ব্রেকিং নিউজ

6/recent/ticker-posts

Header Ads Widget

বাংলাদেশ পুলিশের কার্যপ্রণালী বিশ্লেষণ এবং জনবান্ধব পুলিশিংয়ে রূপান্তরের কৌশলগত রূপরেখা

 

বাংলাদেশ পুলিশের কার্যপ্রণালী বিশ্লেষণ এবং জনবান্ধব পুলিশিংয়ে রূপান্তরের কৌশলগত রূপরেখা

বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ শান্তি, শৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা বজায় রাখার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ পুলিশ একটি অপরিহার্য জাতীয় সংস্থা । এই বাহিনী বহুলাংশে ঔপনিবেশিক যুগের পুলিশ আইন, ১৮৬১ দ্বারা পরিচালিত হয় , যা এর বর্তমান কার্যপ্রণালীর ভিত্তি। গত কয়েক দশকে পুলিশ প্রযুক্তিগত আধুনিকীকরণ (যেমন ৯৯৯ সেবা) এবং অভ্যন্তরীণ প্রশাসনিক সংস্কারের (যেমন কেন্দ্রীয় পদোন্নতি পরীক্ষা) মাধ্যমে দক্ষতা বাড়ানোর চেষ্টা করেছে । তবে এই আধুনিকায়ন প্রচেষ্টাগুলো সত্ত্বেও, বাংলাদেশ পুলিশ রাজনৈতিক প্রভাব, ব্যাপক দুর্নীতি, এবং কাঠামোগত জবাবদিহিতার অভাবে জর্জরিত । ফলস্বরূপ, জনগণের আস্থা সর্বনিম্ন পর্যায়ে রয়েছে এবং পুলিশ জনসমাজে ভয়ের প্রতীক হিসেবে পরিচিত    

একটি সত্যিকারের জনবান্ধব বাহিনীতে রূপান্তরের জন্য কেবল রুটিন মাফিক পরিবর্তন যথেষ্ট নয়; প্রয়োজন কাঠামোগত এবং দার্শনিক সংস্কার। এই সংস্কারের কেন্দ্রে রয়েছে ১৮৬১ সালের ঔপনিবেশিক আইনের প্রতিস্থাপন, যা নিয়ন্ত্রণকে সেবার চেয়ে প্রাধান্য দেয় । রাজনৈতিক হস্তক্ষেপমুক্ত একটি পেশাদার বাহিনী নিশ্চিত করতে একটি স্বাধীন পুলিশ কমিশন (IPC) এবং পুলিশের অনিয়ম তদন্তের জন্য একটি স্বাধীন অভিযোগ কমিশন (ICC) স্থাপন করা জরুরি । একই সাথে, মানবাধিকার ও নৈতিকতার ওপর জোর দিয়ে পুলিশ সদস্যদের বিশেষায়িত প্রশিক্ষণ এবং ফৌজদারি কার্যবিধির বিতর্কিত ধারাগুলির (৫৪ ও ১৬৭) সংস্কার করা অপরিহার্য। এই যুগপৎ প্রাতিষ্ঠানিক ও আইনি সংস্কারের মাধ্যমেই কেবল বাংলাদেশ পুলিশ জনগণের আস্থা ও বিশ্বাস অর্জন করে একটি আধুনিক, পেশাদার এবং জনবান্ধব বাহিনী হিসেবে আবির্ভূত হতে পারে    

ভূমিকা: বাংলাদেশের পুলিশিংয়ের ঐতিহাসিক ও আইনি প্রেক্ষাপট

বাংলাদেশ পুলিশের মূল ম্যান্ডেট, আদর্শ ও বহুমাত্রিক ভূমিকা

বাংলাদেশ পুলিশ হলো দেশের জাতীয় আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, যা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে পরিচালিত হয় । এই বাহিনীর মূল আদর্শ হলো: 'শান্তি শৃঙ্খলা নিরাপত্তা প্রগতি' (Discipline Security Progress) । দেশের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা, অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ, অপরাধ দমন এবং জনগণের জানমালের নিরাপত্তা বিধানে পুলিশ বাহিনী গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে । ফৌজদারি বিচার ব্যবস্থার অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে, পুলিশ মাঠ পর্যায়ে তদন্ত ও অপরাধ নিয়ন্ত্রণে কাজ করে । পুলিশ বাহিনীর যেকোনো সদস্যকে দেশের সাধারণ পুলিশ জেলার পুলিশ বাহিনীতে নিয়োগ দেওয়া যায় এবং ফৌজদারি কার্যবিধি অনুসারে তারা তাদের নিজ নিজ স্থানীয় অধিক্ষেত্র বা এখতিয়ার অনুযায়ী ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারেন    

আইনগত ভিত্তি: ১৮৬১ সালের ঔপনিবেশিক পুলিশ আইনের প্রভাব

বাংলাদেশ পুলিশের আইনি ভিত্তি বহুলাংশে ঔপনিবেশিক যুগের পুলিশ আইন, ১৮৬১ । যদিও স্বাধীনতা লাভের পর কিছু সংশোধন আনা হয়েছে , এই আইনটিই এখনো কার্যকর রয়েছে। আইনটি পরিষ্কারভাবে উল্লেখ করে যে দেশের সকল সাধারণ পুলিশ জেলার পুলিশ বাহিনীর তত্ত্বাবধানের দায়িত্ব সরকারের উপর ন্যস্ত থাকবে । পুলিশ আইনের এই ঔপনিবেশিক উত্তরাধিকার একটি গুরুতর কাঠামোগত সংঘাতের জন্ম দিয়েছে। এই আইনটি মূলত শাসনকার্য পরিচালনার জন্য একটি কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণকারী কাঠামো তৈরি করেছিল    

