new window
univ-tours.fr
জাতীয় পার্টির নেতৃত্ব ও লাঙ্গল প্রতীকের বৈধতা নিয়ে বিতর্ক: জরুরি সংবাদ সম্মেলনে নতুন দাবি
Opens in a new window
bn.wikipedia.org
রাজনৈতিক সমালোচনা - উইকিপিডিয়া
Opens in a new window
bti-project.org
Bangladesh Country Report 2024 - BTI Transformation Index
Opens in a new window
file-rangpur.portal.gov.bd
বাংলাদেশ একটি উদীয়মান প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক স্বল্পোন্নত রাষ্ট্র। এই জাতির লক্ষ্য রূপকল্প ২০২১ এ উল্লেখ করা - RANGPUR
Opens in a new window
cambridge.org
Power, Patronage, and the Candidate-nomination Process: Observations from Bangladesh | Modern Asian Studies | Cambridge Core
Opens in a new window
ebookbou.edu.bd
বাংলাদেশে সুশাসনের ইস্যুসমূহ
Opens in a new window
bn.wikipedia.org
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান - উইকিপিডিয়া
Opens in a new window
bn.wikipedia.org
অসহযোগ আন্দোলন (২০২৪) - উইকিপিডিয়া
Opens in a new window
bn.wikipedia.org
২০২২–২০২৩ বাংলাদেশ বিক্ষোভ - উইকিপিডিয়া
Opens in a new window
jugantor.com
জুলাই অভ্যুত্থানে রাজনৈতিক দলগুলোর ভূমিকা কী ছিল? - Jugantor
Opens in a new window
brainbd.org
নাগরিক কোয়ালিশনের সাত প্রস্তাব কেন গুরুত্বপূর্ণ - BRAIN - brainbd.org
Opens in a new window
bdtoday.net
রাজনৈতিক দলগুলোকে সংস্কারের প্রতি প্রতিশ্রুতি দেখাতে হবে: ইইউ - Bdtoday
Opens in a new window
prothomalo.com
দলগুলোকে ঐকমত্যে আসতেই হবে - প্রথম আলো
Opens in a new window
banglabartabd.com
সংস্কার বাস্তবায়নে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মতভেদ - Bangla Barta
Opens in a new window
shujan.org
রাজনৈতিক দলের সংস্কার - সুজন-সুশাসনের জন্য নাগরিক
Opens in a new window
prothomalo.com
জবাবদিহি নিশ্চিত করতে উচ্চকক্ষের ভূমিকা কতটুকু - প্রথম আলো
Opens in a new window
bssnews.net
রাজনৈতিক স্বাধীনতা ও অর্থনৈতিক সুশাসনের জন্য একাধিক ব্যবস্থা গ্রহণে ওএইচসিএইচআরের পরামর্শ
Opens in a new window
ecs.gov.bd
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের - Bangladesh Election Commission
Opens in a new window

Post a Comment

0 Comments