আধুনিক পুলিশিংয়ের মূল দর্শন হলো জনগণের সেবা করা, কিন্তু ঔপনিবেশিক আইনটি পুলিশকে 'সেবাদানকারী' প্রতিষ্ঠানের চেয়ে 'নিয়ন্ত্রণকারী' প্রতিষ্ঠান হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে । পুলিশ আইন ১৮৬১ অনুসারে, পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) সরকারের নিয়ন্ত্রণ সাপেক্ষে দেশের সকল পুলিশ জেলায় ম্যাজিস্ট্রেটের পূর্ণ ক্ষমতার অধিকারী হন । তিনি অধস্তন পুলিশ কর্মকর্তাদের নিয়োগ, সাময়িকভাবে বরখাস্ত বা পদাবনতি করার ক্ষমতা রাখেন এবং কর্তব্যে অবহেলা বা অযোগ্যতার জন্য জরিমানা বা শাস্তিমূলক কাজ দিতে পারেন । যখন মৌলিক আইনটি নিয়ন্ত্রণ ও ক্ষমতা (Power) প্রয়োগকে উৎসাহিত করে সেবাকে নয়, তখন পুলিশ কর্মকর্তারা সহজাতভাবেই জনবান্ধব আচরণের চেয়ে ক্ষমতা প্রয়োগে বেশি মনোনিবেশ করেন। এই আইনি সীমাবদ্ধতা জনবান্ধব পুলিশিংয়ের (Community Policing) মৌলিক নীতি, যেখানে জনসমর্থনই পুলিশের ক্ষমতার ভিত্তি , তার সঙ্গে সরাসরি সাংঘর্ষিক। মৌলিক আইনি ভিত্তি পরিবর্তন না হলে, পুলিশের মূল দর্শন 'নিয়ন্ত্রণ' থেকে 'সেবা'তে স্থানান্তরিত হওয়া অসম্ভব।   

বর্তমান কার্যপ্রণালী, দক্ষতা ও আধুনিকায়নের প্রচেষ্টা

সাংগঠনিক বিন্যাস, বিশেষায়িত ইউনিট এবং ক্ষমতা প্রয়োগ

বাংলাদেশ পুলিশ একটি বিশাল বাহিনী, যার কর্মী সংখ্যা প্রায় ২,১৪,০০০ জন । আইনশৃঙ্খলা রক্ষা এবং অপরাধ দমনের মতো সাধারণ দায়িত্ব ছাড়াও, পুলিশ বিভিন্ন বিশেষায়িত ইউনিটের মাধ্যমে জটিল অপরাধ ও জাতীয় নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণের কাজ করে। এর মধ্যে রয়েছে র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (RAB), পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (PBI), অপরাধ তদন্ত বিভাগ (CID), আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন (APBn), বিশেষ শাখা (SB), এবং কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (CTTC) ইউনিট । পুলিশ কর্মকর্তাদের আইনগত দায়িত্বের মধ্যে রয়েছে: বিচারার্থ গ্রহণযোগ্য অপরাধের সূত্র উপস্থাপন ও গোপন তথ্য অনুসন্ধান করা, অপরাধীদের গ্রেফতার করা, গণউৎপাত প্রতিরোধ করা, এবং অন্য কোনো অফিসারকে আইনানুগ ও যুক্তিসঙ্গত সাহায্য প্রদান করা    

পুলিশ কর্মকর্তা এবং জনগণের মধ্যে সম্পর্ক উন্নয়নের জন্য সুনির্দিষ্ট কর্তব্যও আইনে নির্ধারণ করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে: রাস্তাঘাটে দৈহিকভাবে অক্ষম ও নিরাশ্রয় ব্যক্তিকে সহায়তা প্রদান, গ্রেফতারকৃত আহত বা অসুস্থ ব্যক্তির জন্য দ্রুত সাহায্য নিশ্চিত করা, তল্লাশির সময় দুর্ব্যবহার পরিহার করা, এবং মহিলা ও শিশুদের সঙ্গে ব্যবহারের সময় কঠোরভাবে শালীনতাপূর্ণ আচরণ ও ভদ্রতা বজায় রাখা    

আধুনিকীকরণ ও জনগণের দোরগোড়ায় সেবা পৌঁছে দেওয়ার প্রচেষ্টা

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বাংলাদেশ পুলিশ দক্ষতা বৃদ্ধি এবং জনগণের দোরগোড়ায় সেবা পৌঁছে দিতে বেশ কিছু প্রশাসনিক ও প্রযুক্তিগত আধুনিকায়ন করেছে। এই প্রচেষ্টার মধ্যে রয়েছে:

প্রযুক্তিগত উদ্ভাবন: '৯৯৯' সেবা চালুর মাধ্যমে নাগরিকেরা এখন জরুরি প্রয়োজনে ফায়ার সার্ভিস, অ্যাম্বুলেন্স এবং পুলিশের সেবা সহজেই পাচ্ছেন । এছাড়া, অনলাইন জিডি কার্যক্রম এবং অন্যান্য অনলাইনভিত্তিক সেবা প্রবর্তনের মাধ্যমে পুলিশি সেবা আরও সহজলভ্য হয়েছে    

জেন্ডার সংবেদনশীলতা: জেন্ডার সংবেদনশীলতা প্রসারের লক্ষ্যে ২০১৬ সালে একটি স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিউর (SOP) প্রবর্তন করা হয়েছে, যা পুলিশের প্রতিটি ইউনিটে প্রতিপালিত হচ্ছে । এছাড়া, নারী, শিশু, বয়স্ক ও প্রতিবন্ধীদের জন্য সেবা প্রদান সহজ করতে প্রতিটি থানায় বিশেষ ডেস্ক স্থাপন করা হয়েছে    

অভ্যন্তরীণ পেশাদারিত্ব: অধস্তন কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বিভাগীয় পদোন্নতি পরীক্ষায় মেধা ও যোগ্যতার সমতা নিশ্চিত করতে ২০২০ সাল থেকে এটি কেন্দ্রীয়ভাবে অনুষ্ঠিত হচ্ছে এবং মেধাতালিকাও কেন্দ্রীয়ভাবে প্রণয়ন করা হচ্ছে । এই প্রক্রিয়াটি পদোন্নতিতে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে একটি যুগোপযোগী পরিবর্তন হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে । কর্মকর্তাদের আবাসন ও আর্থিক ব্যবস্থাপনায় শৃঙ্খলা নিশ্চিত করতে প্রথমবারের মতো ‘মেস ব্যবহারের নীতিমালা ২০২১’ প্রণয়ন করা হয়েছে    

জাতীয় নিরাপত্তা ও শৃঙ্খলা রক্ষায় পুলিশের ভূমিকা

জাতীয় নিরাপত্তা ও অভ্যন্তরীণ শৃঙ্খলা বজায় রাখতে পুলিশ নিয়মিতভাবে কাজ করে চলেছে। পুলিশ জঙ্গিবাদ দমনে উল্লেখযোগ্য সাফল্য দেখিয়েছে, যার ফলস্বরূপ কাউন্টার টেররিজম এন্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (CTTC) ইউনিট গঠন, জঙ্গি আস্তানা নিশ্চিহ্ন করা এবং সাইবার অপরাধ মোকাবেলায় কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে । এছাড়া, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দেশের নির্বাচন প্রক্রিয়া (সিটি কর্পোরেশন, উপজেলা ও ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন) এবং মানবতাবিরোধী যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ও রায় কার্যকরের আগে ও পরে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে পুলিশ কার্যকর ভূমিকা পালন করেছে    

এই সকল আধুনিকীকরণ প্রচেষ্টা—যেমন ৯৯৯ সেবা চালু করা বা কেন্দ্রীয় পদোন্নতি প্রক্রিয়া—পুলিশের অভ্যন্তরীণ দক্ষতা এবং প্রশাসনিক শৃঙ্খলা বৃদ্ধি করলেও, তা জনগণের আস্থা অর্জনে মৌলিক পরিবর্তন আনতে পারেনি। এই পরিবর্তনগুলো প্রধানত পুলিশের "পেশী" এবং "সুবিধা" এর সংস্কার, কিন্তু এটি বাহিনীর "আত্মা" বা জবাবদিহিতার সংস্কৃতির সংস্কার নয় । জনগণের আস্থাহীনতা প্রযুক্তিগত অভাবজনিত নয়, বরং কাঠামোগত দুর্নীতি ও জবাবদিহিতার অনুপস্থিতিজনিত । যতদিন পর্যন্ত স্বাধীন তদারকি নিশ্চিত না হবে, ততদিন এই প্রযুক্তিগত বা প্রশাসনিক পরিবর্তনগুলো আস্থার সংকটে কোনো মৌলিক পরিবর্তন আনবে না।   

জনবান্ধব হওয়ার পথে প্রধান কাঠামোগত অন্তরায়সমূহ

বাংলাদেশ পুলিশকে জনবান্ধব বাহিনীতে রূপান্তরের পথে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো ঔপনিবেশিক আইনি কাঠামো এবং রাজনীতি ও আমলাতন্ত্রের প্রভাব সৃষ্টিকারী কাঠামোগত অন্তরায়সমূহ।

রাজনৈতিক প্রভাব এবং পুলিশের অ-পেশাদারিত্ব

পুলিশ বাহিনীর একটি অন্যতম প্রধান সমস্যা হলো রাজনৈতিক প্রভাবের অধীন থাকা। স্বাধীনতা লাভের শুরু থেকেই ক্ষমতাশীল প্রতিটি সরকার পুলিশকে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে হয়রানি, প্রতিশোধমূলক মামলা দায়ের, এমনকি নির্বাচনপ্রক্রিয়া নিয়ন্ত্রণের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করেছে    

এই রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ পুলিশের অভ্যন্তরীণ পেশাদারত্বকে গভীরভাবে ক্ষুণ্ণ করেছে। প্রায়শই অভিযোগ ওঠে যে পুলিশের পদোন্নতি যোগ্যতা বা জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে নয়, বরং রাজনৈতিক আনুগত্য দিয়ে নির্ধারিত হয় । এই প্রবণতা পুলিশ সদস্যদের মনোবল ও পেশাদারত্ব ধ্বংস করে দেয় । ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজ ও অপরাধ বিশেষজ্ঞের মতে, দুর্নীতিপরায়ণ সদস্যদের প্রভাব বিস্তারের ক্ষমতা এবং রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা দুর্নীতির মাত্রা লাগামহীনভাবে বৃদ্ধি করছে । উপরন্তু, পুলিশ বাহিনী অত্যন্ত কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণের অধীন। স্থানীয় আইন প্রয়োগকারী পদক্ষেপের জন্যও অনেক ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় কর্তৃপক্ষের অনুমোদনের প্রয়োজন হয়, যা রাজনৈতিক হস্তক্ষেপকে অত্যন্ত সহজ করে তোলে এবং স্থানীয় ইউনিটগুলির স্বায়ত্তশাসনকে খর্ব করে    

ব্যাপক দুর্নীতি ও আস্থাহীনতার সংকট

রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতা এবং কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণের ফলস্বরূপ, পুলিশ বাহিনীতে দুর্নীতি একটি মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (TIB) ২০০২ এবং ২০১৩ সালেও পুলিশকে দেশের অন্যতম দুর্নীতিগ্রস্ত সরকারি প্রতিষ্ঠান হিসেবে চিহ্নিত করেছিল । আন্তর্জাতিক ব্যবসায়ী মহলও বাংলাদেশ পুলিশকে বিশ্বের সবচেয়ে কম নির্ভরযোগ্য বাহিনীগুলোর মধ্যে একটি হিসেবে মনে করে    

দুর্নীতির ক্ষেত্রগুলো কেবল ঘুষ গ্রহণের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়; পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি, ঘুষ, নির্যাতন, এমনকি ধর্ষণ ও হত্যার মতো গুরুতর অভিযোগও রয়েছে । এই ব্যাপক দুর্নীতি এবং ক্ষমতার অপব্যবহারের কারণে পুলিশের প্রতি জনগণের আস্থা ক্রমে ক্ষয়ে গেছে । জনগণ পুলিশকে ভয়ের প্রতীক হিসেবে দেখে, ভরসার আশ্রয়স্থল হিসেবে নয়    

জবাবদিহিতার অভাব ও দায়মুক্তির সংস্কৃতি

পুলিশের অ-পেশাদারিত্বের সবচেয়ে ক্ষতিকর দিক হলো দায়মুক্তির (Impunity) সংস্কৃতি। নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের বিরুদ্ধে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, বলপূর্বক নিখোঁজ বা গুম, এবং নিষ্ঠুর বা অমানবিক আচরণের অসংখ্য অভিযোগ রয়েছে । মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ উঠলেও, সেগুলোর সঠিক তদন্ত ও জবাবদিহিতার অভাব দৃশ্যমান । উদাহরণস্বরূপ, মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে মার্কিন সরকার কর্তৃক নিষেধাজ্ঞাপ্রাপ্ত র্যাবের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের পরবর্তীতে পুলিশের মর্যাদাপূর্ণ পদক প্রদান করা হয়েছিল । এই ধরনের ঘটনা কাঠামোবদ্ধ দায়মুক্তির সংস্কৃতিকে আরও দৃঢ় করে।   

এই রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ এবং দায়মুক্তির সংস্কৃতি একটি চক্র তৈরি করেছে। রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতা পুলিশ সদস্যদেরকে সুরক্ষা দেয়, যা তাদেরকে আইন লঙ্ঘনে উৎসাহিত করে। সরকার পরিবর্তন হওয়া সত্ত্বেও এই অভিযোগগুলো অব্যাহত থাকে , যা প্রমাণ করে যে সমস্যাটি ব্যক্তি বা দলের নয়, বরং প্রতিষ্ঠানের কাঠামোগত দুর্বলতার কারণে সৃষ্ট।   

এছাড়াও, ফৌজদারি কার্যবিধির বিতর্কিত ধারা, যেমন: ৫৪ (বিনা পরোয়ানায় গ্রেফতার) এবং ১৬৭ (রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদ), এর অপব্যবহারের মাধ্যমে সন্দেহভাজন ব্যক্তিদের হয়রানি করার অভিযোগ রয়েছে । এটি জনগণের মধ্যে পুলিশভীতি আরও বাড়িয়ে তোলে    

জনবান্ধব পুলিশিংয়ের পথে মূল প্রাতিষ্ঠানিক প্রতিবন্ধকতা ও প্রস্তাবিত সমাধান

প্রতিবন্ধকতা (Current Challenge)উৎসপ্রস্তাবিত কাঠামোগত সমাধান (Structural Reform)উৎস
ঔপনিবেশিক আইন (পুলিশ আইন ১৮৬১) কর্তৃক "নিয়ন্ত্রণ" ম্যান্ডেটএকটি নতুন, জনমুখী, সার্বভৌম পুলিশ আইন প্রণয়ন
নিয়োগ, পদোন্নতি ও বদলিতে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপস্বাধীন পুলিশ কমিশন (IPC) গঠন ও ক্ষমতা বিকেন্দ্রীকরণ
দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহারের দায়মুক্তিস্বাধীন অভিযোগ কমিশন স্থাপন (বহিরাগত নিরীক্ষা)
ফৌজদারি কার্যবিধির (৫৪, ১৬৭) ধারাগুলির অপব্যবহারআইনি সংস্কার ও গ্রেফতারের প্রক্রিয়া কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ
জনগণের আস্থাহীনতা ও পুলিশি কর্মকাণ্ডে অনীহাকার্যকর কমিউনিটি/বিট পুলিশিং ও মিথস্ক্রিয়া বৃদ্ধি
  

জনবান্ধব পুলিশিং ধারণার বিশ্লেষণ এবং কমিউনিটি পুলিশিংয়ের কার্যকারিতা

জনবান্ধব পুলিশিংয়ের দার্শনিক ভিত্তি

জনবান্ধব পুলিশিং (Citizen-Centric Policing), যা কমিউনিটি পুলিশিং (CP) নামেও পরিচিত, তা হলো একটি সংগঠনভিত্তিক দর্শন এবং ব্যবস্থাপনাগত পদ্ধতি। এটি জনগণ, সরকার ও পুলিশের অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে অপরাধ দমন, অপরাধভীতি হ্রাস এবং সামাজিক সমস্যা সমাধানের ওপর গুরুত্ব দেয় । এই দর্শনের মূল ভিত্তি হলো রবার্ট পিলের আধুনিক পুলিশিং দর্শন: "পুলিশই জনতা এবং জনতাই পুলিশ"    

আধুনিক পুলিশিংয়ের মূলনীতি অনুযায়ী, পুলিশের কর্তব্য হলো অপরাধ ও বিশৃঙ্খলা প্রতিরোধ করা। এই কর্তব্য পালনের ক্ষমতা নির্ভর করে জনগণের অনুমোদন এবং জনগণের আস্থা অর্জন ও তা বজায় রাখার ওপর । পুলিশকে অবশ্যই নিরপেক্ষ সেবা প্রদর্শনের মাধ্যমে জনসমর্থন নিশ্চিত করতে হবে । কমিউনিটি পুলিশিংয়ের মাধ্যমে পুলিশ স্থানীয় সম্প্রদায়ের চাহিদার ভিত্তিতে ব্যক্তিগত পরিষেবা প্রদান করে এবং স্থানীয় রীতিনীতি ও মূল্যবোধের প্রতি যথাযথ মনোযোগ দিয়ে কার্যক্রম পরিচালনা করে    

বাংলাদেশে কমিউনিটি পুলিশিংয়ের উদ্দেশ্য, সফলতা ও সীমাবদ্ধতা

বাংলাদেশে কমিউনিটি পুলিশিং প্রবর্তন করা হয়েছে প্রধানত পুলিশের বৈধতা বাড়ানো, গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ উন্নত করা এবং অপরাধ নিয়ন্ত্রণে স্থানীয় সম্পদ ও জনগণের সহযোগিতা লাভের উদ্দেশ্যে । এই কৌশলটির সফলতার কিছু ক্ষেত্র দেখা গেছে:   

অপরাধ হ্রাস: ওপেন হাউজ ডে, মতবিনিময় সভা, উঠান বৈঠক এবং দৃশ্যমান টহলের মাধ্যমে স্থানীয় পর্যায়ে অপরাধ প্রবণতা কমিয়ে আনা সম্ভব হয়েছে    

সামাজিক প্রতিরোধ: মাদক ব্যবসা, নারী নির্যাতন, বাল্য বিবাহ ইত্যাদির বিরুদ্ধে গণসচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে কমিউনিটি পুলিশিং কৌশল প্রয়োগ করা হচ্ছে    

তবে, কমিউনিটি পুলিশিং বাস্তবায়নে গুরুতর সীমাবদ্ধতা বিদ্যমান। প্রথমত, স্থানীয় পুলিশের প্রতি এলাকার জনগণের আস্থার অভাব এবং সন্দেহ সবচেয়ে বড় প্রতিবন্ধকতা । দ্বিতীয়ত, স্থানীয় পর্যায়ে দলাদলি ও রাজনৈতিক কোন্দল কমিউনিটি পুলিশিং কমিটিগুলোতে প্রভাব ফেলে, যার ফলে এর নিরপেক্ষতা প্রশ্নবিদ্ধ হয়    

সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সাংগঠনিক সীমাবদ্ধতা হলো পুলিশ বাহিনীর কাঠামোতে কমিউনিটি পুলিশিং ব্যবস্থার অনুপস্থিতি। অনেক পুলিশ সদস্য এটিকে তাদের রুটিন ডিউটির বাইরে একটি 'ঐচ্ছিক বিষয়' বা 'বাড়তি ঝামেলা' মনে করেন এবং এতে প্রয়োজনীয় শ্রম বা মেধা দেন না । পুলিশ সদস্যদের কমিউনিটি সেফটি এবং অপরাধ প্রতিরোধে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ ও অভিজ্ঞতারও অভাব রয়েছে    

বাংলাদেশে কমিউনিটি পুলিশিং প্রায়শই একটি মৌলিক দর্শন (Philosophy) হিসেবে কাজ না করে, নিছক একটি জনসংযোগ বা বাহ্যিক "কার্যক্রম" (Activity) হিসেবে পরিচালিত হয় । যদি পুলিশ সদস্যরা এটিকে 'ঐচ্ছিক' কাজ মনে করেন, তার অর্থ হলো প্রাতিষ্ঠানিক নেতৃত্ব বা আইনি কাঠামো এটিকে তাদের মূল ম্যান্ডেটের অংশ হিসেবে দেখেন না। যতক্ষণ না এই কৌশলটি রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতা এবং দুর্নীতির মূল চ্যালেঞ্জগুলোকে মোকাবিলা করতে পারছে, এটি কেবল একটি প্রসাধনী কৌশল হিসেবে থেকে যাবে, যা স্থানীয় জনগণের মৌলিক আস্থাহীনতা দূর করতে পারবে না।   

জনবান্ধব পুলিশিংয়ের জন্য কৌশলগত সংস্কারের রূপরেখা

জনবান্ধব পুলিশিং নিশ্চিত করতে হলে যুগোপযোগী, সুসংগঠিত এবং বহুমুখী সংস্কার বাস্তবায়ন করা অপরিহার্য। এই সংস্কারে আইনি, প্রাতিষ্ঠানিক, প্রশাসনিক ও সংস্কৃতিগত পরিবর্তন একইসাথে সাধন করতে হবে।

আইনি ও প্রাতিষ্ঠানিক স্বাধীনতা নিশ্চিতকরণ

১. ১৮৬১ সালের পুলিশ আইনের প্রতিস্থাপন

একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্রের জন্য একটি নতুন, পূর্ণাঙ্গ এবং জনমুখী পুলিশ আইন প্রণয়ন করা সবচেয়ে জরুরি । এই আইনকে অবশ্যই সেবার ওপর জোর দিতে হবে, নিয়ন্ত্রণের ওপর নয়। পাশাপাশি, ফৌজদারি কার্যবিধি ১৮৯৮ এর বিতর্কিত ধারা, যেমন নির্বিচারে গ্রেফতারের জন্য ৫৪ ধারা এবং রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদের ১৬৭ ধারা , এর সংস্কার বা বাতিল করা অত্যাবশ্যক, কারণ এই ধারাগুলির অপব্যবহার জনগণের হয়রানির কারণ হয়    

২. স্বাধীন পুলিশ কমিশন (Independent Police Commission - IPC) গঠন

পুলিশকে সরকারের সরাসরি হস্তক্ষেপ এবং রাজনৈতিক প্রভাব থেকে মুক্ত করার জন্য একটি স্বাধীন পুলিশ কমিশন গঠন করা জরুরি । পুলিশ প্রধান নিজেও এমন একটি কমিশন গঠনের প্রয়োজনীয়তা ব্যক্ত করেছেন    

এই কমিশন পুলিশের নিয়োগ, পদোন্নতি, পদায়ন, পদাবনতি (পুরস্কার ও শাস্তি) ইত্যাদি বিষয়গুলোর নীতিমালা প্রণয়ন ও পরিচালনা করবে , যাতে রাজনৈতিক আনুগত্যের পরিবর্তে যোগ্যতা প্রাধান্য পায়। প্রস্তাবিত কাঠামো অনুযায়ী, এই কমিশন খ্যাতিমান সুশীল সমাজের সদস্য, মানবাধিকার কর্মী, সাংবাদিক, রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতিনিধি এবং পুলিশ ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে গঠিত হতে পারে    

৩. স্বায়ত্তশাসন ও বিকেন্দ্রীকরণ

পুলিশের কার্যক্রমে স্বায়ত্তশাসন নিশ্চিত করা এবং ক্ষমতা বিকেন্দ্রীকরণ করা প্রয়োজন। স্থানীয় আইন প্রয়োগকারী ইউনিটগুলিকে কার্যক্রমে স্বাধীনতা প্রদান করা উচিত, যাতে তারা কেন্দ্রীয় কর্তৃপক্ষের অনুমোদনের জন্য অপেক্ষা না করে দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে পারে । এই বিকেন্দ্রীকরণ স্থানীয় আইন প্রয়োগে দক্ষতা বাড়াবে এবং একই সাথে রাজনৈতিক প্রভাব কমাতেও সহায়তা করবে    

জবাবদিহিতা ও স্বচ্ছতা প্রতিষ্ঠা

১. স্বাধীন অভিযোগ কমিশন (Independent Complaints Commission - ICC) স্থাপন

পুলিশ সদস্যদের অনিয়ম, দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহার তদন্তের জন্য একটি স্বাধীন, বহিরাগত তদারকি সংস্থা প্রতিষ্ঠা করা আবশ্যক । এটি জাতীয় ও স্থানীয় উভয় পর্যায়ে সকলের জন্য উন্মুক্ত ও স্থায়ী হওয়া উচিত । এই সংস্থায় আইন বিশেষজ্ঞ, মানবাধিকার কর্মী, এবং সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে, যারা নিয়মিতভাবে তদন্তের ফলাফল ও গৃহীত শাস্তিমূলক ব্যবস্থা জনসমক্ষে প্রকাশ করবে । ৯৯৯ নম্বরেও মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ জানানোর ব্যবস্থা চালু করা যেতে পারে    

২. দায়মুক্তির অবসান ও মানবাধিকার সুরক্ষা

গুম, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, নির্যাতনসহ সকল মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা দ্রুত, নিরপেক্ষ ও সুচারুভাবে তদন্ত করে দোষী পুলিশ সদস্যদের কঠোর জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে । মানবাধিকার লঙ্ঘনের তদন্তের ক্ষমতা জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের ওপর ন্যস্ত করা যেতে পারে, পাশাপাশি পুলিশ বাহিনীর মানবাধিকার লঙ্ঘন প্রতিরোধে বিশেষ সেল গঠন করা যেতে পারে । এছাড়া, সন্ত্রাস দমন বা আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার নামে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত বিশেষ ইউনিটগুলোর (যেমন র‍্যাব) কার্যক্রম পর্যালোচনা করে তাদের প্রয়োজনীয়তা পুনর্মূল্যায়ন করা উচিত    

মানবসম্পদ উন্নয়ন ও পেশাদারিত্ব বৃদ্ধি

১. উন্নত নৈতিকতা ও মানবাধিকার প্রশিক্ষণ

পুলিশ সদস্যদের অবশ্যই নৈতিকতা, মানবাধিকার, পেশাদার আচরণ, এবং জনগণের মনস্তত্ত্ব বিষয়ে ব্যাপক প্রশিক্ষণ দিতে হবে । তাদের আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সনদের নির্দেশাবলি যথাযথ অনুসরণ নিশ্চিত করতে হবে । বিশেষত লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতা এবং দুর্বল জনগোষ্ঠীর (নারী, শিশু, বয়োজ্যেষ্ঠ) সাথে কাজ করার জন্য বিশেষায়িত ও জেন্ডার সংবেদনশীল প্রশিক্ষণ বাধ্যতামূলক করা প্রয়োজন । মানবাধিকার লঙ্ঘনকে ফৌজদারি অপরাধ হিসেবে গণ্য করে বার্ষিক কর্মমূল্যায়ন প্রতিবেদনে তা অন্তর্ভুক্ত করা উচিত    

২. কল্যাণমূলক ব্যবস্থা এবং মানসিক সহায়তা

পুলিশ সদস্যরা প্রায়শই সাপ্তাহিক ছুটি বা নির্ধারিত সময়ের অতিরিক্ত কাজ করলেও ওভারটাইম পান না । পেশাদারত্ব বজায় রাখতে, পুলিশ সদস্যদের জন্য পর্যাপ্ত ক্ষতিপূরণ, যেমন পুলিশ ভাতা (ওভারটাইমসহ) এবং সপ্তাহে একদিন ছুটি নিশ্চিত করা প্রয়োজন । এছাড়াও, পুলিশ সদস্যদের মানসিক চাপ কমাতে কেন্দ্রীয় এবং বিভাগীয় হাসপাতালগুলোতে মানসিক সহায়তা ইউনিট গঠন করা যেতে পারে    

কার্যকর কমিউনিটি এনগেজমেন্ট

কমিউনিটি পুলিশিংকে কেবল একটি ঐচ্ছিক কার্যক্রম হিসেবে নয়, বরং পুলিশি রুটিন ডিউটির অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে । পুলিশকে অবশ্যই জনগণের সঙ্গে নিয়মিত মিথস্ক্রিয়া বাড়াতে হবে এবং সব দল, মত, ধর্ম ও বর্ণনির্বিশেষে সবার সঙ্গে সুসম্পর্ক ও যোগাযোগ রাখতে হবে । বয়োজ্যেষ্ঠদের সাথে পাড়ামহল্লায় বৈঠক করা বা বৃদ্ধাশ্রমে খোঁজখবর নেওয়ার মতো মানবিক পদক্ষেপগুলো পুলিশের সঙ্গে জনগণের দূরত্ব কমাতে পারে    

আধুনিক পুলিশিংয়ে স্থানান্তরের নীতিগত স্তম্ভ

বৈশিষ্ট্যঔপনিবেশিক মডেল (Police Act 1861-driven)প্রস্তাবিত জনবান্ধব মডেল (Citizen-Centric Model)
প্রধান উদ্দেশ্য

রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণ (Control) ও শৃঙ্খলা বজায় রাখা    

জনগণের নিরাপত্তা ও সেবা (Service) প্রদান    

জবাবদিহিতা কর্তৃপক্ষঅভ্যন্তরীণ (মন্ত্রণালয়/ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে)

স্বাধীন কমিশন ও নাগরিক সমাজের কাছে বহিরাগত জবাবদিহিতা    

নিয়োগ/পদোন্নতির ভিত্তি

রাজনৈতিক আনুগত্য এবং কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্ত    

মেধা, যোগ্যতা, জ্যেষ্ঠতা ও সততা; স্বাধীন কমিশন দ্বারা নিয়ন্ত্রিত    

পেশাদারত্বের মানদণ্ডআদেশ পালন ও আইন-শৃঙ্খলা (Command and Control)

মানবাধিকারের প্রতি শ্রদ্ধাশীলতা, নৈতিকতা ও জেন্ডার সংবেদনশীলতা    

জনগণের সঙ্গে সম্পর্ক

ভয় ও দূরত্ব বজায় রাখা (ভয়ের প্রতীক)    

আস্থা ও সহযোগিতা (ভরসার আশ্রয়স্থল)    

পুলিশ সংস্কারের সাফল্য বিচার বিভাগীয় স্বাধীনতা এবং দুর্নীতি দমনের স্বাধীনতার উপর গভীরভাবে নির্ভরশীল। যদি পুলিশকে একটি স্বাধীন কমিশন দ্বারা জবাবদিহির আওতায় আনা হয়, কিন্তু বিচারিক প্রক্রিয়া রাজনৈতিকভাবে প্রভাবিত হয় (যেমন ফৌজদারি কার্যবিধির বিতর্কিত ধারাগুলোর সংস্কার না হলে), তবে দায়মুক্তির সংস্কৃতি থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব হবে না । তাই পুলিশের কাঠামোগত সংস্কারের সঙ্গে আন্তঃপ্রাতিষ্ঠানিক সহযোগিতা এবং বিচার ব্যবস্থার সামগ্রিক সংস্কার অত্যাবশ্যক।   

উপসংহার ও চূড়ান্ত সুপারিশমালা

বাংলাদেশ পুলিশকে একটি আধুনিক, জনবান্ধব এবং পেশাদার বাহিনীতে রূপান্তর করতে হলে ঔপনিবেশিক আইনি কাঠামোর পরিবর্তন, রাজনৈতিক প্রভাবের অবসান এবং কাঠামোগত জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠা করা অপরিহার্য। যদিও পুলিশ সাম্প্রতিক বছরগুলোতে প্রযুক্তিগত ও প্রশাসনিক ক্ষেত্রে অগ্রগতি লাভ করেছে, জনগণের আস্থা অর্জনের পথে সবচেয়ে বড় বাধা হলো রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ এবং দায়মুক্তির সংস্কৃতি    

জনবান্ধবতার চূড়ান্ত লক্ষ্য হলো এমন একটি পুলিশ বাহিনী তৈরি করা, যা অস্ত্র বা ক্ষমতার মাধ্যমে নয়, বরং জনগণের আস্থা ও বিশ্বাস অর্জনের মাধ্যমে শক্তিশালী হবে । পুলিশকে হতে হবে এমন একটি প্রতিষ্ঠান যা অপরাধীর জন্য আতঙ্ক এবং নিরীহ মানুষের জন্য নিরাপদ আশ্রয়স্থল , যা রাজনৈতিক দল, মত, ধর্ম বা বর্ণ নির্বিশেষে সব নাগরিককে সমান সেবা প্রদান করে    

চূড়ান্ত বিশ্লেষণে, এই রূপান্তরের জন্য নিম্নোক্ত বিষয়গুলোকে অগ্রাধিকারমূলক সুপারিশ হিসেবে বিবেচনা করা উচিত:

১. স্বাধীন ও শক্তিশালী আইনি কাঠামো: পুলিশ আইন, ১৮৬১ এর পরিবর্তে একটি যুগোপযোগী, সেবামুখী আইন প্রণয়ন এবং ফৌজদারি কার্যবিধির (৫৪ ও ১৬৭) বিতর্কিত ধারাগুলির সংস্কার    

২. স্বাধীন পুলিশ কমিশন (IPC): রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত নিয়োগ, পদোন্নতি ও প্রশাসনিক তত্ত্বাবধান নিশ্চিত করার জন্য অবিলম্বে স্বাধীন পুলিশ কমিশন গঠন    

৩. স্বাধীন অভিযোগ কমিশন (ICC): পুলিশ সদস্যদের অনিয়ম ও দুর্নীতির তদন্ত এবং জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে একটি স্বাধীন, বহিরাগত অভিযোগ কমিশন স্থাপন    

৪. মানবাধিকারভিত্তিক প্রশিক্ষণ: নৈতিকতা, মানবাধিকার, এবং জেন্ডার সংবেদনশীলতার উপর জোর দিয়ে পুলিশ সদস্যদের বিশেষায়িত ও বাধ্যতামূলক প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা    

৫. দায়মুক্তির অবসান: গুম, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, নির্যাতনসহ সকল মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা দ্রুত তদন্ত করে দোষী পুলিশ সদস্যদেরকে কঠোর জবাবদিহির আওতায় আনা    



en.wikipedia.org
Bangladesh Police - Wikipedia
Opens in a new window
undp.org
Why police transformation is critical for Bangladesh
Opens in a new window
bdlaws.minlaw.gov.bd
The Police Act, 1861 - Laws of Bangladesh
Opens in a new window
bssnews.net
সেবার মাধ্যমে জনগণের আস্থা ও বিশ্বাস অর্জন করতে পুলিশের প্রতি আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর - BSS
Opens in a new window
police.gov.bd
পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স - Bangladesh Police
Opens in a new window
prothomalo.com
সবার আগে প্রয়োজন রাজনৈতিক সদিচ্ছা - প্রথম আলো
Opens in a new window
en.wikipedia.org
Corruption in Bangladesh - Wikipedia
Opens in a new window
prothomalo.com
রাজনীতিকেরা পেশাদার পুলিশ চাননি, এখনই সংস্কার জরুরি - প্রথম আলো
Opens in a new window
prothomalo.com
রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত পুলিশ চান বেশির ভাগ মানুষ - প্রথম আলো
Opens in a new window
hrssbd.org
পুলিশ সংস্কার প্রস্তাবনা - News Details
Opens in a new window
bssnews.net
Police awaits commission to regulate law enforcement agency: IGP | News | Bangladesh Sangbad Sangstha (BSS)
Opens in a new window
banglatribune.com
পুলিশ বাহিনীর সংস্কারে ১৩ সুপারিশ - Bangla Tribune
Opens in a new window
bprd.nic.in
Functions, Roles and Duties of Police in General
Opens in a new window
legislativediv.portal.gov.bd
পুলিশ আইন, ১৮৬১
Opens in a new window
bdlaws.minlaw.gov.bd
1 The Police Act, 1861 - Laws of Bangladesh
Opens in a new window
policehumanrightsresources.org
THE POLICE ACT, 1861 (ACT NO. V OF 1861). [22nd March, 1861]
Opens in a new window
bdlaws.minlaw.gov.bd
পুলিশ অফিসারের ক্ষমতা ও কর্তব্য
Opens in a new window
police.gov.bd
CHAPTER I - Bangladesh Police
Opens in a new window
taloraup.bogra.gov.bd
কমিউনিটি পুলিশিং - তালোড়া ইউনিয়ন
Opens in a new window
police.gov.bd
বাংলাদেশ পুলিশের কর্মসম্পাদনের সার্বিক চিত্র - Bangladesh Police
Opens in a new window
police.gov.bd
বাংলাদেশ পুলিশ অফিসার্স মেস
Opens in a new window
ittefaq.com.bd
পুলিশের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার দাবি সাবেকদের - The Daily Ittefaq
Opens in a new window
researchgate.net
(PDF) Addressing Institutional Challenges within Bangladesh Police: A Critical Analysis of Structural Reforms and Professional Demands - ResearchGate
Opens in a new window
common.usembassy.gov
বাংলাদেশ ২০২২ মানবাধিকার প্রতিবেদন - USEmbassy.gov
Opens in a new window
gov.uk
Country policy and information note: actors of protection, Bangladesh, November 2023 (accessible) - GOV.UK
Opens in a new window
hrw.org
Allegations of Bangladesh Police Torture, Illegal Detentions - Human Rights Watch
Opens in a new window
gunaharup.bogra.gov.bd
কমিউনিটি পুলিশিং - গুনাহার ইউনিয়ন - বগুড়া জেলা
Opens in a new window
universepg.com
A Comparative Study Relating to Community Policing in the Context of Bangladesh
Opens in a new window
banglatribune.com
কমিউনিটি পুলিশিং: পদে পদে প্রতিবন্ধকতা - Bangla Tribune
Opens in a new window
file-barisal.portal.gov.bd
জননিরাপত্তা ও আইন শৃঙ্খলা বিষয়ক প্রশিক্ষণ মডিউল - BARISAL
Opens in a new window
researchgate.net
Community Policing in Bangladesh: Issues and Challenges - ResearchGate
Opens in a new window
civicusmonitor.contentfiles.net
bangladesh
Opens in a new window
northsouth.edu
position paper police commission - North South University
Opens in a new window
bssnews.net
জনগণের আস্থা অর্জনে পুলিশের প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে : মাসুদ করিম | খবর
Opens in a new window
nagorik.prothomalo.com
জনবান্ধব পুলিশিংয়ের বাস্তবতা - নাগরিক সংবাদ - প্রথম আলো
Opens in a new window
prothomalo.com
স্বাধীন পুলিশ কমিশন গঠনের সুপারিশ করবে সংস্কার কমিশন - প্রথম আলো
Opens in a new window

Post a Comment

0 Comments